Advertisement
E-Paper

রুক্মিণী তুমি কার? ধন্দ মিসমি সমাজে

কৃষ্ণের রুক্মিণীহরণ ও বিবাহ গুজরাতের পোরবন্দর লাগোয়া মাধবপুর ঘেরে রামনবমী উৎসবের প্রধান আকর্ষণ। এ বছর অরুণাচল থেকে শ’দেড়েক শিল্পীকে সেই উৎসবে নিয়ে যাওয়া হয়।

রাজীবাক্ষ রক্ষিত

শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০১৮ ০৩:২১
রামনবমী উৎসবে মিসমি মেয়েরা। ছবি: মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে

রামনবমী উৎসবে মিসমি মেয়েরা। ছবি: মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে

কিংবদন্তির নামে অরুণাচলের ইতিহাস বিকৃত করা হচ্ছে বলে প্রশ্ন উঠেছে। তার কেন্দ্রে রয়েছে কৃষ্ণ-রুক্মিণী প্রসঙ্গ।

কৃষ্ণের রুক্মিণীহরণ ও বিবাহ গুজরাতের পোরবন্দর লাগোয়া মাধবপুর ঘেরে রামনবমী উৎসবের প্রধান আকর্ষণ। এ বছর অরুণাচল থেকে শ’দেড়েক শিল্পীকে সেই উৎসবে নিয়ে যাওয়া হয়। কৃষ্ণের সঙ্গে অরুণাচল-মণিপুরের সুপ্রাচীন সম্পর্ক রয়েছে দাবি করে হাজির ছিলেন দুই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীও। গিয়েছেন রাজ্যের সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেণ রিজিজুও। উৎসবে প্রচার হচ্ছে, রুক্মিণী আদতে ইদু-মিসমি উপজাতির রাজা ভীষ্মকের কন্যা। তাঁকে জোর করে বিয়ে করতে চাইছিলেন চেদিরাজ শিশুপাল। তখন কৃষ্ণ রুক্মিণীকে হরণ করেন। লিকাবালির মালিনীথানে তাঁরা বিশ্রাম নেন। পরে মাধবপুর ঘেরে তাঁদের বিয়ে হয়েছিল।

স্থানীয় বাসিন্দারা কিন্তু জানাচ্ছেন ওই কাহিনির বয়স মেরেকেটে পাঁচ দশক। ষাটের দশকে রাজ্যে খ্রিস্টান মিশনারিদের প্রভাব বাড়তে শুরু হয়। তার মোকাবিলা করতেই লোহিতের পরশুরাম কুণ্ড, মালিনীথান আর রোয়িংয়ের ভীষ্মকনগরকে মিলিয়ে কৃষ্ণ-রুক্মিণীর এই গল্প ছড়ানো হয়েছিল। ওই গল্পকেই জোরদার ভাবে প্রতিষ্ঠিত করছে এ বারের মাধবপুর ঘের। চিনকেও বার্তা দেওয়া হচ্ছে যে, অরুণাচল ভারতীয় সংস্কৃতির অঙ্গ।

কিন্তু কৃষ্ণচরিত্রে মান্য গ্রন্থ হরিবংশ মতে রুক্মিণী বিদর্ভ রাজকন্যা। আর বিদর্ভ হল বিন্ধ্যর দক্ষিণে। ভীষ্মক বিদর্ভরাজ। জরাসন্ধের কথায় ভীষ্মক মেয়ের বিয়ে ঠিক করেন শিশুপালের সঙ্গে। কিন্তু কৃষ্ণ আর রুক্মিণী একে অপরের কথা শুনেছিলেন আর তাতেই ভালবেসে ফেলেন। বিয়ের আগের দিন রুক্মিণী ইন্দ্রাণীর মন্দিরে যান। সেখানেই তাঁকে দেখে কৃষ্ণের মনে হয়েছিল, রুক্মিণী আগুনের শিখার মতো আবার যেন চন্দ্রকিরণ দিয়েই তৈরি। পদ্ম থেকে উঠে আসার সময় লক্ষ্মীকে যেমন দেখতে হয়, রুক্মিণী ছিলেন তেমনই। এত সুন্দর যে, কৃষ্ণের মনে হয়েছে তিনি মায়া। মন্দির থেকে বেরোনোর সময় তাঁকে রথে তুলে নেন। কৃষ্ণকে তাড়া করে বিরাট বাহিনী। সামাল দেন বলরাম।

হরিবংশের এই মতই মোটামুটি ভাবে মানা হয়। রুক্মিণী হরণ নিয়ে নাটকও বহু প্রচলিত। বিশ্বম্ভর মিশ্রও সেই নাটকে অভিনয় করেছিলেন বলে অনুমান করা হয়। সেখানে রুক্মিণীকে ইদু-মিসমি উপজাতি কন্যা বলে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা ইদু-মিসমি গবেষক মিতে লিঙ্গিও মেনে নিচ্ছেন না। তাঁর মতে, কোনও কল্পকাহিনি উন্নয়নের কাজে লাগলে অন্য কথা কিন্তু এ ভাবে অন্য উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য একটি উপজাতির ইতিহাস ও ঐতিহ্য বিকৃত করা অন্যায়।

তবে রোয়িংয়ে ভীষ্মকনগর বলে একটি জায়গা রয়েছে। কিন্তু সেই জায়গার সঙ্গে রুক্মিণীর পিতা ভীষ্মকের কোনও সম্পর্ক নেই বলে দাবি। মুখ্যমন্ত্রী পেমা খাণ্ডুও তা স্বীকার করেন। তবে তাঁর যুক্তি, “কিংবদন্তির ঐতিহাসিক বা লিখিত ভিত্তি না থাকতেই পারে। লোককথা মুখে মুখেই ছড়ায়। বর্তমানে অরুণাচল আর বাকি ভারতের যে বিচ্ছিন্নতা রয়েছে, তাকে এক সুতোয় গাঁথতে এই ধরনের লোকগাথাকে বেশি করে তুলে ধরা দরকার।’’ সেই সেতুবন্ধনের জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ধন্যবাদও দেন তিনি।

ইদু-মিসমি সাহিত্য-সংস্কৃতি সমাজের কর্তা রাস্টো মিনা জানান, রুক্মিণীর কাহিনি সাম্প্রতিক সংযোজন, তাই তাকে লোকগাথাও বলা যায় না। রোয়িং সরকারি উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা ১৯৬০-এর দশকে ‘রুক্মিণী হরণ’ নাটক মঞ্চস্থ করেছিল। তখন থেকেই ওই কাহিনি ছড়ায়। কিন্তু তখনই অনেকে তার বিরোধিতা করেন। অবশ্য মিনার মতে, যদি অরুণাচলের সঙ্গে মূল ভূখণ্ডের সাংস্কৃতিক যোগসূত্র বৃদ্ধিতে ওই কাহিনিকে কাজে লাগানো হয়, তাতে আপত্তি নেই।

Arunachal Krishna Mishmi Tribe অরুণাচল মিসমি
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy