এটিএম থেকে টাকা তোলার ঊর্ধ্বসীমা বাড়িয়ে সুরাহা দেওয়ার চেষ্টা হল বটে। কিন্তু অর্থ মন্ত্রকের স্থায়ী কমিটির সামনে এসে আজ খোদ রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর কবুল করে নিলেন— পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে, তাঁর জানা নেই। কত পুরনো নোট ফিরেছে, তা-ও জানা নেই। আর ঘোষণার এক দিন আগেও তিনি নোট বাতিল নিয়ে সরকারি সিদ্ধান্তটি জানতেন না।
কিন্তু সব কিছুর মধ্যে নজর কাড়লেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। নিজের দলের সাংসদকে কার্যত থামিয়ে দিয়েই মনমোহন আজ বলেন, ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার উপর যাতে মানুষ আস্থা না হারায়, সেটা দেখতে হবে। সূত্রের খবর, কংগ্রেস সাংসদ দিগ্বিজয় সিংহ উর্জিতকে প্রশ্ন করেছিলেন— রিজার্ভ ব্যাঙ্ক পর্যাপ্ত অর্থের জোগান দিতে পারছে না বলেই কি ২৪ হাজার টাকার ঊর্ধ্বসীমা তোলা হচ্ছে না?
এক তৃণমূল সাংসদ মন্তব্য করেন, এমন হলে তো ব্যাঙ্ক দেউলিয়া হয়ে যাবে! তখনই মনমোহন বলে ওঠেন, এ ধরনের মন্তব্য করা উচিত নয়। এতে ব্যাঙ্কের উপর গ্রাহকের আস্থা চলে যাবে। সূত্রের দাবি, উর্জিতকে মনমোহন বলেন, ‘‘আপনাকে সব প্রশ্নের জবাব দিতে হবে না!’’
গোড়া থেকেই নোট বাতিলের কড়া সমালোচক মনমোহন। তাঁর দলের নেতা রাহুল গাঁধী বলে আসছেন, নরেন্দ্র মোদী রিজার্ভ ব্যাঙ্কের অধিকার ভঙ্গ করে দুনিয়া জুড়ে এই প্রতিষ্ঠানের বদনাম করেছেন। আজ যদিও উর্জিত পটেল বলেছেন— সরকার মে মাস থেকে নতুন নোট ছাপানোর প্রক্রিয়া শুরু করে। কিন্তু রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে ‘পরামর্শ’ পাঠানো হয়েছিল ৮ নভেম্বর ঘোষণার মাত্র এক দিন আগে।
শীর্ষ ব্যাঙ্কের ‘অধিকার ভঙ্গের’ প্রতিবাদে আজও গোটা দেশে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বাইরে ঘেরাও অভিযান করে কংগ্রেস। দলের নেতারা মনে করছেন, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর মনমোহন সিংহ আজ সাংসদদের বাধা দিয়ে আসলে শীর্ষ ব্যাঙ্কের মর্যাদাই রক্ষা করতে চেয়েছেন।
কমিটিতে বিজেপির সাংসদরা অবশ্য মনমোহনের এই পদক্ষেপে খুশি। বিজেপির এক সদস্যের মন্তব্য, ‘‘আগেই ঠিক হয়েছিল, গভর্নর কোনও প্রশ্নের উত্তর দিতে না-চাইলে, তাঁকে জোরাজুরি করা হবে না। মনমোহন সিংহ এ দিন প্রকৃত রাষ্ট্রনায়কের ভূমিকা পালন করলেন।’’ কী পরিমাণ নতুন ৫০০ আর ২০০০ টাকার নোট বাজারে ছাড়া হয়েছে, এ দিন তা অবশ্য জানিয়ে দিয়েছেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর। বলেছেন, ‘‘৯ কোটি ২০ লক্ষ টাকার নতুন ৫০০ এবং ২০০০ টাকার নোট এখনও পর্যন্ত বাজারে ছাড়া হয়েছে।’’ তবে ব্যাঙ্কের গ্রাহক পরিষেবা কবে স্বাভাবিক হবে, তা বলতে পারেননি পটেল। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের অধিকার ভঙ্গের ঘটনা ঘটেছে বলেও মনে করছেন না উর্জিত।
বস্তুত এ দিনই শীর্ষ ব্যাঙ্কের গভর্নর হিসাবে কর্মীদের পাঠানো তাঁর প্রথম চিঠিতে উর্জিত বলেছেন, ‘রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মর্যাদা খর্ব হতে পারে এমন কোনও ঘটনাকেই সহ্য করা হবে না।’ প্রসঙ্গত, নোট নাকচের ঘটনায় ব্যাঙ্কের স্বাধীনতায় কেন্দ্র হস্তক্ষেপ করেছে বলে অভিযোগ করে সম্প্রতি উর্জিতকে চিঠি দিয়েছিলেন সংস্থার কর্মীদের একাংশ।
সংসদীয় কমিটির সদস্য তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় বলেন, ‘‘কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, আর কত টাকা জমা পড়ল— তার জবাব দিতে পারেননি উর্জিত।’’ এত দিন কমিটির সামনে আসতে চাইছিলেন না তিনি। কিন্তু পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান কে ভি টমাস বলেন, প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীকেও ডাকা হতে পারে। তার পরেই উর্জিতের উপর চাপ বাড়ে। পরশু কমিটির সামনে ফের হাজির হবেন উর্জিত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy