Advertisement
১৯ মে ২০২৪

এলাকায় দীর্ঘমেয়াদি কাজ চান জায়েন্ট-কিলার সুজাম

বাবা বিধায়ক ছিলেন বলে ছেলেবেলা থেকেই রাজনীতির মারপ্যাঁচ দেখে বড় হয়েছেন। পরে অভিজ্ঞতা বাড়ান গৌতম রায়ের হাত ধরে। তাই রাজনীতির মারপ্যাঁচে দক্ষ হতে খুব বেশিদিন সময় লাগেনি সুজামুদ্দিন লস্করের। ভোটের রাজনীতিতে প্রথমে জেলা পরিষদ সদস্য হন।

অমিত দাস
হাইলাকান্দি শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:৪৮
Share: Save:

বাবা বিধায়ক ছিলেন বলে ছেলেবেলা থেকেই রাজনীতির মারপ্যাঁচ দেখে বড় হয়েছেন। পরে অভিজ্ঞতা বাড়ান গৌতম রায়ের হাত ধরে। তাই রাজনীতির মারপ্যাঁচে দক্ষ হতে খুব বেশিদিন সময় লাগেনি সুজামুদ্দিন লস্করের। ভোটের রাজনীতিতে প্রথমে জেলা পরিষদ সদস্য হন। স্বাভাবিক ভাবে পরবর্তী লক্ষ্য ছিল গুয়াহাটি। লক্ষ্য-পূরণ করে এবং একদা রাজনৈতিক গুরুকেই পরাজিত করে সুজামবাবু এখন কাটলিছড়ার বিধায়ক।

জেলা পরিষদ থেকে বিধায়ক হওয়ার ঘটনা হাইলাকান্দিতে নতুন নয়। গৌতম-তনয় রাহুল রায়ও জেলা পরিষদ থেকে একবার বিধায়ক হয়েছেন। আলগাপুরের নতুন বিধায়ক নিজামউদ্দিন চৌধুরীও ছিলেন জেলা পরিষদের সদস্য। তবু সুজামবাবুই বিশেষ ভাবে আলোচনায় উঠে এসেছেন। কারণ যাঁর হাত ধরে রাজনীতিতে তিনি জায়গা করে নিয়েছিলেন, তাঁকেই হারিয়ে এ বার বিধায়ক হয়েছেন। কাটলিছড়া আসনে তিনি পরাস্ত করেন ছ’বারের বিধায়ক তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী গৌতম রায়কে। তিনিই তাঁকে কংগ্রেস রাজনীতির আঁটঘাট চিনিয়েছিলেন। তাঁর স্ত্রী ফারহানা বেগমকেও একবার জেলা পরিষদ সদস্য করেছিলেন। তাঁর বিশ্বাসভাজন হওয়ার সুবাদে জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেছিলেন সুজামুদ্দিন লস্কর।

কিন্তু এ বার ভোটের ঢাকে কাঠি পড়তেই ছবি বদলাতে শুরু করে। গৌতম রায়ের এক সময়ের ডান হাত হিসাবে পরিচিত সুজামুদ্দিন লস্করকে কাটলিছড়ায় টিকিট দেয় এআইইউডিএফ। জয়ের চারমাস পর সেই সুজামবাবু ‘রাজনৈতিক গুরুকে’ হারানো প্রসঙ্গে বললেন, ‘‘পিতার পরাজয়ের বদলা নিলাম।’’ ১৯৮৫ সালে তাঁর পিতা, দু’বারের বিধায়ক তজমুল আলি লস্করকে হারিয়েই কাটলিছড়া থেকে প্রথম কংগ্রেসের টিকিটে নির্বাচিত হয়েছিলেন গৌতম রায়। তারপর নাগাড়ে ছ’বার জিতেছেন। চারবার মন্ত্রীও হন। প্রতিবার তাঁর জয়ের জন্য ‘নিয়ম-অনিয়মে’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতেন এই সুজামবাবুই।

তবে এ বার বিধায়ক হতেই তাঁর রাজনৈতিক পরিপক্কতার প্রমাণ মিলতে শুরু করেছে। রাজনীতি ও রাজনীতির বাইরের বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে জানালেন, কাজের গতিপ্রকৃতি ও নিজের ভবিষ্যত পরিকল্পনা। হেভিওয়েট নেতাকে হারিয়ে বিজয়ী হওয়ার পর মানুষের চাহিদা কী ভাবে তাঁকে চাপের মুখে ফেলেছে, সে কথাও জানিয়েছেন অকপটে।

নির্বাচনের প্রার্থী থেকে এখন বিধায়ক, কী পার্থক্য অনুভব করছেন? প্রশ্ন শুনে একটু গুছিয়ে বসলেন সুজামুদ্দিন লস্কর। ধীর-স্থির জবাব দিলেন, ‘‘যখন প্রার্থী ছিলাম যেমন খুশি বিপক্ষের সমালোচনা করেছি, যত খুশি প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। এখন আমি বিধায়ক, একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। তাই অনেক মেপে কথা বলতে হচ্ছে। সেই সঙ্গে বিধায়কের দায়িত্বও তো কম নয়!’’

তবে পঞ্চায়েত রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে নিজেকে গুছিয়ে নিতে তাঁর অসুবিধা হচ্ছে না বলেই জানালেন কাটলিছড়ার নতুন বিধায়ক। এর ওপর বাবা ছিলেন দু’বারের বিধায়ক। সেটাও তাঁর কাজে এসেছে। সুজামবাবুর কথায়, ‘‘ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতিকে ভালবাসতাম। বাবা বরাবর কংগ্রেস-বিরোধী রাজনীতি করতেন। পরিস্থিতি বিবেচনা করে পরে আমি কংগ্রেসের ছত্রচ্ছায়ায় ঢুকে পড়ি।’’

তবে গৌতম রায় হাত ধরে তাঁকে কংগ্রেস রাজনীতিতে জায়গা করে দিয়েছেন, এ কথায় আপত্তি রয়েছে সুজামুদ্দিনের। বললেন, ‘‘কাটলিছড়ার জনমানসে বাবার বিপুল প্রভাবকে কাজে লাগাতে কৌশলে তিনি আমাকে নিজের দিকে টেনেছিলেন।’’ সেই সঙ্গ ছাড়লেন কেন? সামান্য সময়ের জন্য থমকে গেলেন ‘জায়েন্ট কিলার’ বিধায়ক। ভাবলেন, তারপর বললেন, ‘‘হাইলাকান্দি কংগ্রেসে এমন অনেক নেতা-কর্মী ছিলেন বা আছেন, যাঁদের কোনও দিন হাত খুলে ব্যাটিং করার সুযোগ দেওয়া হয়নি। আমাকেও বোতল-বন্দি করে ফেলা হয়েছিল। আমি সেই কূট রাজনীতির জাল ছিঁড়ে বেরিয়ে আসতে পেরেছি।’’ এই কাজ তার আরও অনেক আগে করা উচিত ছিল বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

কিন্তু গৌতম রায়ের তিন দশকের সাম্রাজ্য দখল কি চাট্টিখানি কথা? বিচক্ষণ নেতার মতোই সুজামবাবু বলেন, ‘‘প্রথম থেকে আমি বুথ-ভিত্তিক ভোটারদের দিকে লক্ষ্য রেখেছিলাম। প্রতিটি বুথ থেকে বেশি করে ভোট আনার লক্ষ্য নিয়ে শুরু থেকেই কাজ করেছিলাম।’’ তা ছাড়া, বিরোধী ভোট যাতে বিভাজিত হয় সেই কৌশলও অবলম্বন করেছিলেন সুজামবাবু। তাঁর জয়ের পিছনে বিজেপি-ও যে একটা ‘ফ্যাক্টর’ হিসেবে কাজ করেছে, তাও তিনি আকারে-ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দেন। তাদের শক্তিশালী উপস্থিতি ভোট বিভাজনকে জোরালো করেছিল।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথায় সুজামবাবু শোনান, গ্রামের ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া তার প্রাথমিক এবং প্রধান লক্ষ্য। সেই সঙ্গে কাটলিছড়ার বেহাল রাস্তার সংস্কার এবং নতুন রাস্তা নির্মাণ করাবেন। পাশাপাশি, মিজোরাম সীমানায় উগ্রপন্থী সমস্যার স্থায়ী সমাধানও তাঁর অন্যতম লক্ষ্য বলে তিনি জানান। সুজামবাবুর কথায়, ‘‘কাটলিছড়ায় বাঙালি, উপজাতি, চা-শ্রমিক—বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মানুষের বসবাস। বেশির ভাগই দরিদ্র আর পিছিয়ে পড়া।’’ তাই এই অঞ্চলের সার্বিক বিকাশের জন্য তিনি কিছু দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাও গ্রহণ করতে চাইছেন। উন্নয়নের প্রশ্নে রাজনীতি তাঁর যে পছন্দ নয়, তাও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন সুজামুদ্দিন।

তবে বিরোধী দলের বিধায়ক হওয়ায় তার ক্ষমতা যে সীমিত, তাও তিনি জানিয়ে রাখেন। পাশাপাশি স্বীকার করেন, গৌতম রায় ছিলেন মন্ত্রী, আর তিনি বিধায়ক। ফলে চাওয়া-পাওয়ার একটা ব্যবধান তো থাকবেই। তবে সাধ্যমতো তিনি চেষ্টা করছেন এবং করেও যাবেন বলে ঘোষণা জানান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Work Congress
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE