Advertisement
E-Paper

সেনাপ্রধান বাছাই নিয়ে বিজেপিকে বিঁধতে তৈরি হচ্ছে বিরোধীরা

সামনে উত্তরপ্রদেশের নির্বাচন। তার আগে নোট বাতিলের জেরে এমনিতেই চাপে নরেন্দ্র মোদী সরকার। মানুষের দুর্ভোগের প্রতিবাদ বিরোধী দলগুলিকে এককাট্টা করে তুলেছে। তার উপর এ বার যন্ত্রণার বিষফোড়া হয়ে দাঁড়ালো নতুন সেনাপ্রধান নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৪:১৫
বিপিন রাওয়ত

বিপিন রাওয়ত

সামনে উত্তরপ্রদেশের নির্বাচন। তার আগে নোট বাতিলের জেরে এমনিতেই চাপে নরেন্দ্র মোদী সরকার। মানুষের দুর্ভোগের প্রতিবাদ বিরোধী দলগুলিকে এককাট্টা করে তুলেছে। তার উপর এ বার যন্ত্রণার বিষফোড়া হয়ে দাঁড়ালো নতুন সেনাপ্রধান নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক। কংগ্রেস সহ বিরোধী নেতাদের বক্তব্য, নোট বাতিল নিয়ে সংসদে নাস্তানাবুদ হয়েছে সরকার। সংসদে আরও একটি অস্ত্র যাতে বিরোধীরা না-পেয়ে যান, তাই অধিবেশন শেষ হওয়া মাত্র এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়েছে। তবে তাঁরা জানিয়েছেন, সংসদ বন্ধ থাকলেও মোদীর এই ‘তুঘলকি’ আচরণ নিয়ে রাস্তা এবং ময়দানে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

পাল্টা হিসেবে বিজেপি নেতারা মোদীর বিবেচনা-বুদ্ধির ওপর আস্থা রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন। সন্ত্রাস-বিরোধী অভিযানে লেফটেন্যান্ট জেনারেল বিপিন রাওয়তের অভিজ্ঞতা ও কাশ্মীরে নিয়ন্ত্রণ রেখা সংলগ্ন পুলওয়ামায় দীর্ঘদিন মোতায়েন থাকার বিষয়টিও তুলে ধরছেন। তাঁদের যুক্তি, সব দিক বিবেচনা করে যোগ্যতম লোককেই সেনাপ্রধানের দায়িত্বে এনেছেন মোদী। এ নিয়ে প্রশ্ন তোলার অর্থ দেশের নিরাপত্তার মতো স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে রাজনীতি করা। কিন্তু এই জবাবেই যে সব মিটে যাবে না, শাসক দলের নেতারা বিলক্ষণ বুঝতে পারছেন। তাই কিছুটা হলেও দিশেহারা তাঁরা।

দশ দিন আগেই সিবিআই প্রধানের পদে অস্থায়ী নিয়োগে দুরভিসন্ধির অভিযোগ তুলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখেছেন কংগ্রেসের লোকসভার নেতা মল্লিকার্জুন খড়্গে। ওই পদে অনিল সিন্‌হার অবসরের আগে ঠিক আগে সংস্থার দ্বিতীয় শীর্ষ পদাধিকারী রূপকুমার দত্তকে বেনজির ভাবে বদলি করা হয়। তার পরে মোদী ও অমিত শাহের অনুগত রাকেশ আস্থানাকে সিবিআইয়ের অস্থায়ী ডিরেক্টর নিয়োগ করা নিয়ে ঝড় উঠেছে। প্রশ্ন তুলেছে সুপ্রিম কোর্টও। খড়্গের দাবি অবিলম্বে সিলেকশন কমিটির বৈঠক ডেকে নতুন কর্তা নিয়োগ করা হোক। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এই কমিটিতে রয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ও বিরোধী দলের লোকসভার নেতাও।

প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে এখনও খড়্গের চিঠির জবাব দেওয়া হয়নি। ইতিমধ্যে আরও একটি শীর্ষপদে নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক বেধে গেল। দুই প্রবীণ অফিসারকে টপকে বিপিন রাওয়তকে সেনাপ্রধান হিসাবে নিয়োগ করার সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে আজ সরব হয়েছে কংগ্রেস, সিপিএম ও সমাজবাদী পার্টির মতো দলগুলি। কংগ্রেস নেতা মণীশ তিওয়ারি বলেন, ‘‘জেনারেল রাওয়তের দক্ষতার প্রতি সম্মান রেখেও একটি প্রশ্ন তুলতে হচ্ছে। কেন তাঁর থেকে সিনিয়র অফিসারদের টপকে তাঁকে দায়িত্ব দেওয়া হল?’’ এখানেই না-থেমে তাঁর প্রশ্ন, ‘‘ন্যায্য ভাবেই দায়িত্ব পেতে পারতেন এমন দু’জনকে কেন টপকে যাওয়া হল? এর কারণ কি তাঁরা সরকারের সুনজরের লোক নন? নাকি তাদের পেশাদারি দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে? সেনাবাহিনী দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। দেশবাসী তাই এর উত্তর চায়।’’ সিপিআই নেতা ডি রাজাও এই সিদ্ধান্তকে বিতর্কিত অ্যাখ্যা দিয়ে আজ বলেন, ‘‘সমস্ত সরকারি শীর্ষ পদে নিয়োগ নিয়েই বিতর্ক হচ্ছে। সেনাপ্রধান পদ শুধু নয়, এর আগে সিভিসি-প্রধান, সিবিআই-প্রধান, কেন্দ্রীয় তথ্য কমিশনের প্রধান— সব শীর্ষ পদে মোদীর নিয়োগই বিতর্কিত। বিষয়টি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।’’ একই ভাবে সপা-র বক্তব্য, খেয়ালখুশি মাফিক গণতান্ত্রিক এবং সাংবিধানিক সংস্থাগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে সরকার। এ’টি মোদীর স্বৈরাচারী মনোভাবের আরও একটি নিদর্শন।

জবাবে বিজেপি মুখপাত্র সম্বিৎ পাত্র বলেন, ‘‘সেনাপ্রধান নিয়োগের বিষয়টি নিয়ে যারা রাজনীতি করছেন, তাঁরা আসলে জাতীয় নিরাপত্তার মতো স্পর্শকাতর বিষয়টি নিয়ে অবিবেচকের মতো কথা বলছেন। সব দিক বিবেচনা করেই বিপিন রাওয়াতকে এই পদে নিযুক্ত করা হয়েছে।’’ বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বের দাবি, পাকিস্তান এবং চিনের মতো দুই পড়শি যখন সীমান্তে নিঃশ্বাস ফেলছে, তখন এই দুই দেশের রণকৌশল সম্পর্কে ওয়াকবিহাল কাউকেই এই পদে আনা প্রয়োজন ছিল। আর তাই রাওয়াত যোগ্যতম। কংগ্রেসের দিকে পাল্টা আঙুল তুলে বিজেপি মুখপাত্র বলছেন— এ নিয়ে কথা বলার কোনও মুখই তাদের নেই। ইন্দিরা গাঁধীর জমানাতেও প্রথা ভেঙে জেনারেল এ এস বৈদ্যকে সেনাপ্রধান নিয়োগ করা হয়েছিল।

Army Chief BJP Bipin Rawat
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy