Advertisement
০১ মে ২০২৪

সিদ্ধান্ত বদল হবে না, চাপেও অনড় জেটলি

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি তুললেও পুরনো ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হবে না বলে জানিয়ে দিল নরেন্দ্র মোদী সরকার।

নোট বাতিলের প্রতিবাদে তৃণমূল সাংসদরা। বৃহস্পতিবার । —নিজস্ব চিত্র

নোট বাতিলের প্রতিবাদে তৃণমূল সাংসদরা। বৃহস্পতিবার । —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:২৪
Share: Save:

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি তুললেও পুরনো ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হবে না বলে জানিয়ে দিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। সংসদের ভিতরে-বাইরে বিরোধীরা এ নিয়ে আক্রমণ শাণালেও অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির সাফ কথা, ‘‘পুরনো নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের কোনও প্রশ্নই নেই।’’ সরকার ও বিরোধীপক্ষের টানাপড়েনে শুক্রবারও সংসদ অচল থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে। বিরোধীরা দাবি আলোচনায় সময় প্রধানমন্ত্রী সংসদে উপস্থিত না হলে সংসদ চলতে দেবেন না তাঁরা। রাতের খবর, প্রধানমন্ত্রী মোদী বিরোধীদের দাবি নিয়ে জট কাটানোর রাস্তা খুঁজতে জেটলির সঙ্গে আলোচনায় বসেছেন।

সংসদের অধিবেশনের দ্বিতীয় দিনে আজ আরও এককাট্টা হয়েছে বিরোধী দলগুলি। রাজ্যসভায় অধিবেশনের শুরুতেই তৃণমূলের ডেরেক ও’ব্রায়েন দাবি তোলেন, টেলিভিশনে হাজির হয়ে পুরনো ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিলের ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাই তাঁকেই সংসদে এ নিয়ে বিতর্কের জবাব দিতে হবে। কংগ্রেস ও অন্য বিরোধী দলের নেতারা যেন তৈরিই ছিলেন। এই দাবি লুফে নিয়ে তাঁরা ওয়েলে নেমে পড়েন। একই ছবি দেখা যায় লোকসভাতেও। এই দাবিতেই আজ সারাদিন অচল থেকেছে সংসদ। কিন্তু বিরোধীদের দাবি খারিজ করে দিয়েছেন জেটলি। তাঁর যুক্তি, কোনও বিতর্কে সরকারের হয়ে কে জবাব দেবেন, তা ঠিক করার অধিকার সরকারের। জেটলি বলেন, ‘‘সরকার যদি মনে করে, কোনও বিতর্কের সময় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের প্রয়োজন রয়েছে, সেটা সরকার খতিয়ে দেখবে।’’

এক দিকে বিরোধীদের দাবি, অন্য দিকে সরকারের অনমনীয় মনোভাব—এই দুইয়ের জেরে শুক্রবারও সংসদ অচল থাকবে বলেই মনে করা হচ্ছে। রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা গুলাম নবি আজাদ জানিয়ে দিয়েছেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী না এলে কোনও আলোচনা হবে না।’’ বৃহস্পতিবার রাজ্যসভার রুটিন অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর দফতরের প্রশ্নোত্তরের দিন ছিল। তবু আলোচনার সময় সংসদ অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন না মোদী। প্রধানমন্ত্রীর গরহাজিরা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন সিপিএমের নেতা সীতারাম ইয়েচুরি। রাজ্যসভায় ভোটাভুটির দাবি তুলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। লোকসভায় বিরোধীরা দাবি তোলেন, বাকি সব কাজ মুলতুবি রেখে নোট বাতিলে মানুষের ভোগান্তি নিয়ে আলোচনা করতে হবে। কিন্তু স্পিকার সুমিত্রা মহাজন সেই দাবি না মানায় বিরোধীদের হট্টগোলে সারাদিনই সংসদ অচল থেকেছে।

প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতি ও তাঁর জবাবদিহির প্রশ্নে বিরোধীদের সুর এক হলেও একটি বিষয়ে অবশ্য এখনও মতের ফারাক রয়ে গিয়েছে। তা হল, নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত আগাম ফাঁস করে দেওয়ার অভিযোগে যৌথ সংসদীয় কমিটি বা জেপিসি-র তদন্তের দাবি। তৃণমূল কংগ্রেসের এতে সায় নেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যুক্তি দিয়েছেন, সংসদের ইতিহাসে এর আগে সাতটি জেপিসি হয়েছে। এতে লাভের লাভ কিছুই হয় নি। কিন্তু কংগ্রেস, সিপিএম, জেডি(ইউ)-র মতো দলগুলি জেপিসি-তে বেশি জোর দিচ্ছে। তাঁদের দাবি, পুরনো নোট বাতিলের খবর আগেই বিজেপির নেতারা জানতেন। তাই ৮ নভেম্বর রাতে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার কয়েক ঘন্টা আগে কলকাতার ব্যাঙ্কে বিজেপির পশ্চিমবঙ্গ শাখা নিজেদের অ্যাকাউন্টে পুরনো নোটে এক কোটি টাকা জমা করে। এমন আর কোথায় কোথায় বিজেপির আর কোন শাখা টাকা জমা করেছে, তা খতিয়ে দেখতেই জেপিসি চাইছেন বিরোধীরা। বিজেপি নেতাদের যুক্তি, জেপিসি করে বিরোধী নেতারা বিজেপির যাবতীয় ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের হিসেব-নিকেশ করতে বসবেন। কোনও ভাবেই সেই সুযোগ দেওয়া হবে না। জেটলির দাবি, ‘‘এই সিদ্ধান্তের খবর আগেই ফাঁস হয়ে গিয়েছিল, এমন কোনও প্রমাণ বিরোধীরা দেখাতে পারেননি।’’ নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়ে বৃহস্পতিবার থেকেই রাজ্যসভায় বিতর্ক শুরু হয়েছিল। অধিকাংশ বড় দলের নেতারাই সরকারকে আক্রমণ করেছেন। আজ বিতর্কের শেষে জেটলির জবাব দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শুরুতেই তৃণমূল প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতি দাবি করায়, সব দলই এ নিয়ে সরব হয়। একমাত্র বিজু জনতা দল, টিআরএস ও এডিএমকে এই দাবিতে সোচ্চার হয়নি। এডিএমকে ওয়েলে নামলেও তাদের দাবি ছিল কাবেরী জলবন্টনের সমস্যা নিয়ে। জেটলির যুক্তি, বিরোধী নেতারা বুঝতে পেরেছেন, তাঁদের যাবতীয় অভিযোগ দানা বাঁধছে না। তাই তাঁরা এখন বিতর্ক থেকে পালাতে চাইছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Demonetisation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE