Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

শবরীমালার প্রশ্নে ‘আংশিক জয়’ দেখছেন ওঁরা

বাবা-মায়ের বকুনি, সমাজের চোখরাঙানি কোনও কিছুরই পরোয়া করেননি। স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে তখন সবে কলেজে ঢুকেছেন। কিন্তু এমন একটা বিষয় নিয়ে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন, যেটা নিয়ে আজও সমাজ সহজে কথা বলতে সঙ্কোচ করে।

   শবরীমালা মন্দির। ফাইল চিত্র

শবরীমালা মন্দির। ফাইল চিত্র

অনমিত্র সেনগুপ্ত
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৩:৫৯
Share: Save:

লড়াইটা যখন শুরু হয়েছিল, তখন তাঁরা ছিলেন একঘরে।

তবু বাবা-মায়ের বকুনি, সমাজের চোখরাঙানি কোনও কিছুরই পরোয়া করেননি। স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে তখন সবে কলেজে ঢুকেছেন। কিন্তু এমন একটা বিষয় নিয়ে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন, যেটা নিয়ে আজও সমাজ সহজে কথা বলতে সঙ্কোচ করে। এমনকি, আজ শবরীমালা নিয়ে শীর্ষ আদালতের রায় ঘোষণার পরেও।

নিকিতা, সমীরার সঙ্গে ছিলেন আরও অনেকে। যাঁদের গড় বয়স ছিল মেরেকেটে কুড়ি। স্যানিটারি ন্যাপকিন নিয়ে প্রকাশ্য আন্দোলন করে কলেজ ক্যাম্পাসে রীতিমতো আলোড়ন ফেলে দিয়েছিলেন তাঁরা। অভিযানের নাম ‘হ্যাপি টু ব্লিড।’ এটাই ছিল তাঁদের লিঙ্গ-বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই। প্রতিবাদের ধাক্কায় এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ার প্রান্তর। নিকিতা আজ লন্ডনে। সমীরা মনস্তত্ত্বের পাঠ নিয়ে বেশ কিছু দিন কাজ করেছেন তিহাড় জেলে। তার পরে ফোটোগ্রাফি নিয়ে পড়াশোনা করেছেন তিনি। এক সময়ে জামিয়ায় আলোড়ন ফেলা দেওয়া মেয়েটি আজ সারাটা দিন কাটালেন অন্তরালে।

সে দিন নাক কুঁচকে প্রশ্ন করেছিল অনেকেই। আজ চার বছর পরে সেই প্রতিবাদী মেয়েগুলো যখন নিজের নিজের বৃহত্তর জীবনের উদ্দেশ্যে ডানা মেলেছেন, তখন শবরীমালার রায়ে আংশিক জয় অন্তত খুঁজে পাচ্ছেন সমাজের চোখে সে দিনের ‘বিদ্রোহীরা’। প্রায় চার বছর আগের আন্দোলনের অন্যতম মুখ হিসেবে উঠে এসেছিলেন নিকিতা আজাদ। তিন বছর পরে আজ সুপ্রিম কোর্ট যখন ঋতুযোগ্য মহিলাদের মন্দিরে প্রবেশের অধিকার দিল, লন্ডনে তখন সবে ভোরের আলো ফুটছে। ঘুম থেকে উঠেই নিকিতা আজাদ দেখেন তাঁর সোশ্যাল মিডিয়ার ওয়ালে আছড়ে পড়েছে অভিনন্দন। ফোনে অসংখ্য মিস্‌ড কল। বর্তমানে অক্সফোর্ডের ছাত্রী রায় নিয়ে জানালেন, ‘‘শুনলাম সব বয়সের মেয়েরাই শবরীমালায় প্রবেশ করতে পারবেন। প্রায় তিন বছর ধরে ‘হ্যাপি টু ব্লিড’ প্রচার চালানোর পরে এবং সুপ্রিম কোর্টে পিটিশন দাখিলের পরে অবশেষে আজ শীর্ষ আদালত ঋতুস্রাব ঘিরে ছুতমার্গকে ছুড়ে ফেলে দেওয়ায় আমাদের (মেয়েদের) সাংবিধানিক সমতা ও সর্বত্র যাওয়ার অধিকার মর্যাদা পেল। আমি আমার মতোই সেই সব মহিলাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি, যারা তাঁদের বাবা-মা, সঙ্গীদের বিরুদ্ধে গিয়ে স্কুল ও কলেজের বিপক্ষে গিয়ে, পথে নেমে সরব হয়েছিলেন। আমাদের লড়াই সবে শুরু হল।’’

শবরীমালা প্রশ্নে শীর্ষ আদালত মেয়েদের পক্ষে রায় দেওয়াকে আজ অভিনন্দন জানিয়েছেন অল ইন্ডিয়া ডেমোক্র্যাটিক উইমেনস অ্যাসোসিয়েশন। সংস্থার পক্ষ থেকে মালিনী ভট্টাচার্য, মরিয়ম দাহবালেরা বলেছেন, ‘‘শারীরিক কারণে কোনও মহিলার পুজোর অধিকার কেড়ে নেওয়া শুধু অসাংবিধানিকই নয়, মর্যাদাহানিকরও।’’ সেই সময়ে আন্দোলনে নিকিতার সঙ্গে যাঁরা ছিলেন, সেই ‘পিঞ্জরা তোড়’ সংগঠনের সদস্যেরা অবশ্য এখনই খুশিতে ভাসতে নারাজ। চাইছেন না মুখ খুলতেও। তাঁরাও মনে করছেন, কেবল প্রথম ধাপ পেরিয়েছে। কিন্তু ঋতুস্রাব ঘিরে সমাজে অনেক ভুল ধারণা রয়ে গিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sabarimala Temple Supreme Court Court
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE