Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

কাশ্মীরে পুড়ছে একের পর এক স্কুল, উদ্বিগ্ন কেন্দ্রও

এরা যত বেশি পড়ে, তত বেশি জানে, তত কম মানে— হীরক রাজার রাজপাটের সেই মন্ত্রই এখন কাশ্মীর উপত্যকার নয়া বিপদ। স্কুলে যাওয়া, পড়াশোনা করার অভ্যাস থেকে একটি প্রজন্মকে দূরে সরিয়ে রাখতে সেখানে পুড়ছে একের পর এক স্কুল।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:৫০
Share: Save:

এরা যত বেশি পড়ে, তত বেশি জানে, তত কম মানে— হীরক রাজার রাজপাটের সেই মন্ত্রই এখন কাশ্মীর উপত্যকার নয়া বিপদ। স্কুলে যাওয়া, পড়াশোনা করার অভ্যাস থেকে একটি প্রজন্মকে দূরে সরিয়ে রাখতে সেখানে পুড়ছে একের পর এক স্কুল।

সীমান্ত বা নিয়ন্ত্রণরেখায় সেনাবাহিনীর গুলির লড়াই, জঙ্গি অনুপ্রবেশ, উপত্যকায় শহর অচল করা টানা বিক্ষোভ, নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ— নতুন কিছু নয়। কিন্তু এ সবের পাশাপাশি এখন এক নতুন ষড়যন্ত্রের মুখোমুখি ভূস্বর্গ। উপত্যকায় রহস্যজনক ভাবে আগুন লাগছে স্কুল বাড়িগুলিতে। শনি ও রবিবার দক্ষিণ কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলায় দু’টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুড়ে খাক। শনিবার রাতে আগুন লাগানো হয় অনন্তনাগ জেলার জওহর নবোদয় বিদ্যালয়ে। রবিবার সকালে জ্বলল অনন্তনাগের কাবা মার্গে গভর্নমেন্ট হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল। স্কুলে আগুন নেভাতে পৌঁছেছিল দমকল। ছুটে গিয়েছিলেন স্থানীয় মানুষ। তবে বাঁচানো যায়নি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে। বইপত্র, খাতাকলম, নথিপত্র সব কিছু জ্বলেপুড়ে খাক।

এ সব যদিও বিচ্ছিন্ন কোনও ঘটনা নয়। এ নিয়ে দক্ষিণ কাশ্মীরে রহস্যজনক পরিস্থিতিতে স্কুলে আগুন লাগার ঘটনার সংখ্যা দাঁড়াল ২৫! পাকিস্তান-আফগানিস্তানের মতো পড়শি দেশগুলিতে শিক্ষাঙ্গনে হামলার ঘটনা ঘটে থাকে। নারী শিক্ষার বিরোধী হিসেবে পরিচিত তালিবানি জঙ্গিরা। তালিবান মাঝেমধ্যেই উড়িয়ে দেয় সেই সব এলাকার স্কুল। তবে কাশ্মীরে এর ছায়া উদ্বিগ্ন করে তুলছে কেন্দ্র ও উপত্যকার স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসনকে। অনেকেই মনে করছেন, একটা প্রজন্ম যাতে স্কুলের চৌহদ্দির বাইরে থাকে, তার জন্যই যাবতীয় চেষ্টা চলছে।

শ্রীনগর বা উপত্যকার অন্যত্র বিক্ষোভের বিভিন্ন কর্মসূচিতে এত দিন মিছিলের সামনে রাখা হচ্ছিল শিশু-কিশোরদের। নিরাপত্তা বাহিনীর দিকে পাথর ছুড়তে ব্যবহার করা হচ্ছিল তাদের। উদ্দেশ্য স্পষ্ট, এর ফলে শিশু-কিশোরদের সংঘর্ষের শিকার হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। আর তেমন কোনও কিছু হলে তাকে বিরাট ভাবে তুলে ধরা যাবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের মতে, এটা সম্পূর্ণ ভাবেই পাকিস্তানের চক্রান্ত। একটা প্রজন্মকে শিক্ষাঙ্গনের বাইরে রেখে দিতে পারলে তাদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা কঠিন। কিন্তু হাতে বন্দুক তুলে দেওয়া যেতে পারে সহজেই। সেই ষড়যন্ত্রই চলছে কাশ্মীর উপত্যকায়।

সীমান্তে জওয়ানদের দীপাবলি। জম্মুর আর এস পুরা সেক্টরে। ছবি: পি টি আই

কে বা কারা এই ষড়যন্ত্র করছে? অনেকেরই মতে, এটা পাক মদত পুষ্ট জঙ্গিদের নতুন চাল। মূলত রাতের অন্ধকারের সুযোগ নিয়েই হামলাগুলি চালানো হচ্ছে। বাদ পড়ছে না বেসরকারি স্কুলও। জুলাইয়ের শুরুতে হিজবুল কম্যান্ডার বুরহান ওয়ানির মৃত্যুর পর থেকেই ১১২ দিন ধরে বন্ধ উপত্যকার সমস্ত স্কুল-কলেজ। গত মাসে স্কুল খোলার বিষয়ে উদ্যোগী হয়েছিলেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী নইম আখতার। হুরিয়ত নেতা সৈয়দ আলি শাহ গিলানিকে খোলা চিঠি লিখে শিক্ষাকে অশান্তির বাইরে রাখতে আর্জি জানিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তার পরই লস্করের হুমকির মুখে পড়তে হয় তাঁকে। লস্করের মুখপাত্র আবদুল্লা গজনভি শিক্ষামন্ত্রীকে হুমকি দিয়ে বলেন, ‘‘কাশ্মীরের মানুষ যথেষ্ট শিক্ষিত হয়ে গিয়েছে। কোনটা ভাল, কোনটা খারাপ, তাঁরা খুব ভালই জানেন। এ ভাবে জোর করে উপত্যকায় স্কুল খুলতে চাইলে তার ফল ভুগতে হবে মন্ত্রীকে।’’ এর পরে ঘটে চলেছে একের পর এক স্কুল পোড়ানোর ঘটনা। তবে শীর্ষস্থানীয় হুরিয়ত নেতা সৈয়দ আলি শাহ গিলানি স্কুল পোড়ানোর ঘটনার নিন্দা করে বিবৃতি দিয়েছেন। বলেছেন, ‘‘শিক্ষাঙ্গনে আগুন জ্বালিয়েছে যারা, তারা কাশ্মীরের শত্রু।’’

তবে সব থেকে সঙ্কটে পড়েছে ছাত্র-ছাত্রীরা। প্রায় চার মাস ধরে স্কুল বন্ধ। অর্ধেকেরও বেশি সিলেবাস শেষ হয়নি। আগামী ১৫ নভেম্বর থেকে দশম ও ১৪ তারিখ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির বোর্ডের পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা। এর মধ্যেই শ্রীনগর, অনন্তনাগ, বান্দিপোরা, বদগাম, বারামুলা, কুলগাম, সোপিয়ান, পুলওয়ামা, অনন্তনাগে একের পর এক স্কুল পুড়ে ছারখার হয়ে গিয়েছে।

কবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি চালু করা যাবে, তা কেউ জানে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

schools Kashmir
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE