সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্ত! হয়নি। তবে হওয়াটাই উচিত বলে আজ মন্তব্য করল সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ।
যথেষ্ট লোকবল না থাকা নিয়ে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাটিকেই আজ সরাসরি দায়ী করেছে শীর্ষ আদালত। সংস্থাটি তার কর্মীদের পদোন্নতি ঘটিয়ে উঁচু স্তরে তুলে আনা বা শূন্যপদ পূরণের জন্য উদ্যোগী হওয়া— এর কোনওটিই করেনি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কাজের পরিধি যে বাড়বে, সেটা কারও অজানা নয়। অথচ তার জন্য উপযুক্ত কর্মীবাহিনী ও পরিকাঠামোও যে গড়ে তোলা দরকার সে দিকে নজরই দেয়নি সিবিআই। তারাই কবুল করছে, ১৯৬৩ সালে সংস্থার পত্তনের পর থেকে আজ পর্যন্ত এ বিষয়ে সামগ্রিক কোনও পর্যালোচনাই হয়নি। ‘‘এটা মোটেই সন্তোষজনক পরিস্থিতি নয়। এমনটা কেন হল, সেটা নিয়েই এখন সিবিআই তদন্ত হওয়া উচিত,’’ বলে মন্তব্য করে বিচারপতি টি এস ঠাকুর এবং বিচারপতি সি নাগপ্পনের বেঞ্চ।
পশ্চিমবঙ্গের সারদা হোক বা অন্য লগ্নিসংস্থার আর্থিক কেলেঙ্কারি কিংবা মধ্যপ্রদেশের ব্যপম দুর্নীতি ও পরের পর রহস্যমৃত্যু নিয়ে তদন্তে নেমে সিবিআই বারবারই বলে যাচ্ছে যথেষ্ট লোকবল নেই তাদের কাছে। বিভিন্ন আদালতে তাদের আইনজীবী জানাছেন, একের পর এক মামলায় তদন্তের ভার চাপছে সিবিআইয়ের উপরে, অথচ রাজ্য সরকারগুলির কাছে চেয়েও ডেপুটেশনে পুলিশকর্মী পাওয়া যাচ্ছে না। যেমন, গত ২৪ অগস্ট সিবিআইয়ের ডিআইজি শঙ্খশুভ্র বাগচী শীর্ষ আদালতে জানিয়েছিলেন, সারদা তদন্তে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে ৩৪০ জন পুলিশকর্মী চাওয়া হয়েছিল। রাজ্য মাত্র ২০ জনকে দিতে পারবে বলে জানিয়েছে। আদালত সে দিন নির্দেশ দেয় রাজ্য যা দিতে চেয়েছে তার দ্বিগুণ পুলিশকর্মী দিতে হবে ডেপুটেশনে। রাজ্য সরকারের আইনজীবী কবিরশঙ্কর বসু আজ সুপ্রিম কোর্টে জানান, আদালতের নির্দেশ মতো দ্বিগুণ কর্মীকে অর্থাৎ ৪০ জনকেই ডেপুটেশনে দেওয়া হবে। এর জন্য ৮০ জনের নামের প্যানেল দেওয়ার কথা। তবে তার জন্য রাজ্য সরকারের আরও কিছুটা সময় দরকার। কারণ মাত্র দিন দশেক আগে এ সংক্রান্ত লিখিত নির্দেশ রাজ্য সরকারের হাতে এসেছে।
কিন্তু এ ভাবে চেয়েচিন্তে যে কর্মীর অভাব মেটার নয়, সেই কথাও ২৪ আগস্টের শুনানির সময়ই উল্লেখ করেন বিচারপতি ঠাকুর। তাই সিবিআইয়ে কত পদ শূন্য রয়েছে, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বাধাটা কোথায়, নিজস্ব পরিকাঠামো গড়ে তুলতে সংস্থার তরফে কী পদক্ষেপ করা হয়েছে— এ নিয়ে দু’সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট চেয়েছিল শীর্ষ আদালত। তারই সূত্রে সিবিআই জানায়, বর্তমানে বিভিন্ন স্তরে সাতশোরও বেশি পদ শূন্য রয়েছে। সিবিআইয়ের তরফে অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল মণীন্দ্র সিংহ জানান, সিবিআইয়ে কিছু পদে নিয়োগ-প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। অ্যাটর্নি জেনারেল নিজে বিষয়টি দেখছেন।
বর্তমানে সিবিআইয়ের কর্মীসংখ্যা কত, কত পদ সৃষ্টি করা দরকার, নিয়োগের বাধাগুলি কী, সে সব পর্যালোচনা করে আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে একটি রিপোর্ট জমা দিতে বলেছে শীর্ষ আদালতের বেঞ্চ।
তীব্র ভর্ৎসনার মুখে জুতসই জবাব খুঁজে না পেয়ে শীর্ষ আদালতের প্রতিটি নির্দেশ বা মন্তব্যেই মণীন্দ্রকে আজ বলতে শোনা যায় ‘ইয়েস স্যর, ইয়েস স্যর’। তিন সপ্তাহে রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশে তো বটেই, ক্ষুব্ধ বিচারপতি যখন মন্তব্য করেছেন, ‘‘এত দিন কি আপনারা পড়ে পড়ে ঘুমোচ্ছিলেন?’’
‘‘ইয়েস স্যর।’’ এ বারেও জবাব দেন মণীন্দ্র! বিচারপতির মুচকি হাসি নজরে আসার পরে বুঝতে পারেন, কীসের জবাবে কী বলেছেন তিনি!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy