ছেলে ও নাতির সঙ্গে নিরঞ্জন ঠাকুর। ছবি টুইটার থেকে সংগৃহীত।
প্রতিদিনের মতো গত কালও বিকেল চারটে নাগাদ ছেলের ফোনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন বিহারের নিরঞ্জন ঠাকুর। ফোনটা এল সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ। ও-পারে এক সেনা কম্যান্ডারের অপরিচিত গলা। প্রথমে ছেলে রতনকুমার ঠাকুরের ফোন নম্বর যাচাই করলেন। জানতে চাইলেন বাবা এবং স্ত্রীর নামও। সব মিলে যাওয়ার পরে দিলেন দুঃসংবাদটা। পুলওয়ামায় জইশ হামলায় নিহত জওয়ানদের মধ্যে এক জন তাঁর ছেলেও।
কহেলগাঁওয়ের ঠাকুর পরিবারের ছেলে রতনকুমার সিআরপির ৪৫ নম্বর ব্যাটেলিয়নের সদস্য। বাড়িতে রয়েছে বাবা, অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রাজনন্দিনী এবং চার বছরের সন্তান। গোটা পরিবার ভাড়া থাকে ভাগলপুরের লোদিপুর মহল্লায়। খবরটা পাওয়া ইস্তক থমথমে সেই বাড়ি। অন্তঃসত্ত্বা ছেলের বৌ, নাতিকে নিয়ে অগাধ জলে নিরঞ্জন।
তবু সন্তানহারা বাবা বলেছেন, ‘‘ভারতমাতার সেবায় এক ছেলেকে বিসর্জন দিয়েছি। আমার আর এক ছেলেকেও সেখানে পাঠাতে প্রস্তুত। কিন্তু পাকিস্তান যেন তার কাজের যোগ্য জবাব পায়।’’
এক মাসের ছুটি কাটিয়ে ক্যাম্পে ফিরছিলেন পটনার তারেগনার বাসিন্দা সঞ্জয় সিংহ। জম্মু থেকে শ্রীনগরগামী ৭৮টি গাড়ির সিআরপি কনভয়ে ছিলেন তিনিও। বিস্ফোরণে ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছে সঞ্জয়ের দেহ। বিকেলে খবর আসে তাঁর জামাইবাবুর কাছে। সঞ্জয়ের ভাই শঙ্কর সিংহও সিআরপিতে রয়েছেন। বাবা মহেন্দ্রপ্রসাদও ছিলেন সিআরপিতেই। দুই মেয়ে এবং এক ছেলের বাবা সঞ্জয় স্ত্রীকে বলেছিলেন, পরের বার এসে বড় মেয়ের বিয়ের কথা পাকা করবেন। ছোট মেয়ে স্নাতক স্তরে পড়ছেন। ছেলে রাজস্থানের কোটাতে থেকে মেডিক্যাল পরীক্ষায় বসার কোচিং নিচ্ছেন। গত কালের হামলা তছনছ গোটা সংসার।
তুষারপাতের জন্য জম্মু-শ্রীনগরের রাস্তা বন্ধ ছিল কয়েক দিন। গত কালই খুলেছিল জাতীয় সড়ক। সকালেই স্ত্রী বিমলাকে ফোন করে বিজয় সোরেঙ্গ (৪৩) জানিয়েছিলেন, ক্যাম্পে পৌঁছে খবর দেবেন। সেই শেষ ফোন। বিকেলে বিমলাদেবীর কাছে খবর আসে, অবন্তীপোরায় গাড়িবোমা হামলায় নিহত হয়েছেন তাঁর স্বামী।
ঝাড়খণ্ডে গুমলার বসিয়া ফরসামা গ্রামের বাসিন্দা বিজয় ফেব্রুয়ারি মাসেই বাড়ি এসেছিলেন। দিন চারেক থাকার পরে ৫ ফেব্রুয়ারি ফের কাজে যোগ দিতে জম্মু চলে যান। স্ত্রীকে বলে যান, মাস কয়েকের মধ্যে বাড়ি আসবেন। বিজয়ের দুই ছেলে, তিন মেয়ে। বাবা যে নেই, এখনও তা বুঝে উঠতে পারেনি দু’বছরের ছোট মেয়েটি। গোটা গ্রাম ভেঙে পড়েছে তাঁদের টালির চালের ছোট্ট বাড়িটির সামনে। সিআরপির তরফে বিমলাদেবীদের জানানো হয়েছে, জম্মু থেকে দিল্লি হয়ে রাঁচী বিমানবন্দরে আসবে বিজয়ের দেহ। সেখান থেকে সড়কপথে গুমলায় নিয়ে আসা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy