ত্রিপুরার কট্টর বাম-বিরোধী মানুষ ক্রমশ কংগ্রেসের কাছ থেকে সরে যাচ্ছে। এবং সরে যাচ্ছে বিজেপির দিকেই। ত্রিপুরার অমরপুর বিধানসভা আসনের উপনির্বাচনের ফলাফল গত কাল সামনে আসার পর এই কথাগুলি ঘুরপাক খাচ্ছে কংগ্রেস মহলে।
অমরপুর উপনির্বাচনে কংগ্রেস দু’নম্বর থেকে শুধু চার নম্বরেই নেমে আসেনি, কংগ্রেস প্রার্থীর জামানতও বাজেয়াপ্ত হয়েছে। দু’নম্বরে উঠে এসেছে বিজেপি। ২০১৩ সালের বিধানসভা ভোটে এই আসনে কংগ্রেস পেয়েছিল ১৫০৫৩টি ভোট। তিন বছরের ব্যবধানে সেই কংগ্রেসের ভোট নেমে এসেছে ১২৩১টি ভোটে। বিজেপি এ বার পেয়েছে ৯৭৫৮ ভোট। ভোটের ফলে কংগ্রেসের থেকে এগিয়ে রয়েছে ত্রিপুরার উপজাতি দল আইপিএফটি। জয়ী অবশ্যই বাম তথা সিপিএম প্রার্থী।
এই ফলাফল দেখে মাথায় হাত প্রদেশ কংগ্রেস নেতাদের। প্রদেশ সভাপতি বীরজিত্ সিংহ থেকে বিরোধী দলনেতা সুদীপ রায়বর্মন, কার্যত এই ফলে বিধ্বস্ত। তাঁরা নিশ্চিত, পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনকে মাথায় রেখে কংগ্রেস-বাম সমঝোতার যে প্রস্তুতি চলছে, তারই প্রতিফলন ঘটেছে কংগ্রেসের এই ফলে। সুদীপবাবুর কথায়, ‘‘কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের ভাবনাচিন্তাকে ত্রিপুরার বাম-বিরোধী মানুষ যে একেবারে খারিজ করে দিয়েছে তা এই ফলেই স্পষ্ট।’’ বামেদের সঙ্গে সমঝোতা করা হলে
তা যে ত্রিপুরার ক্ষেত্রে ‘আত্মহনন’-এর সমান হবে সে কথা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি বীরজিত্ সিংহ আগেই বলেছিলেন।
আজ হতাশ ত্রিপুরা কংগ্রেসের ‘লড়াকু নেতা’ সুদীপ রায়বর্মন ঘোষণা করেছেন, ‘‘আর কংগ্রেসে থাকা সম্ভব নয়। দল ছেড়ে দেব। কোন দলে
যোগ দেব তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করছি।’’ সুদীপের কথায়, রাজ্যের মানুষ কংগ্রেসকে প্রত্যাখ্যান করেছে। এই কথাটা এখনই দিল্লির নেতাদের বুঝতে হবে।
ত্রিপুরার প্রদেশ নেতৃত্বে ‘বিদ্রোহের’ স্পষ্ট আঁচ পাওয়া যাচ্ছে। কংগ্রেস ছাড়ার প্রশ্নে সুদীপ কোনও ঢাকঢাক গুড়গুড় করেননি। স্পষ্টই দল ছাড়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। তাঁর সঙ্গে যে প্রদেশ নেতৃত্বের একটা বড় অংশ বেরিয়ে যাবে সেই ইঙ্গিতও সুদীপ দিয়েছেন। রাহুল গাঁধী যে কৌশলগত রাজনীতির কথা বলছেন, তাকে খারিজ করে দিয়েছেন সুদীপ ও তাঁর অনুগামীরা। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে সিপিএমের সঙ্গে সমঝোতা করব, আর ত্রিপুরায় লড়াই করব, এ কী করে সম্ভব? রাজনীতির ‘নীতি’টা কোথায় গেল?’’ তাঁর কথায়, অমরপুরের ভোটাররা আদর্শহীন রাজনীতিকেই খারিজ করেছেন। সেই কারণেই আর কংগ্রেসে থাকার কথা ভাবছি না।’’ কোন
দলে যাবেন, বিজেপিতে? সুদীপবাবু এর সরাসরি কোনও উত্তর দেননি। তাঁর জবাব, ‘‘যেখানে থেকে সিপিএমের বিরোধিতা করতে পারব, সেখানেই যাব।’’