Advertisement
০২ মে ২০২৪

ব্রহ্মচর্য ছেড়ে গার্হস্থ্যে সত্রাধিকার

গার্হস্থ্য বনাম ব্রহ্মচর্য-পরম্পরার দ্বন্দ্বকে সঙ্গী করেই আজ নতুন জীবনে পা রাখলেন মাজুলির ঐতিহ্যশালী গড়মূর সত্রের সদ্য-প্রাক্তন সত্রাধিকার হরিদেব গোস্বামী। ফিরে পেলেন পূর্বাশ্রমের নাম রঞ্জন। সত্রের ৩৬০ বছরের ঐতিহ্য-পরম্পরা ভঙ্গ করে, গোস্বামীই প্রথম সত্রাধিকার যিনি ব্রহ্মচারীর জীবন ছেড়ে বিবাহিত জীবন বেছে নিচ্ছেন। তাঁর বক্তব্য, স্বপ্নাদেশ পেয়েই নাকি ৫৪ বছর বয়সে তাঁর এই ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত।

রাজীবাক্ষ রক্ষিত
গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৫ ০২:৫৫
Share: Save:

গার্হস্থ্য বনাম ব্রহ্মচর্য-পরম্পরার দ্বন্দ্বকে সঙ্গী করেই আজ নতুন জীবনে পা রাখলেন মাজুলির ঐতিহ্যশালী গড়মূর সত্রের সদ্য-প্রাক্তন সত্রাধিকার হরিদেব গোস্বামী। ফিরে পেলেন পূর্বাশ্রমের নাম রঞ্জন। সত্রের ৩৬০ বছরের ঐতিহ্য-পরম্পরা ভঙ্গ করে, গোস্বামীই প্রথম সত্রাধিকার যিনি ব্রহ্মচারীর জীবন ছেড়ে বিবাহিত জীবন বেছে নিচ্ছেন। তাঁর বক্তব্য, স্বপ্নাদেশ পেয়েই নাকি ৫৪ বছর বয়সে তাঁর এই ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত।

এই ঘটনা নিয়ে কার্যত দ্বিখণ্ডিত রাজ্যের বৈষ্ণব সমাজ, সত্রপতিরা। একাংশ মনে করছেন, সত্রাধিকারের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে সাধারণ গৃহী জীবনের তাড়নায় সত্র ত্যাগ করে ঠিক করেননি হরিদেব। সত্র সংস্কৃতির ক্ষেত্রে এর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। অন্য মতে, এ নিতান্তই হরিদেব গোস্বামীর ব্যক্তিগত ব্যাপার। সামগ্রিকভাবে সত্র প্রথায় এর কোনও প্রভাবই পড়বে না। সত্র ত্যাগের পর নিজের পুরনো নাম রঞ্জন গোস্বামীতে ফিরে এসেছেন হরিদেব। আজ শিবসাগর জেলার জাঁজি বামুনগাঁওয়ের বাসিন্দা অঞ্জু খাটানিয়ারের সঙ্গে রঞ্জন গোস্বামীর বিয়ে হয়।

মাজুলি দ্বীপে ১৬৫৬ সালে গড়মূর সত্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। বৈষ্ণব সন্ত শ্রীমন্ত শঙ্করদেবের ভাবাদর্শে চলা অসমে এই সত্র অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদিও শঙ্করদেব নিজে দু’বার বিবাহ করেছিলেন ও পাঁচ সন্তানের পিতা ছিলেন, কিন্তু নিয়ম মতো রাজ্যের অধিকাংশ সত্রের প্রধান বা সত্রাধিকার ব্রহ্মচারী হন। শঙ্কদেবের আদর্শপ্রচার ও সেবা কাজে সম্পূর্ণ ও নিঃস্বার্থ মনোনিবেশ করার জন্যই এমন প্রথার প্রচলন। শিশুকাল থেকে সত্রে মানুষ হওয়া ও শিক্ষিত হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে থেকেই সাধারণত সত্রাধিকারকে বেছে নেওয়া হয়। হরিদেব গোস্বামী অবশ্য পূর্ণ যৌবনকালে, ২৩ বছর বয়সে সত্রে যোগ দিয়েছিলেন। শিক্ষা, মেধা, জনসংযোগ, ধর্মাচরণে তাঁর দক্ষতাই তাঁকে সত্রাধিকার করে তোলে।

কিন্তু, সম্প্রতি সকলকে অবাক করে দিয়ে গোস্বামী বিবাহের ঘোষণা করেন। গত সাড়ে তিন শতকে যে কাণ্ড কেউ করেননি, ৩৩ বছর সত্রের সেবা করার পর গোস্বামী তেমনটা করতে চলায় সত্রে হুলুস্থুল পড়ে যায়। গোস্বামী সত্রের পরিচালন সমিতির বৈঠক ডাকেন। মাজুলির বংশীগোপাল নাট্যমন্দিরের এই সমাবেশে জানান, তিনি স্বপ্নাদেশ পেয়ে গৃহী জীবনে প্রবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সত্রের পদ থেকে পদত্যাগ করে, নিজের পুরনো গ্রামে ফিরে গিয়ে, পুরনো নামে পরিচিত হয়ে তবেই বিবাহপাশে আবদ্ধ হবেন। তাঁর কাজের কোনও প্রভাব সত্রের উপরে পড়বে না। নিজের সব সম্পত্তি, আসবাব, নথি-পুঁথি সত্রের হাতে অর্পণ করেন তিনি।

গত বৃহস্পতিবার হরিদেব গোস্বামী সত্রের সদস্য, শিষ্য ও ভক্তদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে সত্র থেকে বেরিয়ে আসেন। শয়ে শয়ে ভক্ত তাঁকে চোখের জলে বিদায় জানান। অনেকে অবশ্য সেই দিন থেকেই গোস্বামীর সমালোচনায়ও মুখর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE