Advertisement
০৬ মে ২০২৪

উড়ালপুলের মানচিত্র আঁকল শিলচর

শিলচরে উড়ালপুল! পুর নির্বাচনের ইস্তাহারে চমক দেওয়ার চেষ্টা করেছিল বিজেপি। প্রতিশ্রুতির বহর দেখে হাসাহাসি করেন স্থানীয় ইঞ্জিনিয়ারও।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলচর শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:০৭
Share: Save:

শিলচরে উড়ালপুল!

পুর নির্বাচনের ইস্তাহারে চমক দেওয়ার চেষ্টা করেছিল বিজেপি। প্রতিশ্রুতির বহর দেখে হাসাহাসি করেন স্থানীয় ইঞ্জিনিয়ারও। পুরবোর্ড গড়ার পর চেয়ারম্যান নীহারেন্দ্র নারায়ণ ঠাকুরকে যত বার এ নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছে, মুখ টিপে হেসেছেন শুধু। বিজেপির জেলা নেতারাও এড়িয়ে গিয়েছেন এ সংক্রান্ত জিজ্ঞাসা।

এ বার বাজেট পেশ করতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা ঘোষণা করলেন, শুধুই নির্বাচনী চমক নয়, সরকার শিলচরে উড়ালপুল নির্মাণ করবে। হিমন্তবাবুর আগেই অবশ্য এর সম্ভাবনা খতিয়ে দেখে ‘প্রেরণা’ সংগঠন। ৬ মাস ধরে সমীক্ষা চালিয়েছে তাঁরা। প্রস্তুত করেছে প্রস্তাবিত ফ্লাইওভারের স্কেচ-ড্রয়িং।

আজ সেই সমীক্ষা রিপোর্ট এবং স্কেচ-ড্রয়িং আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রকাশ করে প্রেরণার সভাপতি সুমন বিশ্বাস ও সাধারণ সম্পাদক সৌমিত্র চক্রবর্তী জানান, মূলত যানজট নিরসনের উপায় বের করতেই সমীক্ষায় নেমেছিলেন তাঁরা। তাতে ধরা পড়ে, সকাল ১০টা থেকে ১১টা সব চেয়ে বেশি যানজট হয় তারাপুর এলাকায়। একই জায়গায় ট্রাফিক সমস্যা দেখা দেয় সন্ধ্যা সাড়ে ৫টা থেকে রাত ৭টা পর্যন্ত। প্রেমতলায় যান-ভিড় মারাত্মক চেহারা নেয় সন্ধ্যা ৫টা থেকে ৬টা পর্যন্ত। তা থেকে রেহাইয়ের কোনও উপায় নেই। বড় গাড়ির চলাচল শহরে বন্ধ অনেক দিন ধরে। ওয়ান-ওয়ে এখন প্রায় গোটা শহর। কিন্তু সমস্যা থেকে মুক্তি নেই। বরং দিন দিন তা বাড়বে। প্রেরণার সমীক্ষায় ধরা পড়ে— ছোট-বড় গাড়ি, মোটর সাইকেল মিলিয়ে দিনে জেলায় ১৫০ গাড়ির নতুন রেজিস্ট্রেশন হচ্ছে। সব দেখে সুমনবাবুদের মনে হয়েছে, উড়ালপুল ছাড়া বিকল্প কিছু নেই।

শুরু হয় সমীক্ষার দ্বিতীয় পর্ব। তাতে নেতৃত্ব দেন প্রেরণার সহকারী সম্পাদক পরীক্ষিৎ দত্তচৌধুরী। পেশায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। অন্যান্যদের সঙ্গে নিয়ে রাস্তার বিভিন্ন জায়গার প্রস্তের পরিমাপ নেন। এ দিন তিনি জানান, উড়ালপুলের কথায় সাধারণ জনতার হাসাহাসির কারণ, সেতু না হয় উপরে তৈরি হয়ে গেল। সেটি কোথায় নামবে! নামানোর জন্য যে বিশাল স্তম্ভ নির্মাণ করতে হবে, শহরের রাস্তায় সে জায়গা কোথায়! পরীক্ষিতবাবু সেই জায়গাটাই প্রথম খুঁজে বেড়ান। ফলাফল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘একটি নয়, তিনটি উড়ালপুল নামানোর জায়গা রয়েছে শিলচরে। বাজেটে যে ভাবে তারাপুর থেকে প্রেমতলা হয়ে রাঙ্গিরখাড়ি পর্যন্ত উড়ালপুল তৈরির প্রস্তাব রাখা হয়েছে, তাতে বিশেষ লাভ হবে না।’’ পরীক্ষিতবাবুর প্রস্তাব, তারাপুরে এখন যেখানে রেলের উড়ালপুল রয়েছে, সেখান থেকেই শুরু করতে হবে নতুন উড়ালপুল। ৮০০ মিটার দূরে ইন্ডিয়া ক্লাবে গিয়ে শেষ হবে সেটি। সেখানে দু’দিকে শহরে নামার সুযোগ মিলবে। একটি চক্ষু হাসপাতালের সামনে, অন্যটি ট্রাঙ্ক রোডে। দ্বিতীয় উড়ালপুলটি হবে ৫৪০ মিটার। সদরঘাটের ট্যাক্সিস্ট্যান্ড থেকে সেন্ট্রাল রোড ও পার্ক রোডের সংযোগস্থলে গিয়ে সেটি শেষ হবে। তৃতীয়টি হওয়া চাই বৃহত্তম। নরসিংটোলা পয়েন্ট থেকে অম্বিকাপট্টি রোড, প্রেমতলা, হাসপাতাল রোড হয়ে রাঙ্গিরখাড়ি পৌঁছবে। দেড় কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সেতুতে মাঝপথে অম্বিকাপট্টি, রাধামাধব রোড ও সোনাই রোডে নামার ব্যবস্থা থাকবে।

প্রেরণার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সমস্ত রিপোর্ট প্রধানমন্ত্রী, ভূতল পরিবহণ মন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী ও পূর্তমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। উড়ালপুল নিয়ে সরকারি স্তরে তৎপরতা শুরু হলে ওই রিপোর্ট প্রাথমিক কাজে সহায়ক হবে বলেই আশা করছেন। তাঁদের কাজকর্ম উড়ালপুলের বাস্তবায়নকে ত্বরান্বিত করবে বলেই দাবি প্রেরণা-কর্তাদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sketching Flyover Silchar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE