Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

বেজিংকে না চটাতে নির্দেশ প্রধানমন্ত্রী মোদীর

বেজিংয়ে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের দৌত্যের মাধ্যমে ডোকলাম সঙ্কটের সমাধান সূত্র খোঁজার চেষ্টা শুরু করেছে মোদী সরকার। প্রধানমন্ত্রী তাঁর মন্ত্রিসভার সতীর্থ, সেনাপ্রধান, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক-সহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে মুখে কুলুপ আঁটতে নির্দেশ দিয়েছেন।

অগ্নি রায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৭ ০২:৫০
Share: Save:

চিন নিয়ে আর খুঁচিয়ে ঘা করার প্রয়োজন নেই বলে নির্দেশ দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বেজিংয়ে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের দৌত্যের মাধ্যমে ডোকলাম সঙ্কটের সমাধান সূত্র খোঁজার চেষ্টা শুরু করেছে মোদী সরকার। প্রধানমন্ত্রী তাঁর মন্ত্রিসভার সতীর্থ, সেনাপ্রধান, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক-সহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে মুখে কুলুপ আঁটতে নির্দেশ দিয়েছেন। আলোচনার মাধ্যমে সঙ্কটমোচনের যে চেষ্টা শুরু হয়েছে তা যেন ভেস্তে না যায় সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সতর্কতা নিচ্ছে বিদেশ মন্ত্রকও।

কূটনৈতিক সূত্রের ব্যাখ্যা, এর আগে সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়ত অথবা প্রতিরক্ষা মন্ত্রী অরুণ জেটলির চিন-বিরোধী গর্জনে পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়েছে। ক্রমশ অনমনীয় হয়েছে চিনের মনোভাব। সে দেশের সরকারি মুখপত্রের মাধ্যমে প্রায় প্রতি দিন ভারতকে নিশানা করা হয়েছে তীব্র ভাবে। আপাতত অজিত ডোভালকে পাঠিয়ে বরফ গলানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে সাউথ ব্লক। সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রীর ব্রিকস-এর শীর্ষ বৈঠকে যোগ দিতে চিন যাওয়ার কথা। তার আগে ডোকলাম থেকে সেনা প্রত্যাহার সংক্রান্ত একটি যৌথ প্রস্তাব যাতে তৈরি করা যায় তার জন্য চেষ্টা করছে নয়াদিল্লি। অন্য দিকে চিনের পক্ষ থেকেও যুদ্ধের জিগির কমিয়ে সুর কিছুটা নরম করার বার্তা পাওয়া গিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ, এই সময়ে কোনওভাবেই যেন ঘৃতাহুতি না দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন: চিনের হাতে শ্রীলঙ্কার বন্দর, উদ্বিগ্ন নয়াদিল্লি

আগামী ১ অগস্ট অর্থাৎ দু’দিন বাদেই চিনা সেনার ৯০ বছর পূর্তি। সেই উপলক্ষে সেনার বর্ণাঢ্য ‘ওয়ার গেম’-এ উপস্থিত থাকবেন সে দেশের প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং। সেনার গরিমা প্রদর্শনের জন্য সাজছে বেজিং। সূত্রের খবর, ১ অগস্ট পর্যন্ত ডোকলাম নিয়ে পদক্ষেপের কোনও সম্ভাবনাই যে নেই সে কথা ডোভালকে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন চিনা নেতৃত্ব। তার পরে কবে জট খুলবে তাও এখনও স্পষ্ট করেনি বেজিং। ভারতের প্রস্তাব, ডোকলাম থেকে পিছু হটবে ভারতীয় সেনা। কিন্তু পরিবর্তে চিনা সেনাকেও পিছু হটতে হবে। শিলিগুড়ি করিডর থেকে নামমাত্র দূরে তাদের পরিকাঠামো তৈরির কাজও বন্ধ রাখতে হবে। ভারত-চিন-ভুটান এই তিন দেশের সীমানার মিলনস্থলে স্থিতাবস্থা বদল করতে হলে তিন দেশের মধ্যে আলাপ আলোচনা করতে হবে, এই মর্মে একটি লিখিত সমঝোতা হয়েছিল ২০১২ সালে। ডোভাল তাঁর দৌত্যে এই বিষয়টির উপরেও জোর দিয়েছেন।

কিন্তু এই বিষয়ে চিনের কাছ থেকে সবুজ সঙ্কেত এখনও পাওয়া যায়নি। নভেম্বরে সে দেশের শাসক কমিউনিস্ট পার্টির কংগ্রেস হওয়ার কথা। তার আগে শি চিনফিং-ও চাইছেন ভারতের সঙ্গে দরকষাকষিতে সুবিধেজনক জায়গা আদায় করে নিজের নেতৃত্বে সিলমোহর লাগাতে। পাশাপাশি, চিনের সুপ্রাচীন সমরগ্রন্থ ‘আর্ট অব ওয়ার’-এর একটি নীতি মেনে এই মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধে নয়াদিল্লিকে পরাস্ত করাটাও চিনা কৌশলের মধ্যে পড়ছে।

তবে বিদেশ মন্ত্রকের মতে, সামরিক শক্তিতে অনেকগুণ বেশি বলীয়ান (চলতি বছরে চিন তার প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয়বরাদ্দ ১০.৭ শতাংশ বাড়িয়েছে) চিনের সঙ্গে যদি কূটনৈতিক আলোচনার প্রক্রিয়া অন্তত শুরু করা যায় তাহলে যুদ্ধের উত্তেজনাটা ধীরে ধীরে কমবে। এটাও ঘটনা যে ডোকলামে নতুন পোস্ট তৈরি করে অনন্তকাল সেনা মোতায়েন করে রাখার বিষয়টিও কারও পক্ষেই সুবিধেজনক নয়। সেনা সূত্রের মতে, চিনের সমস্যা আরও বেশি। কারণ, ডোকলামে মোতায়েন চিনা সেনাদের রসদ পাঠাতে অনেক বেশি রাস্তা পেরোতে হয়। শীতকালে যা আরও সমস্যাসঙ্কুল হয়ে দাঁড়াবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE