Advertisement
০৫ মে ২০২৪

সরকারে ভারসাম্য আনতে সুষমার প্রশংসায় মোদী

চারটি টুইটে বেনজির প্রশংসা। তাতেই এক ঢিলে পাঁচটি পাখি মারার চেষ্টা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। উদ্যোগী হলেন নিজের মন্ত্রিসভায় ভারসাম্য আনতেও।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০১৫ ০৩:৪০
Share: Save:

চারটি টুইটে বেনজির প্রশংসা। তাতেই এক ঢিলে পাঁচটি পাখি মারার চেষ্টা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। উদ্যোগী হলেন নিজের মন্ত্রিসভায় ভারসাম্য আনতেও।

ভারতীয় সময় গত কাল মধ্যরাতে রাষ্ট্রপুঞ্জে পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে মোক্ষম জবাব দিয়েছিলেন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। রাষ্ট্রপুঞ্জে দাঁড়িয়ে পাকিস্তানকে সন্ত্রাস নিয়ে যেমন তুখোড় বাগ্মিতায় বিঁধেছেন সুষমা, তেমনই বিশ্বের বিভিন্ন বিষয়ে ভারতের দৃষ্টিকোণও তুলে ধরেছেন নিখুঁত ভাবে। আর সুষমার বক্তৃতা শেষ হওয়ার পরেই টুইটারে কার্যত ঝড় তুললেন নরেন্দ্র মোদী। বিদেশমন্ত্রীর বক্তৃতার ভূয়সী প্রশংসা করলেন প্রধানমন্ত্রী। বেনজির ভাবেই।

বিজেপি সূত্র জানাচ্ছে, এই টুইট করে পাঁচটি পাখি মারার চেষ্টা করেছেন মোদী। কী ভাবে? এক, রাষ্ট্রপুঞ্জে নওয়াজ যে ভাবে ভারতকে একতরফা আক্রমণ করেছিলেন, তার পর শীর্ষ স্তর থেকে তার একটি জুতসই জবাব দেওয়ার কূটনৈতিক তাগিদ ছিল নয়াদিল্লির। ‘সন্ত্রাস বন্ধ হলেই আলোচনা হতে পারে’ বলে জানিয়েছিলেন সুষমা। বিদেশমন্ত্রীর বক্তব্যের সূত্র ধরে মোদী আজ টুইট করে পাকিস্তানকে বার্তা দিলেন, সন্ত্রাস নিয়ে তাঁর সরকার কোনও আপস করবে না।

দুই, বিদেশমন্ত্রী আন্তর্জাতিক দরবারে যে কথা বলেন, সেটি প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সরকারেরই অবস্থান হয়। কিন্তু এ বার টুইটারে প্রতিটি বিষয়ে সুষমার বক্তব্যে সিলমোহর বসিয়েছেন মোদী। আলাদা ভাবে বুঝিয়েছেন প্রতিটি বিষয়ে বক্তব্য আসলে তাঁরই।

তিন, বিজেপি সূত্রের মতে, সুষমাকে প্রশংসার পিছনে কূটনৈতিক স্তরের থেকেও বেশি রয়েছে দলের অন্দরের রাজনীতি। এক সময়ে লালকৃষ্ণ আডবাণীর মতো প্রবীণ নেতাদের মদতে সুষমাও নরেন্দ্র মোদীর ঘোরতর বিরোধী ছিলেন। কিন্তু ললিত মোদী কাণ্ডের পর এখন সুষমার সেই কর্তৃত্ব দুর্বল। তাঁর আগের মতো আর ছোবল মারার ক্ষমতাও নেই। ললিত-বিতর্কের পরে তাঁর মন্ত্রিত্বও প্রায় চলে যেতে বসেছিল। কিন্তু মোদীই সেই মন্ত্রিত্ব টিকিয়ে রেখেছেন। বিজেপি সূত্রের মতে, এই পরিস্থিতিতে বিদেশমন্ত্রীকে বেনজির প্রশংসা করে সুষমার উপরে কৃতজ্ঞতার ভার আরও চাপিয়ে দিলেন মোদী। তাঁর আনুগত্য আদায় করে দল ও সরকারে নিজেরই কর্তৃত্ব আরও প্রতিষ্ঠা করতে চাইলেন প্রধানমন্ত্রী।

চার, প্রধানমন্ত্রীর সরকারে একটি ভারসাম্য আনারও তাগিদ রয়েছে বলে মনে করছেন বিজেপি নেতারা। সুষমার সঙ্গে অরুণ জেটলির সম্পর্ক ভাল নয়। অথচ সরকার গঠনের পর অরুণ জেটলির গুরুত্ব নিজেই বাড়িয়েছিলেন মোদী। জেটলির গুরুত্ব বাড়ায় শুধু সুষমাই নন, রাজনাথ সিংহেরও অসন্তোষ বেড়েছে। সরকার এক বছর পার করার পরে মোদী-জাদুও ফিকে হতে শুরু করেছে। তাঁর নিজের কর্তৃত্বও কমেছে। দলে তাঁর বিরুদ্ধেও অসন্তোষ বাড়ছে। এই অবস্থায় অসন্তুষ্ট নেতাদেরও তিনি সঙ্গে নিয়ে চলার বার্তা দিচ্ছেন। রাজনাথের সঙ্গে সম্পর্কটিও ঝালিয়ে নিয়েছেন। এখন সুষমাকেও তারিফ করে তাঁকে সঙ্গে নিয়ে টিম-মোদীর বার্তা দিলেন।

পাঁচ, সুষমার প্রশংসা করে মোদী বিরোধীদেরও জবাব দিতে চেয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। ললিত মোদী কাণ্ডে সুষমা স্বরাজের ভূমিকার কথা তুলে বার বার সরকারকে নিশানা করেন বিরোধীরা। তাঁর পাশেই ফের দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী বুঝিয়ে দিলেন, বিরোধীদের যোগ্য জবাব দেওয়া হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE