বিতর্কে বিচলিত নন জি এইচ যতীশ চন্দ্র। ছবি: সংগৃহীত।
তিন বছর আগের ঘটনা। তখন তিনি এর্নাকুলাম জেলার ডিসিপি। কংগ্রেস সরকারের পুলিশকর্তা হিসেবে তাঁর নির্দেশে লাঠি চলেছিল বিরোধী বামেদের বিক্ষোভে। বিরোধী দলনেতা ভি এস অচ্যুতানন্দন তাঁকে বলেছিলেন ‘রাস্তার গুন্ডা’! বিজেপি তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে বলেছিল, পুলিশ তো আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করবেই।
তিন বছর পরে পুরোপুরি উল্টে গিয়েছে ছবিটা! বাম সরকারের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন তাঁকে শবরীমালার পরিস্থিতি সামলানোর বিশেষ দায়িত্ব দিয়েছেন। আর বিজেপি সমর্থকেরা সামাজিক মাধ্যমে তাঁর মুণ্ডপাত করছেন! কারণ, শবরীমালায় যাওয়ার পথে কেন্দ্রীয় অর্থ প্রতিমন্ত্রী তথা রাজ্যের বিজেপি নেতা পি রাধাকৃষ্ণনের গাড়ি আটকে দিয়েছেন ওই একই আইপিএস!
জি এইচ যতীশ চন্দ্র অবশ্য এখনও বিতর্কে বিচলিত নন। তাঁর সাফ কথা, ‘‘আমায় একটা দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আমি সেটা পালনের চেষ্টা করেছি। আম আদমি হোক বা ভিআইপি, আইন সকলের জন্যই সমান। মন্ত্রীকেও সেটাই বোঝাতে চেয়েছিলাম।’’ তবে ত্রিশূরের পুলিশ কমিশনার যতীশকে নিয়ে কেরলে আম জনতা যথেষ্টই উচ্ছ্বসিত। বিজেপির বিষোদগারের পাল্টা প্রচার শুরু হয়েছে— মন্ত্রী বলে তো নিয়মের ঊর্ধ্বে নন!
কী ঘটেছিল সে দিন? কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাধাকৃষ্ণন যাচ্ছিলেন শবরীমালায়। তাঁর ইচ্ছা ছিল গাড়ি নিয়েই পম্পা পর্যন্ত পৌঁছে মন্দিরে ঢুকবেন। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন যতীশ। মন্ত্রী এবং তাঁর সঙ্গীরা তর্ক জুড়ে দেন। যতীশ বোঝানোর চেষ্টা করেন, একে ভিড় এবং তার উপরে বৃষ্টির জেরে ধসের আশঙ্কা আছে বলে পম্পা পর্যন্ত গাড়ি যেতে দেওয়া হচ্ছে না। মন্ত্রী প্রশ্ন করেন, গেলে কী অসুবিধা আছে? যতীশ পাল্টা জানতে চান, কিছু ঘটলে তার দায়িত্ব কি মন্ত্রী নেবেন? মন্ত্রী জানান, দায়িত্ব তাঁর নয়। যতীশ বলে দেন, দায়িত্ব যখন আমাদের, আপনাদের গাড়ি নিয়ে যাওয়ার দরকার নেই!
যতীশ জানাচ্ছেন, সব দিক বিবেচনা করেই শবরীমালার পূণ্যার্থীদের জন্য সরকারি বাস যাচ্ছে নীলাক্কল পর্যন্ত। মন্ত্রীর জন্য সেই ব্যবস্থার অন্যথা করার কোনও প্রশ্ন ছিল না। তাঁর সংযোজন, ‘‘প্রকৃত ভক্তেরা বিশৃঙ্খলা, গণ্ডগোল চান না। তাঁরা কী বলছেন, তার রেকর্ড আমার কাছে আছে।’’ এরই মধ্যে কেরলের শাসক সিপিএম এবং সিপিআই পুলিশের উপরে বিজেপির ক্ষোভের কথা মাথায় রেখেই শবরীমালা সামালনোর জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনী চাওয়ার কথা ভাবছে। তাদের যুক্তি, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক রাজ্য প্রশাসনের কাছে সতর্ক-বার্তা পাঠিয়েছিল। সেই যুক্তিতেই কেন্দ্রীয় বাহিনী এলে পুলিশ দিয়ে আয়াপ্পা-ভক্তদের উপরে নির্যাতনের অভিযোগ ধোপে টিকবে না! বিজেপি অবশ্য পাল্টা বলছে, কেন্দ্রীয় বাহিনী ডাকলে প্রমাণ হবে রাজ্য পুলিশ ব্যর্থ!
কর্নাটকের দেবেঙ্গারের ভূমিপুত্র, ২০১১ ব্যাচের আইপিএস যতীশ অবশ্যই পুলিশের ব্যর্থতা মানতে নারাজ। উড়িয়ে দিচ্ছেন তাঁর উপরে কোনও চাপের আশঙ্কাও। তাঁর সহাস্য মন্তব্য, ‘‘কেরলের সমাজ সামন্ততান্ত্রিক নয়! এখানে ‘রাজনৈতিক বস’দের কথায় সব সময়ে আমাদের চলতে হয় না!’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy