প্রতীকী ছবি।— শাটার স্টক
২০১৭ সালের ১ জুলাই থেকে শুরু হয় জিএসটি। ধুমধাম করে আরম্ভ হয়। পণ্য বিক্রি ও পরিষেবা ব্যবহারের উপর শুধু একটা কর। আপাতদৃষ্টিতে, জিএসটি আনার লক্ষ্য ছিল নানা রকম কর- সিএসটি, ভ্যাট, সার্ভিস ট্যাক্স ইত্যাদির বদলে একটি মাত্র কর যা সারা দেশে একটি অভিন্ন কর ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা করবে। সেই কর ব্যবস্থার এক বছর পূর্ণ হল। জিএসটিকে কেন্দ্রের সরকার যতই একটি বড় আর্থিক সংস্কার বলে গলা ফাটান, সাধারণ মানুষের কাছে এই কর ব্যবস্থা গলায় কাঁটা আটকানোর মতো— না পারছে গিলতে, না পারছে উগরাতে। কিছু জিনিস এবং পরিষেবার দাম কমেছে বটে, কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দাম বেড়েছে। অতিরিক্ত টাকা পকেট থেকে চলে যাচ্ছে, কিন্তু তাঁর বড় আকারে উপকার মানুষের চোখে পড়ছে না।
যদিও জিএসটি আসার পরে মুদ্রাস্ফীতির উপর বড় কোনও প্রভাব ফেলেনি। এ কথা জানাচ্ছে সরকারই। ক্রেতাদের কাছে অনেক পণ্য বা পরিষেবার দাম আপেক্ষিক ভাবে বেড়েছে। যেমন, আগে ইন্টারনেট ব্যবহার করে সিনেমার টিকিট কাটলে অনলাইন ওয়েবসাইটকে বুকিং চার্জের ১৪ শতাংশ সার্ভিস ট্যাক্স, ০.৫ শতাংশ স্বচ্ছ ভারত সেস এবং ০.৫ শতাংশ কৃষি কল্যাণ সেস দিতে হত। অর্থাত্ মোট ১৫ শতাংশ। এখন তাঁর জায়গায় দিতে হচ্ছে ১৮ শতাংশ জিএসটি।
উবের বা ওলা ব্যবহার করে ট্যাক্সির ক্ষেত্রেও, নতুন এই কর থাকছে। গ্রাহকদের বিলে লেখা আছে তাঁদের ৫ শতাংশ হারে জিএসটি দিতে হচ্ছে। আগে দিতে হত ৬ শতাংশ। কিছু সংস্থার গ্রাহকের ৫ শতাংশ জিএসটি দিতে হচ্ছে ‘রাইড ফি’-র উপর এবং আলাদা ১৮ শতাংশ জিএসটি ‘কনভিনিয়েন্স ফি’-র উপর। ‘রাইড ফি’-র উপর আগে ৬ শতাংশ কর লাগত। কিন্তু ‘কনভিনিয়েন্স ফি’-র উপর কর দিতে হত ১৫ শতাংশ।
আরও পড়ুন: গ্রুপ অ্যাডমিনদের আরও ক্ষমতা বাড়াতে নতুন ফিচার হোয়াটসঅ্যাপের
ব্যাঙ্ক বা কোনও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে পরিষেবা নিলে, জিএসটি থাকছে। সরকার ১৫ শতাংশ সার্ভিস ট্যাক্স থেকে এক লাফে ১৮ শতাংশ জিএসটি করার ফলে, বেশি টাকা দিতে হচ্ছে। এই তালিকায় পড়ছে ক্রেডিট কার্ড। আগে ক্রেডিট কার্ড স্টেটমেন্টে যদি ১৫ শতাংশ হারে ৫০২ টাকা ট্যাক্স বাবদ আসত, এখন আসে ৬০২ টাকা হচ্ছে। কারণ ১৮ শতাংশ জিএসটি। ঠিক একই ভাবে বেড়েছে এটিএম ব্যবহারের খরচ। বেড়েছে লোন প্রসেসিং চার্জ।
তর্কের খাতিরে কেউ কেউ বলবেন খুব একটা বেশি টাকা বাড়েনি। আগে চেকবই বা ডিমান্ড ড্রাফ্ট নিতে হলে ১০০ টাকা লাগত এবং ট্যাক্স ছিল ১৫ টাকা। আজ সব মিলিয়ে দিতে হচ্ছে ১০০ + ১৮ টাকা = ১১৮ টাকা। মাত্র তিন টাকা অতিরিক্ত দিতে হচ্ছে। কিন্তু হাজার বা লক্ষ বা কোটি মানুষ একটু একটু করে বেশি টাকা দিলে, তার প্রভাব বেশ বড় আকারেই হয়। জীবনবিমার প্রিমিয়াম বেড়েছে। মিউচুয়াল ফান্ডের এক্সপেন্স রেশিও এবং এক্সিট লোডে লেগেছে জিএসটি।
বলা হয়েছিল, জিএসটি নাকি বাড়ির দাম কমিয়ে দেবে। সে রকম কিছুই হয়নি।
দ্রুত চলমান ভোগ্যপণ্য বা এফএমসিজিতে কিছু রেহাই মিলেছে। আটা, ভোজ্য তেল, শস্য, দুধ, ইত্যাদির উপর ৫ শতাংশ জিএসটি। ওষুধ, ফলের রস, পেন্সিল, বল পয়েন্ট কলম এই সবের উপর জিএসটির হার ১২ শতাংশ। মাথার তেল, সাবান, টুথপেস্ট, কাজল ইত্যাদিকে ১৮ শতাংশ করের শ্রেণিতে ফেলা হয়েছে। কেলেঙ্কারি ঘটে যখন সরকার শ্যাম্পু, ডিওডর্যান্ট, ডিটারজেন্ট, প্রসাধনী পণ্য এবং চকোলেটকে ২৮ শতাংশ জিএসটি ট্যাক্স শ্রেণিতে রাখে। অবশ্য সরকার ১৫ নভেম্বর ২০১৭ সালেই ১৭৫টি পণ্যের জন্য কর ২৮ শতাংশ থেকে ১৮ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছে। রেস্টুরেন্টে খাওয়ার খরচ কিছুটা কমেছে, কারণ জিএসটি ১৮ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ করা হয়েছে।
বলা হয়েছিল, জিএসটি নাকি বাড়ির দাম কমিয়ে দেবে। সে রকম কিছুই হয়নি। জিএসটির জমানায় নতুন বাড়ি (যা তৈরি হয়নি) কিনলে সব মিলিয়ে ট্যাক্স এবং নানান চার্জ (স্ট্যাম্প ডিউটি এবং রেজিসস্ট্রেশন) হিসেব করলে অতিরিক্ত ১৬.৫ শতাংশ থেকে ২১.১ শতাংশ দিতে লাগছে। অবশ্য কোন রাজ্যে নতুন বাড়ি কিনছেন তাঁর উপর দাম নির্ভর করছে। এখন জিএসটি ১২ শতাংশ, ৪-৮ শতাংশ স্ট্যাম্প ডিউটি (৬ শতাংশ-৭ শতাংশ কলকাতায় লাগে) এবং রেজিসস্ট্রেশন চার্জ ০.৫ শতাংশ-১.১ শতাংশ। ১ জুলাই ২০১৭-র আগে এই খাতে দিতে হত সর্বাধিক ১৮-১৯ শতাংশ (উকিলের খরচ ধরলে)। কারণ আগে সার্ভিস ট্যাক্স ছিল ৪.৫ শতাংশ এবং ভ্যালু অ্যাডেড ট্যাক্স (ভ্যাট) ছিল ০-৫ শতাংশ, ৪-৮ শতাংশ স্ট্যাম্প ডিউটি এবং রেজিসস্ট্রেশন চার্জ ০.৫-১.১ শতাংশ।
আরও পড়ুন: মশাকে বন্ধ্যা করে ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া রোখা সম্ভব,দাবি বাঙালি বিজ্ঞানীর
সাধারণ মানুষেকে উপকৃত করার জন্য জিএসটি-র অধীনে পেট্রল ও ডিজেলও আনা উচিত। এখন তেলের দামের ৬০ শতাংশ ট্যাক্স। জিএসটির অধীনে এলে তেলের দাম কমে যাবে বলে আশা করা যেতে পারে।
এক বছর পর, জিএসটি বাস্তবায়নের প্রভাব দেখা দিতে শুরু করেছে। কিন্তু অনেকেই মনে করেন, এখন এই কর ব্যবস্থা একটি ট্রানজিশনাল পর্যায়ে রয়েছে। কিন্তু শেষ কথা এই যে, জিএসটিকে ঘিরে গ্রাহকদের মধ্যে জিনিসপত্রের দাম কমা নিয়ে অনেক প্রত্যাশা ছিল। সেই প্রত্যাশা এবং বাস্তবের মধ্যে বিস্তর ফারাক রয়ে গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy