Advertisement
E-Paper

মোদী যা খুশি বলুন, উড়িয়ে দিচ্ছেন সনিয়া

কংগ্রেস নেতৃত্বকে খোঁচা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কাল বলেছিলেন, ‘‘কারও কারও খামখেয়ালিপনা ও মর্জিতেও এখন অচল থাকছে সংসদ। পণ্য পরিষেবা বিল (জিএসটি) বলে নয়,আসল কথা মানুষের স্বার্থের সঙ্গে জড়িত বিলগুলি পাশ হচ্ছে না।’’

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৩:১২

কংগ্রেস নেতৃত্বকে খোঁচা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কাল বলেছিলেন, ‘‘কারও কারও খামখেয়ালিপনা ও মর্জিতেও এখন অচল থাকছে সংসদ। পণ্য পরিষেবা বিল (জিএসটি) বলে নয়,আসল কথা মানুষের স্বার্থের সঙ্গে জড়িত বিলগুলি পাশ হচ্ছে না।’’ রাত পোহাতেই প্রধানমন্ত্রীর সেই কটাক্ষ তাচ্ছিল্যের সঙ্গে উড়িয়ে দিলেন সনিয়া গাঁধী। বললেন, ‘‘উনি যা পারেন বলুন!’’ আর রাহুল গাঁধী সরাসরি রাজনৈতিক চক্রান্তের অভিযোগ আনলেন প্রধানমন্ত্রীর দফতরের বিরুদ্ধে।

যার অর্থ একটাই। ললিত মোদী কাণ্ডে কংগ্রেসের বিরোধিতায় কার্যত ধুয়ে গিয়েছিল সংসদের বাদল অধিবেশন। এ বার ন্যাশনাল হেরাল্ড বিতর্কে শীতঘুমে যাওয়ার পথে সংসদের শীতকালীন অধিবেশন। কৌশলগত কারণে কংগ্রেস ঠিক করেছে তারা আর সংসদে ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলা নিয়ে সরব হবে না। কিন্তু একই সঙ্গে তারা এটাও স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, সোমবার থেকে সংসদে বিক্ষোভের তীব্রতা তারা বাড়াবে বই কমাবে না। ছুটির দিনগুলি বাদে এ বারের অধিবেশনের আর সাত দিন বাকি। অর্থাৎ চলতি অধিবেশনে কোনও বিল পাশ হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে।

জিএসটি নিয়ে চেষ্টা অবশ্য অব্যাহতই রেখেছে সরকার। বিলটি নিয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে আলোচনার জন্য সোমবার বৈঠক ডেকেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। কিন্তু ঘরোয়া আলোচনায় কংগ্রেস নেতারা যে মনোভাব দেখাচ্ছেন, তাতে এটা পরিষ্কার যে ন্যাশনাল হেরাল্ড বিতর্কের পর এখন জিএসটি বিল নিয়ে আর কোনও আপসে রাজি নন তাঁরা। জিএসটি-র সর্বোচ্চ হার ১৮%-এ বেঁধে দেওয়ার শর্ত না মানলে তাঁরা বিলে সম্মতি দেবেন না।

কংগ্রেসের কৌশল নির্ধারণের বৈঠকে আজ সকালে সিদ্ধান্ত হয়েছে, সংসদে তারা ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলা নিয়ে সরব হবে না। এই মামলায় সনিয়া ও রাহুল-সহ কংগ্রেসের ছ’জন নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। কংগ্রেস নেতারা মনে করছেন, সংসদে এ নিয়ে সরব হলে বিজেপি প্রচার করবে যে, সনিয়া-রাহুলের ব্যক্তিগত সঙ্কটের জন্যই সংসদ অচল করা হচ্ছে। যে কারণে এ দিনের বৈঠকে স্থির হয়েছে, ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলা নিয়ে যা কিছু করা ও বলা হবে সংসদের বাইরে। সংসদে ও বাইরে বিজেপিকে চেপে ধরা হবে ব্যপম ও অন্যান্য প্রসঙ্গে। এই কৌশলের অঙ্গ হিসেবেই ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলা দিয়ে এ দিন গুয়াহাটিতে মুখ খোলেন কংগ্রেস সহসভাপতি। রাহুল বলেন, ‘‘আইনের প্রতি দলের আস্থা আছে। দল আইন মেনেই পদক্ষেপ করবে। তবে এই ঘটনার পিছনে রাজনৈতিক চক্রান্ত রয়েছে। এবং প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে কলকাঠি নাড়া হচ্ছে।’’ এরই সঙ্গে সংসদে চেপে ধরার আগে কংগ্রেস আজ ফের ব্যপম কাণ্ডে মধ্যপ্রদেশে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে শিবরাজ সিংহ চৌহান ও ললিত কাণ্ডে রাজস্থানে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে বসুন্ধরা রাজে ও বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের ইস্তফার দাবিতে সরব হয়। ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলায় সনিয়াকে আদালতে সমন করা নিয়ে কংগ্রেসের ক্ষোভকে কটাক্ষ করে জেটলি কাল বলেছিলেন, ‘‘রানিও আইনের ঊর্ধ্বে নন।’’ সেটাকেই অস্ত্র করে কংগ্রেস মুখপাত্র আজ বলেন, ‘‘খাঁটি কথা বলেছেন জেটলি। এবং এই কারণেই বসুন্ধরা ও সুষমাকে তাঁদের পদ থেকে সরানো উচিত।’’

কংগ্রেসকে এটাও ভাবতে হচ্ছে যে, এ বারও জিএসটি বিল পাশ না হলে কংগ্রেসকে সংস্কার ও উন্নয়নের বিরোধী বলে প্রচার চালাবে বিজেপি। তাই পাল্টা ব্যবস্থাও নিতে নেমেছেন গুলাম নবি আজাদ, আনন্দ শর্মারা। অতীতে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মোদী জিএসটি বিলের বিরোধিতায় যা যা বলেছিলেন সেগুলি পোস্টারে লিখে সংসদে তুলে ধরার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কংগ্রেস। জিএসটি-র সীমা ১৮%-এ বেঁধে দেওয়ার যে দাবি রাহুল তুলছেন, তা নস্যাৎ করতে বিজেপি বলে যাচ্ছে, এটি সংবিধান সংশোধনী বিল। সংবিধানে করের সীমা বেঁধে দেওয়া যায় না। কংগ্রেস মুখপাত্র সুস্মিতা দেব দাবি করেন, এটা জরুরি, কারণ, তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে অনেক কমে যাওয়ার পরেও এই সরকার মানুষকে তার সুবিধা পেতে দেয়নি বাড়তি কর চাপিয়ে। এই সরকারকে বিশ্বাস নেই।

এটা স্পষ্ট, কংগ্রেস এমন সর্বাত্মক বিরোধের নীতি নিয়ে চললে সংসদ অধিবেশনের বাকি দিনগুলি কার্যত জলেই যাবে। অথচ এ বারের অধিবেশন এ ভাবে ভন্ডুল হওয়ার কথা ছিল না। অধিবেশন শুরু হওয়ার ঠিক আগে আগের অবস্থান থেকে সরে এসে প্রধানমন্ত্রী বিরোধী নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। কংগ্রেসেরও মনোভাব ছিল, সংসদে অসহিষ্ণুতা বিতর্কে প্রধানমন্ত্রীকে ভাল রকম কোণঠাসা করার পরে জিএসটি বিলে সহযোগিতাই করবে দল। কিন্তু অসহিষ্ণুতা বিতর্ক থেকে দলের তেমন কোনও রাজনৈতিক ফায়দা হয়নি। ভি কে সিংহ, মহেশ শর্মাদের মতো কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের মন্তব্যের জন্য সরকার তাঁদের নিন্দাটুকুও করেনি। তাই কংগ্রেস ফের বিক্ষোভ দেখানো শুরু করে। তার মধ্যেই চলে আসে ন্যাশনাল হেরাল্ড বিতর্ক।

এর ফলেই শীত জাঁকিয়ে বসার আগেই শীতঘুমে যেতে বসেছে সংসদের শীত অধিবেশন।

sonia gandhi narendra modi attack no interest
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy