সুপ্রিম কোর্ট
ভিক্টোরীয় ধ্যানধারণা থেকে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারা চালু হয়েছিল বটে। কিন্তু ভারতের ইতিহাসে সমকামিতা নিয়ে অবস্থান মোটেই তেমনটা ছিল না। এই যুক্তি দিয়েই ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারার বিরুদ্ধে সওয়াল শুরু হল সুপ্রিম কোর্টে। এই ধারাতেই প্রকৃতবিরুদ্ধ বলে দাবি করে সমকামিতাকে অপরাধের তকমা দেওয়া হয়েছে।
প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রর নেতৃত্বাধীন সাংবিধানিক বেঞ্চ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ভারতীয় দণ্ডবিধির ওই ধারা অসাংবিধানিক কি না, সেই প্রশ্নটিই সবার প্রথমে খতিয়ে দেখা হবে। ২০১৩-য় সুপ্রিম কোর্টই বলেছিল, ৩৭৭ ধারা অসাংবিধানিক নয়। আজ প্রধান বিচারপতি জানান, সেই রায় ঠিক না ভুল, প্রথমে তা-ই দেখা হবে।
এ নিয়ে অবশ্য বিচারপতিদের মধ্যে মতপার্থক্য ছিল। আইনজীবী মুকুল রোহতগি দাবি তোলেন, রূপান্তরকামী, সমকামী, উভকামীদের সুরক্ষা, উত্তরাধিকার, দত্তক সংক্রান্ত অধিকার নিয়ে ফয়সালা হওয়া দরকার। বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় বলেন, বিষয়টির সঙ্গে যৌন প্রবৃত্তির ছাড়াও লিঙ্গ পরিচয়ের বৃহত্তর প্রশ্ন জড়িত। কিন্তু প্রধান বিচারপতি নিজে এবং বিচারপতি রোহিংটন নরিম্যান যুক্তি দেন, আগে ৩৭৭ ধারা সাংবিধানিক কি না, তার ফয়সালা হোক। প্রধান বিচারপতি বলেন, যদি ৩৭৭ ধারা বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়, তবেই সমকামী বিয়ে, লিভ-ইন ইত্যাদি প্রসঙ্গ উঠবে।
১৫৮ বছরের পুরনো আইনের বিরুদ্ধে প্রবীণ আইনজীবী রোহতগির যুক্তি, যৌন রুচি মানুষের নিজস্ব বিষয়। মানুষ তা নিয়েই জন্মায়। কিন্তু প্রাকৃতিক নিয়মের সেই সহজাত রুচিকেই ৩৭৭ ধারায় অপরাধের তকমা দেওয়া হয়েছে। বিচারপতিরা প্রশ্ন তোলেন, সমকামিতা কি প্রকৃতির নিয়ম? রোহতগি যুক্তি দেন, অবশ্যই। প্রাকৃতিক নিয়মকেই ৩৭৭ ধারায় ফৌজদারি অপরাধের তকমা দেওয়া হয়েছে। সমকামী যৌন সম্পর্ককে প্রকৃতিবিরুদ্ধ বলা হয়েছে।
গত বছর সুপ্রিম কোর্টের নয় বিচারপতির বেঞ্চ ব্যক্তিপরিসরের অধিকারকে মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি দিয়েছিল। সেই রায়ে সমকামিতার অধিকারের প্রসঙ্গও উঠেছিল। আজ রোহতগি সেই রায়কে হাতিয়ার করে যুক্তি দেন, ন’জনের মধ্যে ছয় বিচারপতিই ওই রায়ে ৩৭৭ ধারার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। জীবনসঙ্গী বাছার অধিকার সংবিধান প্রদত্ত মৌলিক অধিকার। সংবিধানের ২১ তম অনুচ্ছেদের অঙ্গ। রোহতগির যুক্তি, সামাজিক নৈতিকতা সাংবিধানিক নৈতিকতার উপর চেপে বসতে পারে না। মহাভারতে শিখণ্ডীর মতো চরিত্র ছিলেন। খাজুরাহোর ভাস্কর্যেও সমকামিতার সাক্ষ্য রয়েছে।
বিচারপতি ইন্দু মলহোত্র যোগ করেন, আইসল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী, আইরিশ প্রধানমন্ত্রী সমকামী। আইনজীবী অরবিন্দ দাতার বলেন, আইরিশ প্রধানমন্ত্রী ভারতীয় বংশোদ্ভূতও বটে।
মোদী সরকার অবশ্য তার অবস্থান এখনও স্পষ্ট করেনি । গত কালই অতিরিক্ত সময় চেয়ে শুনানি পিছিয়ে দিতে চেয়েছিল কেন্দ্র। সুপ্রিম কোর্ট রাজি না হওয়ায় আজ অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা জানান, শুনানির মধ্যেই কেন্দ্রের অবস্থান জানানো হবে। সরকারে থেকে সমকামিতার পক্ষে জোরালো অবস্থান নিলে রক্ষণশীল হিন্দুদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে বলে কেন্দ্রের ভয়। দলের মধ্যেও নানা জনের নানা মত। কখনও রাজনাথ সিংহ ৩৭৭-এর পক্ষে, কখনও অরুণ জেটলি এর বিরুদ্ধে কথা বলছেন। আজই যেমন সুব্রহ্মণ্যম স্বামী বলেছেন, সমকামিতা একটা রোগ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy