পেট্রোল-ডিজেল সংকট মোকাবিলায় ত্রিপুরা পশ্চিম জেলা প্রশাসন নতুন পদক্ষেপ করল। প্রশাসন থেকে বলা হয়েছে, প্রতিটি বাইক বা গাড়ির মালিককে গাড়ির বিমার (ইনস্যুরেন্স) কাগজপত্র রাখতে হবে। পেট্রোল নেওয়ার পরে সেই নথির উপর পাম্প থেকে ‘স্ট্যাম্প’ লাগিয়ে দেওয়া হবে। যাতে একই দিনে আর কোনও পাম্প থেকে ওই বাইক বা গাড়ি পেট্রোল সংগ্রহ করতে না পারে। ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সঞ্জয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘খাদ্য দফতরের এক জন আধিকারিক এবং জেলা প্রশাসনের এক জন আধিকারিক প্রতিটি পাম্পে উপস্থিতি থেকে এই নজরজারি চালাবেন।’’
নির্দেশে বলা হয়েছে, বাইক বা গাড়ির বিমার মেয়াদ থাকলে তবেই পেট্রোল পাওয়া যাবে। রাজ্যের পেট্রোল সঙ্কটে পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হওয়ায় গাড়ির জোড়-বিজোড় সংখ্যা অনুসারে পেট্রোল দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা নিয়ম শিথিল করা হয়েছে। সঞ্জয়বাবু বলেন, ‘‘পাম্প থেকে পেট্রোল দেওয়ার ক্ষেত্রে রেশনিং কার্যকর থাকলেও রবিবার পর্যন্ত জোড়-বিজোড় উভয় নম্বরের গাড়িকেই পেট্রোল দেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে সোমবার থেকে রাজ্য সরকারের সমস্ত নির্দেশিকাই আবার বলবৎ হবে।’’ অর্থ তথা খাদ্যমন্ত্রী ভানুলাল সাহা বলেন, ‘‘যত দিন না সংকট মিটবে, প্রতি দিন সন্ধ্যায় জানিয়ে দেওয়া হবে, পরের দিন কোন কোন পাম্প থেকে পেট্রোল-ডিজেল দেওয়া হবে।’’ এ দিকে, আগরতলা শহরের পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত। সকালে ধলেশ্বরের সামনে একটি পাম্পের সামনে উত্তেজিত জনতা টায়ারে আগুন ধরিয়ে বিক্ষোভ দেখায়। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ দিকে, গত কাল গভীর রাতে পাম্পে বহুক্ষণ দাঁড়িয়ে পেট্রোল না পেয়ে উত্তেজিত জনতা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনে হাজির হয়ে বিক্ষোভ দেখায়। পুলিশ তাদের আটকে দেয়। উত্তেজিত জনতার মধ্যে কিছু মদ্যপও দিল। জেলা পুলিশ সুপার অভিজিৎ সপ্তর্ষি জানান, ‘‘তারা জেলাশাসক এবং মুখ্যমমন্ত্রীর উদ্দেশে কিছু অশ্রাব্য কথা বলেছে। আর কিছুই হয়নি। তাদেরকে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে পুলিশ হঠিয়ে দেয়।’’
আইন-শৃঙ্খলার রক্ষায় সারা শহর জুড়েই গত কাল দুপুর থেকেই শুরু হয়েছে জোরদার পুলিশি টহলদারি। সর্বত্রই থমথমে পরিস্থিতি। পাম্প সংলগ্ন এলাকায় বেশি করে উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে নিরাপত্তা রক্ষীদের। পেট্রোল পাম্পের সামনে বাইক ও গাড়ির দীর্ঘ লাইন। পুলিশের উচ্চপদস্থ আধিকারিক ছাড়াও জেলাশাসক মিলিন্দ রামটেকও শহর জুড়ে টহল দিচ্ছেন বলে পুলিশ সুপার জানান।
অন্য দিকে, রাজ্যের পেট্রোল-ডিজেলের অভূতপূর্ব সঙ্কট নিয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি বিপ্লব দেব অভিযোগ করেন, রাজ্য সরকারের প্রশাসনিক ব্যর্থতার কারণেই আজকে ত্রিপুরায় পেট্রোপণ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘পাম্পে যখন পেট্রোলের সংকট চলছে, তখন কালোবাজারে ২০০-৩০০ টাকায় পেট্রোল পাওয়া যায় কী করে? রাজ্য প্রশাসন কী করছে?’’ রাজ্যের প্রতিটি সমস্যার জন্য সব দোষ কেন্দ্রের ঘাড়ে চাপিয়ে মানিক সরকারের নেতৃত্বে বামফ্রন্ট সরকার প্রতিটি বিষয়ে ‘রাজনীতি’ করছে বলে কটাক্ষ করেন তিনি।
রাজ্যজুড়ে পেট্রোপণ্য সংকটের প্রতিবাদে আজ পথে নেমেছে তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকরা। পেট্রোলের উপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ তুলে নেওয়ার দাবিতে দলীয় কর্মীরা আজ এক প্রতিবাদী মিছিলের আয়োজন করেন। দলের নেতা সুশান্ত চৌধুরী বলেন, ‘‘রাজ্যের বামফ্রন্ট সরকারের প্রশাসনিক ব্যর্থতার কারণেই আজকে পেট্রোল-ডিজেলের এই সঙ্কট দেখা দিয়েছে। পেট্রোলের উপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ তুলে নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’’ সন্ধ্যা ছ’টার পরে শহরের জ্যাকসন গেট অঞ্চলে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান কার্যালয় থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়ে শহর পরিক্রমা করে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy