Advertisement
০৬ মে ২০২৪

হাতিয়ার যে বয়ান, তা ঘিরেই প্রশ্ন

পি চিদম্বরমের ছেলে কার্তির বিরুদ্ধে সিবিআইয়ের প্রধান অস্ত্র এ হেন ইন্দ্রাণীর বয়ান। সিবিআইয়ের দাবি, ইন্দ্রাণী ম্যাজিস্ট্রেটকে দেওয়া বয়ানে জানিয়েছেন, ২০০৭-এ তৎকালীন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের কথাতেই তাঁরা কার্তিকে ঘুষ দেন।

কার্তি চিদম্বরম এবং ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায়

কার্তি চিদম্বরম এবং ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায়

প্রেমাংশু চৌধুরী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০১৮ ০৩:২০
Share: Save:

নিজের মেয়ে শিনা বরাকে খুনের অভিযোগে তিন বছর ধরে মহারাষ্ট্রের বাইকুল্লা জেলে বন্দি আইএনএক্স মিডিয়ার অন্যতম কর্ণধার ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায়। সেই খুনের তদন্ত করছে সিবিআই।

পি চিদম্বরমের ছেলে কার্তির বিরুদ্ধে সিবিআইয়ের প্রধান অস্ত্র এ হেন ইন্দ্রাণীর বয়ান। সিবিআইয়ের দাবি, ইন্দ্রাণী ম্যাজিস্ট্রেটকে দেওয়া বয়ানে জানিয়েছেন, ২০০৭-এ তৎকালীন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের কথাতেই তাঁরা কার্তিকে ঘুষ দেন।

আর এই দাবি নিয়েই উঠছে প্রশ্ন। কংগ্রেসের অনেকে বলছেন, ইন্দ্রাণীকে চাপ দিয়ে বা কোনও সুবিধার বিনিময়ে কি বয়ান ‘আদায়’ করেছে সিবিআই?

প্রশ্ন আরও অনেক। অনেকেই বলছেন, কার্তির বিরুদ্ধে সিবিআইয়ের মামলায় বিস্তর ফাঁকফোকর রয়েছে।

কোথায় সেই ফাঁকফোকর? প্রথমত, ইন্দ্রাণী বয়ান দিয়েছেন, আইএনএক্সের জন্য বিদেশি লগ্নির ছাড়পত্র জোগাড় করতে তিনি ও তাঁর স্বামী পিটার মুখোপাধ্যায় ২০০৭-এ পি চিদম্বরমের সঙ্গে দেখা করেন। চিদম্বরম তাঁদের কার্তির কাছে পাঠান। কার্তি ১০ লক্ষ ডলার ঘুষ চান। চার দফায় ৭ লক্ষ ডলার কার্তির চারটি সংস্থাকে ‘ঘুষ’ দেওয়া হয়। কংগ্রেসের প্রশ্ন, ২০০৮-এ চিদম্বরমই কোম্পানি কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রককে আইএনএক্সের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দেন। ছেলেকে ঘুষ দিতে বলে বাবা তদন্তের নির্দেশ দিচ্ছেন— এটা সম্ভব? সিবিআইয়ের যুক্তি, তদন্তের নির্দেশ আসলে চাপ দিয়ে টাকা আদায়ের চেষ্টা। প্রশ্ন, টাকা আদায়ের চেষ্টা হলে তো টাকা পাওয়ার পরে তদন্ত বন্ধ করে দিতে পারতেন চিদম্বরম। কিন্তু তা করেননি। তদন্তের রিপোর্ট বেরিয়েছে ২০১৩-য়। তখনও চিদম্বরম কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। তা হলে?

দ্বিতীয়ত, কার্তির ‘অ্যাডভান্টেজ স্ট্র্যাটেজিক সংস্থা’ ১০ লক্ষ টাকা চেকে নিয়েছিল বলে প্রমাণ মিলেছে। ওই টাকার টিডিএস-ও কাটা হয়েছে। প্রশ্ন হল, ঘুষ কেউ চেকে নেয়? ইন্দ্রাণীর বয়ান মিলিয়ে ৭ লক্ষ ডলারের ‘ঘুষের বিল’ মিলেছে বলেও দাবি সিবিআইয়ের। কিন্তু টাকা লেনদেনের প্রমাণ এখনও সিবিআই পায়নি। ‘ঘুষে’র টাকা কোথায়, উঠছে প্রশ্ন।

তৃতীয়ত, ইন্দ্রাণীরা যে চারটি সংস্থাকে টাকা দিয়েছেন বলে অভিযোগ, তার মধ্যে কোনওটির সঙ্গেই তাঁর সম্পর্ক নেই বলে কার্তির দাবি। সিবিআইয়ের যুক্তি, অ্যাডভান্টেজ স্ট্র্যাটেজিক সংস্থার কোনও শেয়ারের মালিক কার্তি নন ঠিকই। কিন্তু সব শেয়ার মালিকই তাঁদের মালিকানা কার্তির কন্যা অদিতির নামে উইল করে দিয়েছেন। চারটি সংস্থার কোম্পানি সেক্রেটারি একই ব্যক্তি। ওগুলো বেনামি কোম্পানি। কিন্তু কোর্টে তা প্রমাণ করার জন্য নথি চাই।

চতুর্থত, বিদেশি লগ্নির ছাড়পত্র দিয়েছিল ফরেন ইনভেস্টমেন্ট প্রোমোশন বোর্ড। যার মাথায় ছিলেন ডি সুব্বারাও। যিনি পরে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর হন। বোর্ডে বিভিন্ন মন্ত্রকের আরও ছ’জন সচিব ছিলেন। প্রশ্ন উঠেছে, এঁরা সকলেই চিদম্বরমের হাতের পুতুল ছিলেন? এঁদের জেরা করা হচ্ছে না কেন? সিবিআইয়ের দাবি, সবার বয়ান রেকর্ড হয়েছে। কিন্তু তা বলা যাবে না।

পঞ্চমত, কার্তি দুর্নীতিগ্রস্ত হলে লন্ডন থেকে ফিরলেন কেন? কেন নীরব মোদী, ললিত মোদী, বিজয় মাল্যর মতো বিদেশে পালালেন না? এর উত্তর সিবিআইয়ের কাছে নেই। তবে বিজেপির ব্যাখ্যা, কার্তি না ফিরলে পি চিদম্বরম তথা কংগ্রেসের মুখ পুড়ত। কার্তি গ্রেফতার হওয়ায় বরং কংগ্রেস রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অভিযোগ তুলতে পারছে।

শুক্রবার সকাল থেকে কার্তিকে জেরা শুরু করেছে সিবিআই। আইএনএক্স মিডিয়া-র ‘ঘুষ’ নেওয়ার যে সব নথি উদ্ধার করা হয়েছে, সে সব দেখিয়ে তাঁকে জেরা করা হবে বলে সিবিআই সূত্রের দাবি। কার্তির চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট এস ভাস্করামনের মুখোমুখিও বসানো হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Karti Chidambaram Indrani Mukerjea CBI
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE