প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।
নিয়মিত বেতনভুক, চাকরিরত মানুষের হার কমেছে। তার বদলে ছোটখাটো কাজ করা, ছোটখাটো ব্যবসা করা মানুষের হার বেড়েছে। বেড়েছে ঠিকা রোজগার, অস্থায়ী চাকরিরত মানুষের ভাগ। তার ফলেই সরকারি সমীক্ষায় সার্বিক ভাবে বেকারত্বের হার কমেছে। বেকারত্ব নিয়ে বিরোধীদের প্রশ্নের মুখে আজ এই সরকারি সমীক্ষাকে ঢাল করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোটের মুখে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য, ভারতে কর্মসংস্থান তৈরি নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। দেশে বেকারত্বের হার ৬ বছরে সর্বনিম্ন স্তরে পৌঁছেছে। শহর ও গ্রাম, দুই ক্ষেত্রেই বেকারত্ব দ্রুত গতিতে কমেছে। প্রধানমন্ত্রীর এই দাবি শুনে বিরোধীদের মন্তব্য, মোদী সরকার এ বার আক্ষরিক অর্থে পকোড়া ভাজার মতো ছোটখাটো কাজ করে রোজগারের দিকে মানুষকে ঠেলে দিয়েছে। দুর্ভাগ্যজনক হল, এর ফলে মানুষ রোজগার করলেও আয় কমে গিয়েছে।
দু’দিন আগেই কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান মন্ত্রকের ‘পিরিয়ডিক লেবার ফোর্স সার্ভে’ জানিয়েছিল, ২০২২-এর জুলাই থেকে ২০২৩-এ জুনের মধ্যে বেকারত্বের হার ছিল ৩.২%। ছয় বছর আগে এই সমীক্ষা চালু হয়েছিল। সেই হিসেবে গত ছয় বছরে বেকারত্বের হার সর্বনিম্ন। গ্রামে বেকারত্বের হার কমে হয়েছে ২.৪%, শহরে ৫.৪%। সেই পরিসংখ্যান তুলে ধরে আজ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘এর অর্থ হল, উন্নয়নের সুফল গ্রাম ও শহরে সমান ভাবে পৌঁছচ্ছে। সমান ভাবে নতুন সুযোগ তৈরি হচ্ছে। আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, কর্মিবাহিনীতে মহিলাদের সংখ্যা বেড়েছে।’’
২০১৬-১৭-র সমীক্ষাতেই দেখা গিয়েছিল, নোট বাতিলের পরে বেকারত্বের হার ৪৫ বছরে সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছিল। সরকার তা ধামাচাপা দিয়ে রাখলেও গত লোকসভা ভোটের আগে তা ফাঁস হয়ে যায়। কংগ্রেসের মুখপাত্র জয়রাম রমেশ আজ বলেন, ‘‘সে সময় প্রধানমন্ত্রী বেকারত্বের সমস্যার কথা স্বীকার করতে চাননি। হালকা চালে বলেছিলেন, পকোড়ার দোকান খোলাটাও কর্মসংস্থান। এখন স্পষ্ট, মানুষকে সে দিকেই ঠেলে দেওয়া হয়েছে।’’
বিরোধীদের বক্তব্য, মোদী যে সমীক্ষার কথা বলছেন, তাতেই বলা হয়েছে, নিয়মিত রোজগার বা বেতনের চাকরিরত মানুষের হার ২১.৫% থেকে কমে ২০.৯% হয়েছে। কোভিডের আগে এই ধরনের মানুষের হার ছিল ২৩.৮%। উল্টো দিকে, বাড়িতে বিনা রোজগারের কাজে নিযুক্ত, নিজে ছোটখাটো কাজ করে রোজগার করা বা ছোটখাটো ব্যবসা করা মানুষের হার ৫৫.৮% থেকে বেড়ে ৫৭.৩% হয়েছে। যা পাঁচ বছর আগে ৫২% ছিল।
জয়রাম রমেশ বলেন, ‘‘এ থেকে স্পষ্ট মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত মানুষের দুর্দশা কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। ইউপিএ সরকারের আমলে বেতনভুক চাকরিরত মানুষের হার ১৪% থেকে বেড়ে ২৩% হয়েছিল। এখন স্বনিযুক্ত কর্মীদের আয় গত এক বছরে ১২,৭০০ টাকা থেকে কমে ১১,৬০০ টাকা হয়েছে। গ্রামে ঠিকা শ্রমিকদের দৈনিক বেতন ৫% কমেছে। উল্টো দিকে বিলাসবহুল গাড়ি, পণ্যের বিক্রি বেড়েছে। যা থেকে স্পষ্ট, ধনী-গরিবের ফারাক বেড়েছে। মোদী সরকারের নোট বাতিল, ত্রুটিপূর্ণ জিএসটি, বড় শিল্পপতিদের সুবিধাজনক নীতির ফলেই এই হাল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy