Advertisement
E-Paper

রাস্তা গড়লেন গ্রামবাসীরাই

পূ্র্তমন্ত্রীর এলাকায় শ্রমদানে রাস্তা তৈরি করলেন গ্রামবাসীরা। তিনটি কালভার্ট নির্মাণ, টিলা কেটে সমান করা, নীচুজমিতে মাটি ভরাট— সবই করেছেন ধলাই বিধানসভা আসনের নোহারবন্দ কলোনির মানুষ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:১০

পূ্র্তমন্ত্রীর এলাকায় শ্রমদানে রাস্তা তৈরি করলেন গ্রামবাসীরা। তিনটি কালভার্ট নির্মাণ, টিলা কেটে সমান করা, নীচুজমিতে মাটি ভরাট— সবই করেছেন ধলাই বিধানসভা আসনের নোহারবন্দ কলোনির মানুষ।

শ্রমদানে উৎসাহিত করা বা কোনও দৃষ্টান্ত স্থাপনের জন্য নয়। ১৯৬২ সাল থেকে মন্ত্রী-বিধায়কদের কাছে আবেদন-নিবেদন করে ব্যর্থ হয়েই কোদাল তুলে নিয়েছিলেন তাঁরা। প্রতি দিন সকালে এক-দেড় ঘণ্টা মাটি কেটেছেন। পা ফেলার জায়গা খুঁজে পাওয়া মুশকিল গ্রামটিতে এখন চার চাকার গাড়ি চলতে পারে। তাই খুশিতে ঘটা করে রাস্তা উদ্বোধন করতে চেয়েছিলেন সবাই। আমন্ত্রণ করা হয়েছিল এলাকার বিজেপি বিধায়ক তথা রাজ্যের পূর্তমন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্যকে। তাঁর পরামর্শেই আজকের দিনটিকে বাছাই করা হয়েছিল। কিন্তু উদ্বোধনেও পাওয়া গেল না তাঁকে।

কংগ্রেস আমলে স্থানীয় বিধায়ক গিরীন্দ্র মল্লিক ছিলেন রাজ্যের সীমান্ত এলাকা উন্নয়ন ও কারা মন্ত্রী। বর্তমান বিধায়ক পরিমল শুক্লবৈদ্য পূর্তমন্ত্রী। সঙ্গে আবগারি, মৎস্য দফতরও। অভিযোগ, কোনও আমলে স্থানীয় বিধায়কের কাছে সাহায্য পাননি নোহারবন্দের জনতা।

শিলচর-আইরংমারা-হাইলাকান্দি সড়কের ধোয়ারবন্দ থেকে তিন কিলোমিটার দূরে নোহারবন্দ কলোনি। দুই শতাধিক পরিবারের বসবাস ওই গ্রামে। সবাই দিনমজুর। সরকারি কর্মচারী বলতে এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জিতেন্দ্র শুক্লবৈদ্য। এলাকায় পানীয় জলের কোনও বন্দোবস্ত নেই। নেই বিদ্যুৎ। এতদিন চলাফেরারও উপায় ছিল না।

তবু এলাকার বাসিন্দারা মিলে ১৯৭৬ সালে কলোনিতে তৈরি করেছিলেন একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ১৯৮২ সালে সরকার সেটি অধিগ্রহণ করে। ২০১২ জিতেন্দ্রবাবুর সঙ্গে দেওয়া হয় শিক্ষক রাজীব চৌধুরীকে। এর পরই শুরু হয় শ্রমদানে রাস্তা তৈরির আলোচনা।

রাজীববাবু বলেন, ‘‘চাকরি পেয়ে স্কুলে যেতে গিয়ে দেখি, কোনও রাস্তা নেই। নালার পার ধরে, এ বাড়ির উঠোন, ও বাড়ির বারান্দা দিয়ে স্কুলে যায় ছাত্রছাত্রীরা। শুধু স্কুলই নয়, গ্রামবাসীর চলাফেরাও ওই ভাবেই।’’

প্রধান শিক্ষক জিতেন্দ্র শুক্লবৈদ্য জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত কোনও জনপ্রতিনিধি তাঁদের কলোনিতে যাননি। রাস্তা, বিদ্যুৎ, জলের জন্য যত বার তাঁদের কাছে গিয়েছেন, ব্যর্থ হয়েই ফিরেছেন। সব শুনে রাজীববাবুই শ্রমদানে রাস্তা তৈরির প্রস্তাব দেন। শুরুতে অনেকে অসম্ভব মনে করে উড়িয়ে দিলেও ধীরে ধীরে তা মেনে নেন। রাজীববাবু বলেন, ‘‘প্রথমেই বিপাকে পড়তে হয়

রাস্তার জমি বের করতে গিয়ে। কে কাকে জমি ছাড়বে! সেখানেও সবাইকে রাজি করানো হয়। শুরু হয় পেশাগত কাজে যাওয়ার আগে এক-দেড় ঘণ্টা রাস্তার জন্য শ্রমদান।’’ তিনি জানান, অনেকটা এগিয়ে গিয়ে সমস্যা দেখা দেয় কালভার্টের জন্য।

এ তো শুধু শ্রমদানে সম্ভব নয়। সে জন্যও জিতেন্দ্রবাবু, রাজীববাবুরা বেরিয়ে পড়েন পরিচিতজনদের কাছ থেকে সাহায্য চাইতে। শেষ পর্যন্ত কিছুই আটকে থাকেনি। দেড় বছর শ্রমদানের পর আজ সেই রাস্তার উদ্বোধন হয়।

পরিমলবাবু উদ্বোধনের সময় দিতে না পারলেও এলাকাবাসীর তাঁর উপর কোনও ক্ষোভ বা অভিমান নেই। জিতেন্দ্রবাবু বলেন, ‘‘আমাদের মতো মানুষের রাগ-অভিমান মানায় না। শ্রমদানে শুধু কাঁচা রাস্তা তৈরি হল। একে উন্নত করতে হলে পরিমলবাবুদের কাছেই যে যেতেই হবে!’’

Public Village Road
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy