ফাইল চিত্র।
তখন সবে প্রাত্যহিক স্নান পর্ব সম্পন্ন হয়েছে পুরীর মন্দিরের মহাপ্রভুর। স্নানের পরে জগন্নাথদেবের শৃঙ্গার নীতি মেনে তাঁর বেশভূষা ধারণের পালা চলছে। ঠিক সেই সময়ে দ্বাদশ শতকীয় শ্রী মন্দিরের দেওয়াল খসে পড়ার আওয়াজ। সেবায়েতরা ভয়ে চমকে উঠেছিলেন। পুরীর মন্দিরের গর্ভগৃহে রত্নসিংহাসনে জগন্নাথদেবের বড়দা বলভদ্রের পিছনে মন্দিরের গায়ের কিছু অংশ ভেঙে পড়ার খবরে দিনভর উত্তেজনায় কাটাল শ্রীক্ষেত্র। তবে প্রাথমিক ভাবে মন্দিরের কোনও ক্ষতি হয়নি, স্রেফ চুনের পলেস্তরার অংশ খসে পড়েছে বলেই সেবায়েতরা নিশ্চিন্ত হয়েছেন।
বুধবার সকাল সাতটা থেকে আটটার মধ্যে এই কাণ্ড ঘটে পুরীর শ্রী মন্দিরের গর্ভগৃহে। কী হয়েছে তা খতিয়ে দেখার জন্য পুরী জেলার কালেক্টর সমর্থ বর্মা ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণকে (এএসআই) তদন্তের আর্জি জানিয়েছেন। এমনিতে পুরীতে এখন সারা ক্ষণই এএসআই-এর অফিস রয়েছে। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে শ্রী মন্দিরের নতুন নিয়ম মেনে জগন্নাথদেব রত্নসিংহাসনে আসীন থাকার সময়ে সংশ্লিষ্ট সেবায়েত ছাড়া কারও গর্ভগৃহে ঢোকা নিষেধ। শনিবার ওড়িশা সরকার নিযুক্ত মন্দিরের ম্যানেজিং কমিটি এ বিষয়ে মিটিংয়ে বসবে। এর পরেই এএসআই পরিদর্শনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে বলে জগন্নাথ মন্দির সূত্রে জানা গিয়েছে।
তবে মন্দিরের প্রবীণ সেবায়েত রামচন্দ্র দয়িতাপতি জানিয়েছেন, মন্দিরের বড় কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তাঁর কথায়, “মন্দিরের গায়ের পাথরের কোনও ক্ষতি হয়নি। যা বোঝা যাচ্ছে, সবটাই পাথরের উপরের চুনের পলেস্তরা খসে পড়েছে। মনে হয় মন্দিরের ভিতরে কোনও ইঁদুর, টিকটিকির নডাচড়ার ফল।” রামচন্দ্রের বক্তব্য, কয়েক দিন আগে রথযাত্রার সময়ে শ্রী বিগ্রহ গুন্ডিচা মন্দিরে থাকার সময়ে শূন্য গর্ভগৃহের হালহকিকত দেখে মেরামতি করে এএসআই। তখনই রত্নসিংহাসন থেকে গর্ভগৃহের দেওয়াল সারাই হয়। প্রবীণ সেবায়েতের মতে, “মন্দির গাত্রের পাথরের উপরে চুনের পলেস্তরা বসানো ঠিক হয়নি। পুরনো মন্দিরের পাথর পালিশ করে রং করাই যথেষ্ট ছিল। গুন্ডিচা মন্দিরেও এটাই করা হয়েছে। কিন্তু জগন্নাথ মন্দিরের গর্ভগৃহের বাড়াবাড়িতেই সমস্যা হয়।” তবে এএসআই ফের সব কিছু দেখবে।
মন্দির কর্তৃপক্ষের দাবি, গর্ভগৃহে অঘটন ঘটলেও তাতে জগন্নাথদেবের আচার-অনুষ্ঠান বা নীতি ব্যাহত হয়নি। বড়জোর প্রভুর শৃঙ্গার পর্বে মিনিট কুড়ি দেরি হয়েছিল। এর পরেই সব কিছু সময় মতো চলে। দর্শনার্থীরা এমনিতে গর্ভগৃহে ঢোকেন না। গত কয়েক বছরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ এবং মাসখানেক আগে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এন ভি রামান্না মন্দিরের গর্ভগৃহে ঢোকেন। এ ছাড়া অন্য কোনও বিশিষ্ট অতিথিও ঢোকার অনুমতি পাননি । অত এব এ দিন দর্শনের কোনও সমস্যা হয়নি। এ ছাড়া এ দিন এমনিতেই জগন্নাথদেবের বনকলাগি নীতি নির্ধারিত ছিল। প্রতি মাসে দুটো দিন ( কোনও বুধ বা বৃহস্পতিবার) শ্রী বিগ্রহের মুখে রং করেন দত্ত মহাপাত্র সেবায়েতরা। ফলে বিকেল চারটে থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত দর্শন বন্ধ ছিল। তবে আপাতত মন্দির সংস্কার নিয়ে প্রশাসনিক নির্দেশ তথা বিশেষজ্ঞদের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা করছে পুরীর ভক্তকুল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy