Advertisement
০৩ মে ২০২৪

কলকাতা থাকুক, দিল্লির শিল্পীরাও বা কম কীসে

কলকাতার মৌরসিপাট্টা মানতে রাজি নন দিল্লির বাংলা সঙ্গীতশিল্পীরা। দিল্লিকে বলা হয় ভারতের রাজনৈতিক রাজধানী। মুম্বই বাণিজ্যিক রাজধানী। আর কলকাতা? সাংস্কৃতিক রাজধানী! এ জন্য দিল্লিতে বাংলা গান গাইলেও কলাকুশলীরা যত ক্ষণ না রবীন্দ্রসদন বা নেতাজি ইন্ডোরে গাইতে পারছেন, তত ক্ষণ জাতে ওঠেন না!

সুমনা কাঞ্জিলাল
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৫ ০০:০৫
Share: Save:

কলকাতার মৌরসিপাট্টা মানতে রাজি নন দিল্লির বাংলা সঙ্গীতশিল্পীরা।

দিল্লিকে বলা হয় ভারতের রাজনৈতিক রাজধানী। মুম্বই বাণিজ্যিক রাজধানী। আর কলকাতা? সাংস্কৃতিক রাজধানী! এ জন্য দিল্লিতে বাংলা গান গাইলেও কলাকুশলীরা যত ক্ষণ না রবীন্দ্রসদন বা নেতাজি ইন্ডোরে গাইতে পারছেন, তত ক্ষণ জাতে ওঠেন না! এ বিষয়ে উস্তাদ আমজাদ আলি খান এক বার বলেছিলেন, “কলকাতায় অনুষ্ঠান প্রথমে করেছিলাম বলেই বোধহয় আজ আমি আমজাদ আলি।” আজ ২০১৫-র চৌকাঠে দাঁড়িয়ে কলকাতার এই মৌরসিপাট্টা ভেঙে দিল্লির বহু শিল্পীও আজ আওয়াজ তুলেছেন, তাঁরাও কারও থেকে কম নন।

এমনই এক দম্পতি মিহির বসু ও বিশাখা বসু। যাঁরা দিল্লির সরোজিনী নগরে সুরছন্দম নামে একটি স্টুডিও তৈরি করেছেন। যেখানে দিল্লির সঙ্গীতশিল্পীরা স্বল্প খরচায় কলকাতায় না গিয়েও কলকাতার বিভিন্ন নামী মিউজিক কোম্পানিতে তাঁদের গানের সিডি বানাছেন। মিহির-বিশাখা বললেন, ‘‘আমরা কলকাতা-বিরোধী নই। কিন্তু দিল্লিতে সাংস্কৃতিক প্রতিভা নেই এমন সরলীকরণও অনুচিত। ভাল কাজ নিয়মিত এখানেও করা সম্ভব, যদিও আগে সে সুযোগ ছিল না। সম্প্রতি কলকাতা দূরদর্শনের দুটি মেগা সিরিয়ালের রেকর্ডিং এখান থেকে তৈরি হয়েছে। এ জন্য আমরা ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী।’

দিল্লির আর এক সুরকার দেবু ভট্টাচার্য এ বিষয়ে অবশ্য আশাবাদী নন। তিনি বলছেন, ‘‘গত ২০ বছর ধরে নিয়মিত কাজ করে চলেছি। তবুও দিল্লির সঙ্গীতপ্রেমী বাঙালি শ্রোতারা এবং আয়োজকেরা কলকাতার শিল্পীদের প্রাধান্য দেন। আবার পশ্চিমবঙ্গও দিল্লির শিল্পীদের প্রতি বিমাতৃসুলভ মানসিকতা দেখায়। তবুও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি।’’ অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাতনি রঞ্জনী স্যানাল দীর্ঘ দিন দিল্লির সঙ্গীতশিল্পী। তাঁর কথায়: ‘‘দিল্লিতে প্রচার খুব কম। অনুষ্ঠানও কম। সারা বছর দুর্গাপুজোর বেশ কিছু অনুষ্ঠানের জন্য অপেক্ষা করলেও পুজো কমিটিরা কলকাতার শিল্পীদের নিয়ে যে ভাবে মাতামাতি করে তা কল্পনাতীত।’’

প্রতিভা কম নেই দিল্লিতে। সুধীর চন্দ্র, সঞ্জয় সরকার, জয়তী ঘোষ, মৌলী ঘোষ, বিশাখা বসুর পাশাপাশি একঝাঁক নতুনের দল। নতুন নতুন পরিকল্পনা আর স্বপ্নকে নিয়ে তাঁরা এগিয়ে চলেছেন। নতুন পরিকল্পনায় তৈরি হয়েছে বাংলা ব্যান্ড ‘র‌ং পেন্সিল’। সম্পূর্ণ মহিলাদের ব্যান্ড ‘বাংলা গানের স্পন্দন’ ইতিমধ্যেই জনপ্রিয়। তবুও মহিলা ব্যান্ডের প্রধান গায়িকা মৌলী ঘোষের গলায় হতাশার সুর। তাঁর কথায়, ‘‘গেঁয়ো যোগী ভিখ পায় না! আমাদের অবস্থাও তেমন। আমাদের পারিশ্রমিক দেওয়ার সময় আয়োজকদের প্রচুর আপত্তি।’’

এই মুহূর্তে দিল্লি, গুড়গাঁও, নয়ডা, ফরিদাবাদ মিলিয়ে প্রায় ৭০০টি পুজো হচ্ছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য পুজো প্রায় ১০০টি। বাজেট কারুর কিছু কম নয়। এমনই এক ৭৪ বছরের পুরনো পুজো কমিটির সম্পাদক বলেন, “আমরা চেষ্টা করি, কিন্তু দিল্লির শিল্পীরা যথেষ্ট ব্যয়বহুল। ৩০ হাজার টাকার নীচে কাউকে পাওয়া যায় না। সে ক্ষেত্রে কলকাতার শিল্পীদের পয়সা দেওয়া ভাল। তবুও আমরা কিছু অনুষ্ঠান দিল্লির শিল্পীদের সারা বছর দিয়ে থাকি।’’

দিল্লির বিশিষ্ট শিল্পী নীরজ রায়ের কথায়, ‘‘প্রচার মাধ্যমগুলি যদি সাহায্যের হাত বাড়ায়, বিশেষ করে টিভি চ্যানেলগুলি যদি কিছু অনুষ্ঠান দিল্লিতে করে তবে দিল্লির শিল্পীরা অবশ্যই উপকৃত হবেন। আমরা কোনও অংশে কলকাতার থেকে কম নই।’’ দিল্লির আর এক সঙ্গীতশিল্পী, পেশায় ইঞ্জিনিয়ার জয়তী ঘোষ বললেন, “কলকাতায় যত বার গিয়েছি খুব ভালবাসা পেয়েছি। দিল্লিতে আয়োজকদের দোষ না দিয়ে শিল্পীরা যদি সামান্য শিল্পীসুলভ আচরণে জোর দেন, তবে মানসিকতায় পরিবর্তন আসতে বাধ্য। আসলে বিনা পয়সায় স্থানীয় শিল্পীদের অনুষ্ঠান দেখার সুযোগ তাঁরা বিভিন্ন জায়গায় পেয়ে থাকেন। মাছের বাজারেও শিল্পীদের দেখা যায়। ফলে পয়সা দিয়ে তাঁদের অনুষ্ঠান দেখার প্রবণতা কমে গিয়েছে।’’

বেশ বোঝা যাচ্ছে, কয়েক বছর ধরে মানসিকতা পরিবর্তনের একটা হাওয়া বইতে শুরু করেছে। দিল্লির সঙ্গীতশিল্পের পালে সেই বাতাস লাগবে কি না সেটাই এখন দেখার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE