আইএসআই চর-চক্রের তদন্তে এ বার পাকিস্তান হাইকমিশনের এক কর্মীর ভূমিকা দিল্লি পুলিশের আতসকাঁচের নীচে চলে এল। এখনও অবশ্য হাইকমিশনের ওই কর্মীর পরিচয় জানা যায়নি।
রবিবার কলকাতায় আইএসআই-এর চর সন্দেহে তিনজন গ্রেফতার হওয়ার দিনেই দিল্লি পুলিশও আইএসআই-এর চর সন্দেহে দু’জনকে গ্রেফতার করেছিল। দু’জনেই রাজৌরির বাসিন্দা। যাদের মধ্যে একজন রাজৌরিতে বিএসএফ-এর গোয়েন্দা বিভাগের কর্মী, আব্দুল রাশিদ। এর আগে সে পশ্চিমবঙ্গ ও গুজরাত সীমান্তেও নিযুক্ত ছিল। রাশিদের সঙ্গে আইএসআই-এর যোগাযোগ করিয়ে দেয় তারই আত্মীয় কাফাইতুল্লাহ খান।
জেরার মুখে কাফাউতুল্লা জানিয়েছে, দু’বছর আগে পাকিস্তানে গিয়ে সে আইএসআই-এর সংস্পর্শে আসে। সম্প্রতি ফের তাকে পাকিস্তান যেতে বলা হয়েছিল। সেখানে চরচক্র তৈরি করতে আরও সাহায্য করা হবে বলেও আশ্বাস দেওয়া হয়। পাকিস্তানের ভিসা জোগাড় করতে দিল্লিতে পাকিস্তান হাইকমিশনের এক কর্মী তাকে সাহায্য করবে বলেও প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। দিল্লি পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার (ক্রাইম ব্রাঞ্চ) রবীন্দ্র যাদব বলেন, ‘‘কাফাইতুল্লার দাবি, ওই কর্মীর পরিচয় সে জানে না। তাকে বলা হয়েছিল, নির্দিষ্ট সময়ে হাইকমিশনে পৌঁছলে ওই কর্মী বাইরে এসে তার সঙ্গে দেখা করবে।’’
পুলিশ এখনও কাফাইতুল্লার পাশাপাশি রাশিদকে আরও জেরা করে হাইকমিশনের ওই কর্মীর পরিচয় জানার চেষ্টা করছে। যুগ্ম-কমিশনার বলেন, ‘‘জেরায় আরও তথ্য মিললে আমাদের বিদেশ মন্ত্রকের দ্বারস্থ হতে হবে, যাতে হাইকমিশনের ওই কর্মীকে জেরা করা যায়।’’ আদালতের নির্দেশে আজ আবদুল রাশিদকে জেরার জন্য পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
পুলিশের সন্দেহ, রাশিদ বিএসএফ-এর বাহিনী মোতায়েন সংক্রান্ত স্পর্শকাতর তথ্য আইএসআই-এর হাতে তুলে দিয়েছিল। ওইসব তথ্যের সাহায্যেই জম্মুর উধমপুরে সীমান্ত পেরিয়ে এসে জঙ্গিরা হামলা চালিয়েছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুলিশের বক্তব্য, দু’বছর আগে কাফাইতুল্লাহই তার আত্মীয় রাশিদকে পাকিস্তানের এক আইএসআই-এর ‘হ্যান্ডলার’-র এর সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেয়। রাশিদ তাকে ই-মে, হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবারের মাধ্যমে তথ্য পাচার করত। গত তিন বছর ধরে রাজৌরিতে বিএসএফ-এরই গোয়েন্দা শাখায় কাজ করার সুবাদে তার কাছে নানারকম গোপন, স্পর্শকাতর তথ্য থাকত।
কাফাইতুল্লা ও রাশিদের থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দিল্লি পুলিশ মনে করছে, আইএসআই তাদের চরচক্র ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। শুধু কাশ্মীর বা পশ্চিমবঙ্গের মতো সীমান্তবর্তী রাজ্য নয়। মধ্যপ্রদেশের মতো রাজ্যেও পাকিস্তানের চর ছড়িয়ে রয়েছে। এইরকমই এক পাকিস্তানের চরের সঙ্গে দেখা করতে ভোপাল যাওয়ার পথে ধরা পড়ে কাফাইতুল্লাহ। ওই চর তাকে আরও কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেবে বলেছিল। ভোপালে নতুন চর নিয়োগ করারও পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু তাকে দিল্লিতে ট্রেন থেকেই আটক করা হয়।
পুলিশ সূত্রের খবর, গ্রেফতারের পর কাফাইতুল্লাকে পাকিস্তান হাইকমিশনে পাঠানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। যাতে ফাঁদ পেতে হাইকমিশনের ওই কর্মীকে গ্রেফতার করা যায়। কিন্তু রবিবার সংবাদমাধ্যমে দু’জনের গ্রেফতারের খবর প্রকাশ হয়ে যাওয়ায় সেই পরিকল্পনা বাতিল করতে হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy