Advertisement
০৫ মে ২০২৪

জোট-প্রস্তাব ফেরাল সব দল, মুখ পুড়ল গগৈয়ের

রাজ্যের আগামী নির্বাচনে জোটের বার্তা দিয়ে নিজের মুখ পোড়ালেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ। রাজ্যে বিজেপি-বিরোধী জোট গড়ার জন্য অ-বিজেপি দলগুলির উদ্দেশে গগৈ গত কাল বলেন, ‘‘বিজেপির সাম্প্রদায়িক আগ্রাসন ঠেকাতে ভোটের আগে না হলেও, ভোটের পরে অন্তত অন্য অ-বিজেপি দলগুলির হাত মেলানো উচিত। দরকার হলে আমি নিজে সেই জোটে নেতৃত্ব দেব।’’

রাজীবাক্ষ রক্ষিত
গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০১৫ ১৭:০৩
Share: Save:

রাজ্যের আগামী নির্বাচনে জোটের বার্তা দিয়ে নিজের মুখ পোড়ালেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ। রাজ্যে বিজেপি-বিরোধী জোট গড়ার জন্য অ-বিজেপি দলগুলির উদ্দেশে গগৈ গত কাল বলেন, ‘‘বিজেপির সাম্প্রদায়িক আগ্রাসন ঠেকাতে ভোটের আগে না হলেও, ভোটের পরে অন্তত অন্য অ-বিজেপি দলগুলির হাত মেলানো উচিত। দরকার হলে আমি নিজে সেই জোটে নেতৃত্ব দেব।’’ ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই এআইইউ়ডিএফ, অগপ, বিভিন্ন বামদল ও গণমুক্তি গগৈয়ের জোট-প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছে। তারা সকলেই প্রায় জানিয়ে দিয়েছে, কংগ্রেসের সঙ্গে জোট গড়তে তারা মোটেই আগ্রহী নয়।

রাজ্যে বিজেপি ক্রমেই তাদের ঘাঁটি মজবুত করছে। লোকসভা ভোট, পুরভোটে ভাল ফলের পর এ বার বিভিন্ন স্বশাসিত পরিষদও তারা একের পর এক কংগ্রেসের হাত থেকে ছিনিয়ে নিচ্ছে। টিওয়া ও ডিমা হাসাওয়ে কংগ্রেসের ঘর ভাঙিয়ে বিজেপি পরিষদ গ়ড়েছে। উল্টো দিকে, দলের ভিতরে বিদ্রোহ, উন্নয়নের অভাব, দুর্নীতির অভিযোগ সামলাতে সামলাতে জেরবার গগৈ। ২০১১ সালে বিপিএফ কংগ্রেসের জোট সঙ্গী ছিল। কিন্তু তাদের সঙ্গেও কংগ্রেসের জোট ভেঙে গিয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে গগৈ বিজেপি-বিরোধী জোটের ডাক দেন। এক সময় এআইইউডিএফকে তাচ্ছিল্য করে গগৈ তাদের প্রধান, বদরুদ্দিন আজমল সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন, ‘‘হু ইজ বদরুদ্দিন!’’। পরিস্থিতি বদলেছে। বদরুদ্দিনের নেতৃত্বে এআইইউডিএফ এখন রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল। আজমলের সঙ্গে সম্প্রতি কয়নাধারার বাড়িতে একাধিক বৈঠকও করেছেন গগৈ। দলীয় সূত্রে খবর, কং-এআইইউডিএফ মিত্রতার সেতুবন্ধনে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা নিয়েছেন করিমগঞ্জের বিধায়ক তথা রাজ্যের শিল্প-বাণিজ্য মন্ত্রী সিদ্দেক আহমেদ।

কংগ্রেস আগে এআইইউডিএফকেও সাম্প্রদায়িক দল বলত। কিন্তু এখন গগৈ এআইইউডিএফকে ধর্মনিরপেক্ষ দল বলেই মনে করছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আজমলের দলে অনেক হিন্দু নেতা রয়েছেন। এআইইউডিএফ তাই অবশ্যই ধর্মনিরপেক্ষ দল। তাদের সঙ্গে আমাদের মিত্রতার রাস্তা সব সময় খোলা। বিজেপির সাম্প্রদায়িক নীতির বিরুদ্ধে থাকা সব ক’টি দলের কাছে আমার আহ্বান, আসুন, এক সঙ্গে হাত মিলিয়ে বিজেপিকে প্রতিরোধ করি।’’

গগৈয়ের এই আহ্বান নস্যাৎ করে দিয়ে এআইইউডিএফ প্রধান আজমল বলেন, ‘‘আমরা কংগ্রেস-বিজেপির সঙ্গে সম-দূরত্ব রক্ষা করব। কংগ্রেসের হাত ধরার প্রশ্নই নেই। বরং কংগ্রেসে বীতশ্রদ্ধ হয়ে ওই দলের অনেকেই আমাদের দলে যোগ দিচ্ছেন বা দিতে চাইছেন। সময়মতো তাঁদের নাম ঘোষণা করা হবে।’’ অবশ্য, এই আজমলই কয়েকদিন আগে বলেছেন, রাজনীতিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বলে কিছু হয় না। তাঁর দল ইউপিএ সরকারের জোট শরিকও ছিল। তাই আজমলকে পাশে টানার আশা ছাড়ছেন না গগৈ। কংগ্রেস সূত্রের বক্তব্য, রাজ্যের ন’টি জেলায় মুসলিমরা এখন সংখ্যাগুরু হলেও বরাক, গুয়াহাটি, উজানি অসমে বিজেপির শক্তি বাড়ছে। আগামী নির্বাচনে ভাল ফল করলেও একক ভাবে ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা আজমলের নেই। বিজেপিকে ঠেকাতে তিনি পরে মত বদল করতেই পারেন।

অসম গণ পরিষদ (অগপ) এর আগে বিজেপি জোটে সামিল ছিল। কিন্তু ২০১০ সালের তাদের জোট ভেঙে যায়। এর পর একে একে দলের প্রাক্তন সভাপতি চন্দ্রমোহন পাটোয়ারি, দুই প্রাক্তন মন্ত্রী হিতেন্দ্রনাথ গোস্বামী ও জগদীশ ভুঁইয়া বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। গত কালই দল থেকে পদত্যাগ করে বিজেপিতে যাওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন সূতিয়ার বর্তমান বিধায়ক পদ্ম হাজরিকা। এই অবস্থায় অগপর এখন অস্তিত্ব রক্ষার সঙ্কট। কিন্তু অগপ জানিয়েছে, তারা কংগ্রেসের সঙ্গে কোনও ভাবেই জোট বাঁধবে না। মুখ্যমন্ত্রীর আহ্বান ফিরিয়ে দিয়ে আজ প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা অগপ সভাপতি প্রফুল্ল মহন্ত বলেন, ‘‘গগৈ তথা কংগ্রেস কতটা দুর্বল হয়ে পড়েছেন তা এই আহ্বান থেকেই প্রমাণ হয়। কংগ্রেসের সঙ্গে আমাদের আদর্শগত ফারাক এতটাই যে তাদের সঙ্গে জোট বাঁধার প্রশ্নই উঠছে না।’’ বিপিএফ প্রধান হাগ্রামা মহিলারি কোনও নির্দিষ্ট দলের সঙ্গে জোট বাঁধা নিয়ে আগাম মন্তব্যে রাজি নন। তিনি জানিয়েছেন, যে দলই ক্ষমতায় আসবে, বিপিএফ তাদের সঙ্গেই যোগ দেবে। কারণ বড়োল্যান্ডের উন্নয়ন করতে হলে ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে থাকা প্রয়োজন। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক উদ্ধব বর্মন বলেন, ‘‘আমরা কংগ্রেসেরও বিরুদ্ধে, বিজেপিরও বিপক্ষে। গগৈয়ের প্রস্তাব মানার প্রশ্নই নেই। আমরা কং-বিজেপি ছাড়া অন্য দল গুলিকে জোটবদ্ধ করার জন্য আলোচনা চালাচ্ছি।’’ একই ভাবে অখিল গগৈয়ের গণমুক্তি সংগ্রামও জানিয়ে দিয়েছে, কংগ্রেস ও বিজেপি, দুই দলই অসমবাসীর স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করছে। গণমুক্তি ভোটে লড়বে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাইরে থেকেও কংগ্রেসকে তারা সমর্থন জানাবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

tarun gogoi assam politics
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE