Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
JNU

JNU: বিদ্বেষ বিতর্কে জেএনইউয়ের নয়া উপাচার্যও

মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বাম রাজনীতির আঁতুড়ঘর বলে পরিচিত জেএনইউ বারবার শাসক শিবিরের নিশানার মুখে পড়েছে।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৬:০১
Share: Save:

তাঁর নামের টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে আন্দোলনকারী কৃষকদের ‘পরজীবী’ বলা হয়েছিল। অভিযোগ তোলা হয়েছিল, দিল্লির আইআইটি ও জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে (জেএনইউ) ‘জেহাদি’ তৈরি হয়। নিন্দা করা হয়েছিল দিল্লির সেন্ট স্টিফেন্স কলেজ ও জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের। জেএনইউয়ের পড়ুয়াদের ‘হেরো’ বলা হয়েছিল। ‘মহাত্মা গান্ধীর মতো নাথুরাম গডসের সঙ্গেও আমি একমত হতে পারি’ বলে মন্তব্য ছিল তাঁর অ্যাকাউন্টে। সেই শান্তিশ্রী ধুলিপুড়ি পণ্ডিতকেই সোমবার জেএনইউয়ের নতুন উপাচার্য হিসাবে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রক।

শান্তিশ্রী এখন পুণের সাবিত্রীবাই ফুলে বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক। তিনি নিজেও জেএনইউয়ের প্রাক্তনী। সেখান থেকেই এমফিল ও পিএইচডি করেছেন। তাঁর গবেষণার বিষয়: নেহরুর আমলে ভারতের সংসদ ও বিদেশনীতি। কিন্তু গত কয়েক বছরে বিজেপিকে সমর্থনের পাশাপাশি তাঁর নামের টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে জেএনইউয়ের পড়ুয়া, শাহিন বাগের আন্দোলনকারী, প্রতিবাদী কৃষকদের কুৎসিত ভাষায় আক্রমণ করা হয়েছে। আজ শান্তিশ্রীকে জেএনইউয়ের উপাচার্য পদে নিয়োগের পর থেকেই এ নিয়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, তার পরেই ওই টুইটার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। শান্তিশ্রী এ নিয়ে মুখ খুলতে চাননি। তবে ওই টুইটার অ্যাকাউন্ট তাঁর নয় বলেও দাবি করেননি।

মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বাম রাজনীতির আঁতুড়ঘর বলে পরিচিত জেএনইউ বারবার শাসক শিবিরের নিশানার মুখে পড়েছে। কখনও পড়ুয়াদের ‘অ্যান্টি-ন্যাশনাল’ বলা হয়েছে। কখনও ‘টুকরে টুকরে গ্যাং’। গত ছ’বছর ধরে মোদী সরকারের নিযুক্ত উপাচার্য এম জগদীশ কুমারের আমলেও তাঁর বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করার অভিযোগ উঠেছে। তাঁর সময়ে পড়ুয়াদের একাংশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা পর্যন্ত হয়েছে। কেন্দ্র গত সপ্তাহে জগদীশ কুমারকে ইউজিসি-র চেয়ারম্যান নিযুক্ত করেছে। যার পরে জেএনইউয়ের ছাত্র সংসদের সভানেত্রী ঐশী ঘোষ বলেছিলেন, জেএনইউয়ের পরে এ বার জগদীশকে ইউজিসি-কে ধ্বংস করার দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হচ্ছে।

আজ জগদীশের উত্তরসূরি হিসাবে শান্তিশ্রীর নাম ঘোষণার পরে ইতিহাসবিদ এস ইরফান হাবিব বলেন, ‘‘ভয়ঙ্কর সিদ্ধান্ত। টুইটারে জেএনইউয়ের নতুন উপাচার্য গণহত্যাকে সমর্থন করছেন। চাষি, পড়ুয়াদের নিশানা করছেন। এখন জেএনইউয়ের যেটুকু যা বাকি রয়েছে, তা (শেষ করার) দায়িত্ব নেবেন।’’ আমেরিকার রাটগার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক অধ্যাপক অড্রে ট্রুশকের মন্তব্য, ‘‘ভারতের হিন্দু জাতীয়তাবাদী শাসকেরা কী ভাবে দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলি ধ্বংস করছেন, তা দেখলে খুব দুঃখ হয়। এতে শিক্ষাগত জ্ঞানের কোনও হেরফের হয় না। কিন্তু ভারত ক্রমাগত শিক্ষার জগৎ থেকে হারিয়ে যায়। এ আমাদের সকলের কাছে ক্ষতি।’’

জেএনইউয়ের প্রাক্তন ছাত্র-নেত্রী কবিতা কৃষ্ণণের বক্তব্য, ‘‘মোদী জমানার নতুন উপাচার্যের টুইটার হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠতার মানসিকতা থেকে মুসলিম, খ্রিষ্টানদের তৈরি প্রতিষ্ঠানের প্রতি বিদ্বেষে ভর্তি। উনি সক্রিয় ভাবে জেএনইউকে ঘৃণা করেন।’’

শান্তিশ্রী অবশ্য বিবৃতিতে জানিয়েছেন, পড়ুয়াদের জন্য পড়াশোনার ঠিক আবহ গড়ে তোলা তাঁর অগ্রাধিকারে থাকবে। একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর চিন্তা-ভাবনা অনুযায়ী জাতীয় শিক্ষানীতি রূপায়ণে পদক্ষেপ করবেন তিনি। নজর দেবেন ভারত-কেন্দ্রিক ভাষ্য গড়ে তোলার দিকেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

JNU
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE