সুপ্রিম কোর্টের রায়ে রাফাল নিয়ে আপাতত মুখরক্ষা হল নরেন্দ্র মোদীর। প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ আজ জানিয়ে দিল, ফ্রান্সের দাসো অ্যাভিয়েশনের থেকে মোদী সরকারের ওই যুদ্ধবিমান কেনার পদ্ধতি নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। কোনও (ভারতীয়) সংস্থাকে রাফালের বরাত পাইয়ে দেওয়া হয়েছে, এমন কোনও প্রত্যক্ষ প্রমাণও নেই। তবে বিরোধীদের অভিযোগ, রায়ের একাধিক অনুচ্ছেদে নিজেদের সীমাবদ্ধতার কথা মেনে নিয়েছে আদালত। কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী বলেছেন, ‘‘চৌকিদার চোর। তা আমরা প্রমাণ করেই ছাড়ব।’’
আজ কোর্টের রায়ের পরেই অমিত শাহ এবং রাজনাথ সিংহ দাবি তোলেন, ক্ষমা চাইতে হবে রাহুলকে। কংগ্রেসের অভিযোগ, ইউপিএ আমলের চুক্তি বাতিল করে মোদী প্রায় তিন গুণ বেশি দামে রাফাল কিনছেন এবং ভারতে দাসোর সহযোগী হিসেবে অনিল অম্বানীর ‘আনকোরা’ সংস্থাকে বরাত পাইয়ে দিয়েছেন তিনি। রাফাল চুক্তি নিয়ে আদালতের নজরদারিতে সিবিআই তদন্তের আর্জি জানিয়েছিলেন দুই প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী যশবন্ত সিন্হা ও অরুণ শৌরি এবং আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ। আদালতে গিয়েছিলেন আপ নেতা সঞ্জয় সিংহ, দুই আইনজীবী এম এল শর্মা এবং বিনীত ধন্দাও। কিন্তু ২৯ পাতার রায়ে তাঁদের সকলের আর্জি খারিজ করে বিচারপতিরা বলেছেন, এমন স্পর্শকাতর বিষয়ে আদালতের হস্তক্ষেপ নিষ্প্রয়োজন।
বেঞ্চে প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের সঙ্গে ছিলেন বিচারপতি এস কে কউল এবং বিচারপতি কে এম জোসেফ। তাঁরা বলেছেন, ‘‘বিবেচ্য ছিল তিনটি বিষয়— সিদ্ধান্ত নেওয়ার পদ্ধতি, দাম নির্ধারণ এবং ভারতীয় সহযোগী সংস্থা নির্বাচন। এই সব ক’টি ক্ষেত্র খতিয়ে দেখে এবং সবিস্তার শুনানির পরে আমরা মনে করছি, পদ্ধতি নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। আমরা সন্তুষ্ট। দামের তুল্যমূল্য বিচার করাও আদালতের কাজ নয়। বিষয়টিতে গোপনীয়তার প্রয়োজন রয়েছে। ছোটখাটো বিচ্যুতি যদি হয়েও থাকে, তার ভিত্তিতে চুক্তি বাতিল বা বিস্তারিত তদন্ত করা যায় না।’’
আরও পড়ুন: ‘নরেন্দ্র মোদীর জয় নয়, বলুন ভারতমাতার জয়’, নিজের জয়ধ্বনি শুনতে নারাজ প্রধানমন্ত্রী
আজ কিছুটা হলেও অক্সিজেন পেয়েছেন অনিল অম্বানী। কারণ বিচারপতিদের বক্তব্য, ভারত সরকারের হাতে সহযোগী সংস্থা বেছে নেওয়ার কোনও সুযোগ ছিল না। তা ছাড়া, ২০১৬ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর রাফাল কেনার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হওয়ার সময়ে এ নিয়ে কোনও প্রশ্ন ওঠেনি। আদালতে তদন্তের আর্জি জমা পড়েছে প্রাক্তন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদের বিবৃতির পর। কোনও ব্যক্তিবিশেষের মতামতের ভিত্তিতে রায় দেওয়া যায় না। কোর্ট আরও বলেছে, ‘‘শত্রুদের যখন চতুর্থ বা পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান রয়েছে, তখন দেশ পিছিয়ে থাকতে পারে না। ক’টি বিমান কেনা হবে, তা নিয়েও সরকারকে জোর করতে পারে না আদালত।’’
বিরোধীদের ব্যাখ্যা, আদালতের সাংবিধানিক সীমাবদ্ধতার কথা রায়েই স্পষ্ট বলে দেওয়া হয়েছে। যুদ্ধবিমানের প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশের দামের বিষয়টিও খতিয়ে দেখেনি আদালত। উপরন্তু রায়ে বলা হয়েছে, বিমানের সবিস্তার দাম কন্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি)-কে জানানো হয়েছিল। সিএজি-র সেই রিপোর্ট দেখেছিল পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি (পিএসি)। রাহুলের যদিও দাবি , ‘‘পিএসি-র কাছে কোনও রিপোর্টই আসেনি। হয়তো মোদীজি তাঁর সচিবালয়ে একটি পিএসি বসিয়ে রেখেছেন!’’