Advertisement
E-Paper

চ্যালেঞ্জ নিয়েই মূর্তি গড়েন, পুজো করেন অনিরুদ্ধ

দস্তুরমতো ‘চ্যালেঞ্জ’ করেই নিজের বাড়ির দুর্গাপুজো করেন ‘অব্রাহ্মণ’ অনিরুদ্ধ সেন। শুধু দুর্গাপুজো কেন, দুর্গার প্রতিমাও নিজের হাতে তৈরি করেন তিনি।

শীর্ষেন্দু সী

শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০২:৫৮
অনিরুদ্ধ সেন। —নিজস্ব চিত্র

অনিরুদ্ধ সেন। —নিজস্ব চিত্র

দস্তুরমতো ‘চ্যালেঞ্জ’ করেই নিজের বাড়ির দুর্গাপুজো করেন ‘অব্রাহ্মণ’ অনিরুদ্ধ সেন। শুধু দুর্গাপুজো কেন, দুর্গার প্রতিমাও নিজের হাতে তৈরি করেন তিনি। বিগত বেশ কয়েক বছর ধরেই এ ভাবে পুজো করে আসছেন তিনি।

প্রথম দিকে, অনেকেই অমঙ্গলের কথা বলে তাকে পুজো করতে বারণ করেছিলেন। সে সময় তাঁর যুক্তি ছিল, পুজো করে যদি ‘অমঙ্গল’ হয় তাহলে দেবী যে রুষ্ট হয়েছেন তার আন্দাজ অন্তত পাওয়া যাবে। তা ছাড়া গোপীরা যখন কাত্বায়ণীর পুজো করেছিলেন সে সময় তাঁরা তো ব্রাহ্মণ ছিলেন না। তাঁর বড় যুক্তি ছিল, নিজের মাকে খাওয়াতে-পরাতে গেলে যে ভাবে ব্রাহ্মণ, অব্রাহ্মণ কিংবা জাত-পাত বিচার্য নয়, ঠিক সে ভাবেই দেবী দুর্গার পুজোতেই বা ব্রাহ্মণ লাগবে কেন! সেই যুক্তিকে পাথেয় করেই বায়ো-টেকনোলজির গবেষক অনিরুদ্ধ সেন প্রতিবারই দুর্গাপুজো, কালীপুজো, দোলের পুজো নিজেই করে যাচ্ছেন।

কলকাতার কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০০৭ সালে এমএসসি পাশ করে বর্তমানে আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক হিসেবে করিমগঞ্জ কলেদের সঙ্গে যুক্ত বছর তিরিশের অনিরুদ্ধ সেন। শুধু মূর্তি বানিয়ে পুজো করাই নয়, বাঙালিয়ানার ছাপ তাঁর পোশাকেও। বর্তমান প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা যখন জিন্স, শার্ট, টি-শার্ট ছাড়া অন্য কিছু ভাবতে পারে না, তখন অনিরুদ্ধবাবু ধুতি-শার্ট পড়েই রোজদিন কলেজে যান। সামাজিক অনুষ্ঠানেও ধুতি পড়ে যেতে দ্বিধাবোধ করেন না।

২০০১ সালে দীক্ষা তন্ত্র গ্রন্থ পড়া শুরু করান তাঁর গুরুদেব। শাস্ত্রের বিধান অনুসারে অভিষেকের পর পুজোর অধিকার লাভ করেন তিনি। প্রতিপদ থেকেই বাড়িতে শুরু হয় চণ্ডীপাঠ। দেবী পুরাণ এবং প্রাণতোষিনী তন্ত্রে পুজো হলেও বৈষ্ণব আচারকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। দেবীর কোন হাতে কি অস্ত্র থাকবে, ডান পা সিংহের উপর এবং বাঁ পা অসুরের উপর কি ভাবে থাকবে তা চণ্ডীর বিবরণ অনুযায়ী তৈরি করেন অনিরুদ্ধ।

পূর্ব পাকিস্তানের ঢাকাই রেওয়াজ অনুসারে ষষ্ঠীর দিন কলাবৌ বেঁধে ফেলা হয়। বারোয়ারি কিংবা বাড়ির দুর্গাপুজোয় সপ্তমী থেকে নবমী পর্যন্ত সংলাপ হয়। কিন্তু তাঁদের বাড়ির পুজোর সংলাপ হয় দশমী পর্যন্ত। দেশাচার অনুযায়ী দশমীর দিন ত্র্যহস্পর্শ কিংবা বৃহস্পতিবার হলে পুজো একদিন বাড়িয়ে দেওয়া হয়। অন্য জায়গার পুজোয় নবমীর দিনকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু তাদের বাড়ির পুজোয় সেই ঢাকার রীতি মেনে অষ্টমীর দিনই হোমযজ্ঞ হয়ে থাকে।

অনিরুদ্ধবাবু বলেন, ‘‘এ সব ব্যতিক্রম ছাড়াও, আমাদের বাড়ির পুজোর সংকল্প হয় বাড়ির মহিলাদের নামে। মা, কাকি, জেঠিমার নামে পুজোর সংকল্প হয়। নিজের মা আর দুর্গা মায়ের মধ্যে কোন ফারাক নেই বলে পুজোয় দেওয়া প্রসাধন সামগ্রীর গুণগত মানের উপরও বিশেষ দৃষ্টি রাখা হয়।’’

বাড়ির মহিলারা যে দামের কাপড় পড়েন, মা দুর্গার কাপড় হবে দামী। পুজোর পর কলাবৌ আর অষ্টমীর কাপড় নিজের মাকে পড়তে দিয়ে দেন। আর বাকি কাপড়, প্রসাধন সামগ্রী অন্যদের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়া হয়। বাড়ির পুজো হলেও আজকাল অনিরুদ্ধবাবুর পুজোতে অনেকেই নানা ভাবে সাহায্য করেন।

Aniruddha Sen Durga Puja
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy