Advertisement
১৭ মে ২০২৪

বিরোধীদের চিঠি দিয়ে ঐক্যের ডাক মমতার

মমতা আজ সমস্ত বিজেপি-বিরোধী দলের প্রধান এবং অ-বিজেপি সরকারের মুখ্যমন্ত্রীদের চিঠি পাঠিয়েছেন।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি ও কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৩:০২
Share: Save:

দেশ জুড়ে নয়া নাগরিকত্ব আইন আর এনআরসি-র বিরুদ্ধে নাগরিক প্রতিবাদ চলছিলই। তারই মধ্যে আজ ঝাড়খণ্ডে বিজেপির হারের পরে বিরোধী শিবির বুঝছে, এ বার কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগোতে হবে। সেই পথে প্রথম পদক্ষেপ করে আজ তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিরোধী শিবিরকে এক মঞ্চে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘বিরোধীদের ঐক্যবদ্ধ ভাবে এক মঞ্চে আসতে হবে।’’

মমতা আজ সমস্ত বিজেপি-বিরোধী দলের প্রধান এবং অ-বিজেপি সরকারের মুখ্যমন্ত্রীদের চিঠি পাঠিয়েছেন। চিঠিতে তাঁর যুক্তি, ‘‘আজ, আগের থেকে অনেক বেশি করে আমাদের একত্রিত হয়ে এই নির্মম সরকারের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে।’’ মমতা এই চিঠি লিখেছেন তৃণমূল নেত্রী হিসেবে। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নয়। সনিয়া গাঁধী থেকে শরদ পওয়ার, ডিএমকে-প্রধান স্ট্যালিন থেকে অখিলেশ যাদবকে বৈঠকে বসার ডাক দিয়ে মমতার আহ্বান, ‘‘আসুন, আমরা দেখা করে আমাদের গণতন্ত্রকে রক্ষা করা ও প্রতিবাদের সম্মিলিত পরিকল্পনা
তৈরি করি।’’

এক সময় কংগ্রেস-মুক্ত ভারতের ডাক দিয়েছিল বিজেপি। কিন্তু গত দু’বছরে বিজেপির হাত থেকেই একের পর এক রাজ্য হাতছাড়া হয়েছে। ২০১৭-র ডিসেম্বরে দেশের ৭১ শতাংশ এলাকায় বিজেপির শাসন ছিল। এখন তা ৩৫ শতাংশে নেমে এসেছে। দু’বছর আগে জনসংখ্যার ৬৮ শতাংশ মানুষ বিজেপিশাসিত রাজ্যে বাস করতেন। এখন তা ৪৩ শতাংশে নেমে এসেছে। বিরোধী শিবিরের মতে, বিজেপির এ বার উল্টো গতি শুরু হয়েছে। এ বার বিরোধীদের একসঙ্গে থাকতে হবে। একে অপরের জন্য জায়গা ছেড়ে দিতে হবে।

আজ ঝাড়খণ্ডের ফল প্রকাশের পর এনসিপি-সুপ্রিমো শরদ পওয়ার বলেন, ‘‘এই ফল স্পষ্ট বলছে, মানুষ অ-বিজেপি দলগুলির সঙ্গে রয়েছে। রাজস্থান, ছত্তীসগঢ়, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্রের পর এ বার ঝাড়খণ্ডেও মানুষ বিজেপিকে ক্ষমতা থেকে দূরে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’’ কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদ বলেন, ‘‘ভবিষ্যতেও যে সব রাজ্যে ভোট হবে, সেখানেও ফলাফল বিজেপির বিরুদ্ধে যাবে। কারণ গত ছ’বছরে প্রধানমন্ত্রী দেশকে বোকা বানানোর চেষ্টা করেছেন। কোনও প্রতিশ্রুতিই পূরণ করেননি।’’

নয়া নাগরিকত্ব আইন ও এনআরসি-র বিরুদ্ধে মমতাই প্রথম সরব হয়েছিলেন। পশ্চিমবঙ্গে নাগরিকত্ব আইন, এনআরসি হতে দেওয়া হবে না বলে তিনিই প্রথম সিদ্ধান্ত নেন। ক্রমে কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নও সে পথে হেঁটেছেন। আজ দিল্লির রাজঘাটে কংগ্রেসশাসিত রাজ্যের মন্ত্রীরা জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁদের রাজ্যগুলিতেও তাঁরা নয়া নাগরিকত্ব আইন-এনআরসি হতে দেবেন না। মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী কমলনাথ, রাজস্থানের অশোক গহলৌত, ছত্তীসগঢ়ের মন্ত্রী টি এস সিংহদেও এ কথা জানানোর পরে মহারাষ্ট্রে কংগ্রেসের মন্ত্রী বালাসাহেব থোরাটও উদ্ধব সরকারের হয়ে ঘোষণা করেছেন, মহারাষ্ট্রেও নয়া নাগরিকত্ব আইন-এনআরসি হবে না।

মমতার যুক্তি, নাগরিকত্ব আইন ও এনআরসি-র ফলে জাত-ধর্ম নির্বিশেষে দেশের প্রান্তিক মানুষ আতঙ্কিত। সনিয়া-পওয়ারকে পাঠানো চিঠিতে মমতা লিখেছেন, ‘‘আমার বয়োজ্যেষ্ঠ নেতানেত্রী ও সব রাজনৈতিক দলের কাছে সনির্বন্ধ অনুরোধ, এর বিরুদ্ধে এক সুরে, একজোট হয়ে রুখে গাঁড়াতে হবে।’’ বিরোধী শিবিরের মতে, সিএএ সমর্থন করলেও নীতীশ কুমার, নবীন পট্টনায়ক, জগন্মোহন রেড্ডিরা কিন্তু এনআরসি-র বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। ফলে মোদী সরকার প্যাঁচে।

লোকসভা ভোটের আগেও মমতার রণকৌশল ছিল, যার যেখানে শক্তি রয়েছে, সে সেখানে লড়বে। বাকিরা তাকে সমর্থন জানাবে। আজও মমতা বলেছেন, ‘‘যার যেখানে জোর রয়েছে, সে সেখানে প্রতিবাদ করছে। এখন সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। কারণ কেন্দ্রের শাসক দল প্রশাসনিক ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের উপরে বুলডোজার চালাচ্ছে।’’

সূত্রের খবর, ঝাড়খণ্ডের ভোটের পর কংগ্রেসও এখন জোট বাঁধার প্রয়োজন বুঝতে পারছে। মহারাষ্ট্রে রাহুলের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়েই শিবসেনার সঙ্গে জোট বাঁধার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সনিয়া গাঁধী। শিবসেনা নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাশের সময় সংসদে পুরোপুরি কংগ্রেসের পাশে থাকেনি। বিলের বিরুদ্ধে ভোট দেয়নি। আজ ঝাড়খণ্ডের ভোটের ফলের পরে কিন্তু সেই শিবসেনার মুখপাত্র সঞ্জয় রাউতই মন্তব্য করেছেন, ‘‘মোদী-শাহ জনসভায় নয়া নাগরিকত্ব আইন নিয়ে অনেক কথা বলেছেন। হিন্দু-মুসলমান করেছেন। কিন্তু ওখানকার গরিব-আদিবাসী সবাই মিলে বিজেপিকে দূরে রেখেছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mamata Banerjee TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE