Advertisement
০৪ মে ২০২৪

জোট পরে, দলের জোর বাড়াতে চান ইয়েচুরি

মতাদর্শে বিস্তর ফারাক। কিন্তু নরেন্দ্র মোদী ও সীতারাম ইয়েচুরির অবস্থা এখন অনেকটা একই রকম! দু’জনেই গগনচুম্বী প্রত্যাশার মুখোমুখি। কিন্তু সমস্যা হল, দু’জনেই বুঝতে পারছেন যে, তাঁদের হাতে কোনও জাদুকাঠি নেই!

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:২৩
Share: Save:

মতাদর্শে বিস্তর ফারাক। কিন্তু নরেন্দ্র মোদী ও সীতারাম ইয়েচুরির অবস্থা এখন অনেকটা একই রকম! দু’জনেই গগনচুম্বী প্রত্যাশার মুখোমুখি। কিন্তু সমস্যা হল, দু’জনেই বুঝতে পারছেন যে, তাঁদের হাতে কোনও জাদুকাঠি নেই!

এমন একটা সময়ে ইয়েচুরি সিপিএমের সাধারণ সম্পাদকের পদে বসেছেন, যখন দল তার ৫০ বছরের ইতিহাসে সব চেয়ে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি। কার্যত আইসিইউ থেকে মরণাপন্ন সিপিএমকে বার করে নিয়ে আসার দায়িত্ব ইয়েচুরির কাঁধে! তিনি নিজে জানেন, এর একমাত্র পথ সংগঠনকে চাঙ্গা করে তোলা। যার রাস্তা খুঁজতে চলতি বছরের শেষেই সাংগঠনিক প্লেনাম বসবে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেই প্লেনামের প্রস্তুতি শুরু করে দিতে চাইছেন ইয়েচুরি।

সোমবার বিশাখাপত্তনম থেকে ফেরার পরেই আজ নতুন সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে দিল্লিতে উপস্থিত পলিটব্যুরো সদস্যদের বৈঠক বসেছিল। ঠিক হয়, খুব শীঘ্রই নতুন পলিটব্যুরো ও কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক ডাকা হবে। নতুন কমিটিতে কার কী দায়িত্ব হবে, কে কোন রাজ্য দেখবেন, কাকে কোন গণসংগঠন দেখার দায়িত্ব দেওয়া হবে, তা সেখানেই ঠিক হবে। প্রকাশ কারাটের জমানায় এস রামচন্দ্রন পিল্লাই সংগঠনের দায়িত্বে ছিলেন। এ বার সেই দায়িত্বে অন্য কাউকে নিয়ে আসা হবে বলেই সিপিএম সূত্রের ইঙ্গিত। একই ভাবে গণসংগঠনগুলির দায়িত্বেও বদল হতে পারে। এত দিন ইয়েচুরি নিজেই ছাত্র সংগঠন দেখতেন। যুব সংগঠন দেখতেন এম এ বেবি। সিটুর সর্বভারতীয় সভাপতি এ কে পদ্মনাভন নিজেই পলিটব্যুরোয় রয়েছেন। এ বার কৃষক সভার সাধারণ সম্পাদক হান্নান মোল্লাকেও পলিটব্যুরোয় নিয়ে আসা হয়েছে। তাঁদের অন্য আরও কী দায়িত্ব দেওয়া হবে, তা নিয়েও পলিটব্যুরোয় আলোচনা হবে।

সিপিএমের সামনে সমস্যা এখন একাধিক। একের পর এক পার্টি কংগ্রেসে বারবার দলকে আন্দোলনের পথে নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হলেও কাজের কাজ কিছু হয়নি। সংগঠনের মাত্র ৬.৫% সদস্য এমন রয়েছেন, যাঁদের বয়স ২৫ বছরের নীচে। পশ্চিমবঙ্গে ৩৪ বছরের বাম দুর্গের পতন হয়েছে। কিন্তু তার আগেই জাতীয় স্তরে সিপিএমের অস্তিত্ব সঙ্কট শুরু হয়ে গিয়েছে। ১৯৯১ সালে ৯টি রাজ্য থেকে সিপিএম-সিপিআইয়ের লোকসভায় সাংসদ ছিল। কিন্তু এখন তিনটি রাজ্যের বাইরে কমিউনিস্ট পার্টির কোনও সাংসদ নেই!

দলের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের আশা, এই পরিস্থিতি থেকে দলকে উদ্ধারের পথ দেখাবেন ইয়েচুরি। তাঁর কাছে প্রত্যাশা, তিনি হিন্দি বলয়েও দলের শক্তি বাড়ানোর চেষ্টা করবেন। আঞ্চলিক দলগুলির জাতপাতের রাজনীতির মোকাবিলা করবেন। পশ্চিমবঙ্গে দলকে ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করবেন। দলের বামপন্থী মতাদর্শকে সহজ ও আধুনিক চেহারায় মানুষের কাছে পৌঁছে দেবেন। তরুণ প্রজন্মকে টেনে আনবেন। প্রধানমন্ত্রীর গদিতে বসার পরে মোদীকেও এই পাহাড়প্রমাণ প্রত্যাশার মুখোমুখি হতে হয়েছে। ইয়েচুরির মিশুকে স্বভাব, সব দলের নেতাদের সঙ্গে মধুর সম্পর্ক, নমনীয় মনোভাব তাঁকে সাফল্য দিয়েছে। অল্প শক্তি নিয়েও বিরোধীদের এককাট্টা করে সংসদে সরকারকে বিপদে ফেলেছেন তিনি। কিন্তু সংসদীয় রাজনীতির এই অভিজ্ঞতা সাংগঠনিক ক্ষেত্রে তাঁকে বিশেষ সাহায্য করবে না! গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বও সামলাতে হবে।

ইয়েচুরি সম্পাদক পদে আসার পরে অনেকেই মনে করেন, সিপিএম ফের কংগ্রেস ও জনতা পরিবারের সঙ্গে হাত মেলাবে। কিন্তু ইয়েচুরির যুক্তি, দলের নিজস্ব শক্তি না থাকলে অন্য কারও সঙ্গে নির্বাচনী আঁতাঁতে গিয়ে লাভ নেই। কারণ, কোনও দর কষাকষির সুযোগই দলের থাকবে না! পার্টি কংগ্রেসের মঞ্চ থেকে ইয়েচুরি বারবার একটা কথাই বলেছেন— দলের নিজস্ব শক্তি বাড়াতে হবে। কিন্তু কী ভাবে? কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের কথায়, ‘‘পার্টি কংগ্রেসের আগে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে সীতারাম যে পাল্টা দলিল পেশ করেছিলেন, সেখানেই তিনি দলের ক্যাডার বাহিনী বাড়ানোর উপরে জোর দিয়েছিলেন। প্রত্যেক পার্টি কংগ্রেসেই আমরা সাংগঠনিক দুর্বলতার কথা বলেছি। কিন্তু তার সমাধান খোঁজার চেষ্টা হয়নি। গৃহীত সিদ্ধান্ত রূপায়ণেরও চেষ্টা হয়নি।’’ ইয়েচুরি দায়িত্ব নিয়ে দলের ক্যাডার ভিত্তি বাড়ানো এবং পার্টি কংগ্রেসের যাবতীয় সিদ্ধান্ত রূপায়ণে জোর দেবেন বলেই ওই নেতার মত। সেই অনুযায়ী পলিটব্যুরোয় অন্য সদস্যদের মধ্যে দায়িত্ব বন্টন করবেন তিনি।

সদ্য প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক কারাট এখন পলিটব্যুরোয় কী দায়িত্ব পালন করবেন, তা নিয়েও দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে আগ্রহ তৈরি হয়েছে। এ কে গোপালন ভবনের তিন তলার কোণে সাধারণ সম্পাদকের ঘরটি তিনি ইয়েচুরিকে ছেড়ে দিয়েছেন। হরকিষেণ সিংহ সুরজিৎ সাধারণ সম্পাদক থাকাকালীন তিনি যে ঘরে বসতেন, আবার সেই ঘরটিই নিজের জন্য বেছে নিয়েছেন কারাট। এত দিন যেটি ছিল কে বরদারাজনের দখলে। এ বার নিজের জন্য কারাট কী দায়িত্ব বেছে নেন, সেটাই দেখার!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE