রাস্তায় চলছে খেলা। শুক্রবার করিমগঞ্জের স্টেশন রোডে।— নিজস্ব চিত্র।
এনআরসি সংশোধনকে কেন্দ্র করে ডাকা বরাক বন্ধে প্রত্যাশিত সাড়া দিল করিমগঞ্জ জেলা। বরাক নাগরিকত্ব সুরক্ষা কমিটির ডাকা বন্ধে আজ করিমগঞ্জের জনজীবন স্তব্ধ হয়ে যায়। বন্ধ ছিল যানবাহন, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, ব্যাঙ্ক, স্কুল-কলেজ। সরকারি অফিস-কাছাড়ি খোলা থাকলেও সেখানে উপস্থিতি প্রায় ছিলই না। ছোটখাটো দু’-একটি ঘটনা বাদ দিলে বন্ধে জনজীবন শান্তিপূর্ণই ছিল।
সুরক্ষা সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক অরুণাংশু ভট্টাচার্য বলেন, আজকের বন্ধ মূলত ছ’টি দাবিকে সামনে রেখে ডাকা হয়েছে। দাবিগুলি হল: নাগরিকত্ব আইনের ৪ নম্বর ধারা অনুযায়ী সারা ভারতবর্ষে যে ভাবে নাগরিকত্ব প্রণয়ন করা হয় অসমেও সে ভাবেই করতে হবে। ডাউটফুল বা ডি-ভোটার সমস্যার সমাধান করে এনআরসি প্রণয়ন করতে হবে। শুধু ১৬টা নথি নয়—এ ছাড়াও অন্যান্য প্রামাণ্য নথি থাকলে তাকে মান্যতা দিতে হবে। জাতীয় নেতৃত্বের প্রতিশ্রুতি-সহ রাষ্ট্রীয় দায়বদ্ধতায় বিদেশি সমস্যার সমাধান। ভিন রাজ্য থেকে আসা মানুষ, যাঁরা স্থায়ী ভাবে অসমে বসবাস করছেন, তাঁদের নাম এনআরসিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। অসমে দীর্ঘ দিন বসবাস করছেন অথচ কোনও নথিতে যাঁদের নাম নেই তাঁদের ক্ষেত্রে প্রতিবেশীদের সাক্ষ্যের ভিত্তিত্তে নাগরিকত্ব প্রদান করতে হবে।
সকালের দিকে করিমগঞ্জ শহরের রাস্তায় কিছু গাড়ি চলাচল করলেও আন্দোলনকারীরা সেগুলিকে আটকে দেয়। জেলার পাথারকান্দি, আছিমগঞ্জ, রাতাবাড়ি, বাজারঘাট, আনিপুর, রামকৃষ্ণনগর, বদরপুরেও বন্ধের ব্যাপক প্রভাব দেখা যায়। বন্ধকে সফল করতে আন্দোলনকারীরা রাস্তায় থাকলেও সংখ্যায় তারা খুব বেশি ছিল না। করিমগঞ্জের মানুষ স্বতস্ফুর্তভাবেই এই বন্ধকে স্বাগত জানান। ফলে জেলাসদরের স্কুল-কলেজ, বাজারহাট, দোকানপাট, যানবাহন বন্ধই ছিল।
তবে জেলাশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবরোধ তৈরি করতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হয় আন্দোলনকারীদের। আন্দোলনকারীদের সংখ্যা কম থাকায় কিরণশঙ্কর ভট্টাচার্য-সহ আরও দু-একজন আন্দোলনকারী করিমগঞ্জের সিজেএমের কার্যালয় চত্বরে এক ফার্স্ট ক্লাস ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়ির সামনে শুয়ে পড়েন। সে সময় সেখানে এএসপি নবীন সিংহ, ডিএসপি রণবীর শর্মা, ওসি ডিম্বেশ্বর ঠাকুরিয়া-সহ প্রায় শতাধিক সশস্ত্র পুলিশকর্মী দাঁড়িয়েছিল। তাঁরাও সঙ্গে সঙ্গে আন্দোলনকারীদের টেনে গাড়ির সামনে থেকে সরিয়ে আনেন। এই টানাহেঁচড়া ঘিরে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের বচসা শুরু হয়। তাঁদের কথায় বন্ধ সাংবিধানিক। ফলে আন্দোলন করাটা অবৈধ নয়। সদর থানার ওসি সঙ্গে সঙ্গেই জানান, বন্ধ কোনও দিনই সাংবিধানিক নয়। তা ছাড়া ন্যায় দণ্ডাধীশের গাড়ির সামনে শুয়ে পড়া সরকারি কাজে বাধা দানেরই সামিল। পুলিশ ইচ্ছে করলে আন্দোলনকারীদের জামিনঅযোগ্য ধারায় গ্রেফতার করতে পারে।
এ নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে তুমুল বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। পরে কিছু আন্দোলনকারীকে গ্রেফতার করে ‘অস্থায়ী থানা’-য় নিয়ে যাওয়া হয়। করিমগঞ্জের সরকারি স্কুলের খেলার মাঠে, এই অস্থায়ী থানায় আন্দোলনকারীদের রাখা হলে সেখানেও তাঁরা স্লোগান দিতে থাকেন। তাঁদের দাবি গ্রেফতার করে মূল থানায় না নিয়ে মাঠের গ্যালারিতে রেখে আন্দোলনকারীদের সম্মানহানী করা হচ্ছে। এরপর চা এবং পানীয় জলের দাবিতে সরব হন আন্দোলনকারীরা। প্রায় ২৯ জন আন্দোলনকারীকে গ্রেফতার করে পরে ব্যক্তিগত জামিনে ছেড়ে দেওয়া হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy