অসমের নাগরিক পঞ্জির চৃড়ান্ত খসড়া থেকে বাদ যাওয়া ৪০ লক্ষের বেশি মানুষকে দ্বিতীয় সুযোগ দেওয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলল শীর্ষ আদালত। তালিকায় বাদ পড়াদের নাগরিকত্ব প্রমাণের দ্বিতীয় সুযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে কেন্দ্রের প্রস্তাবিত স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিও (এসওপি) বলছে, যাঁদের নাম চূড়ান্ত খসড়ায় নেই, তাঁরা প্রয়োজনে নিজেদের বংশলতিকার তথ্য সংশোধনে অতিরিক্ত নথি জমা দিতে পারবেন। সুপ্রিম কোর্টের প্রশ্ন, যাঁরা চূড়ান্ত তালিকায় নাম তুলতে চান, তাঁদের কেন নতুন করে বংশলতিকা নতুন নথি জমা দিতে হবে?
প্রক্রিয়ার ভাল-মন্দ দিক বিচার করে ৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কেন্দ্রকে তার বক্তব্য আদালতে জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। নাগরিক পঞ্জি নবীকরণের ক্ষেত্রে যে ৪০ লক্ষাধিক নাম বাদ পড়েছে, তাঁদের নাম নথিভুক্তিকরণের আবেদনপত্র ৩০ অগস্ট থেকে জমা নেওয়ার কথা ছিল। তা পিছিয়ে গেল। চূড়ান্ত খসড়ায় গরমিলের অভিযোগে ১০ শতাংশ এনআরসির নমুনা ফের যাচাইয়ের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। সেই কাজ কবে শুরু করা যেতে পারে ও তার জন্য কত সময় লাগবে, তা ৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জানাতে বলা হয়েছে।
বিচারপতি রঞ্জন গগৈ ও বিচারপতি রোহিংটন নরিম্যানের বেঞ্চ শুনানিতে এনআরসির সমন্বয়রক্ষাকারী আমলা প্রতীক হাজেলাকে প্রশ্ন করে, যাঁদের নাম বাদ গিয়েছে, তাঁরা তো আগেই সব নথি জমা দিয়েছেন। তা হলে কেন ফের তাঁদের নতুন করে নথি জোগাড় করে জমা দিতে বলা হয়েছে? আদালতের মতে, এতে এক দিকে যোগ্য আবেদনকারীর হয়রানি হবে, অন্য দিকে সন্দেহজনক আবেদনকারীরা নতুন নথি জোগাড়ের সুযোগ পাবে। আগের যে বংশলতিকা জমা পড়েছে সেখানেও বদল আসতে পারে।
বিচারপতি গগৈ কেন্দ্রের অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেণুগোপালকে বলেন, ‘‘এক জন নিজের পিতার বংশ পরম্পরা প্রমাণে নথি জমা করেছেন। বংশলতিকা তৈরি হয়েছে। প্রশাসন সেই দাবি খতিয়ে দেখেছে। এখন আপনাদের এসওপি-র সুপারিশ হল, ওই ব্যক্তি নিজের ঠাকুর্দার থেকে বংশ পরম্পরা প্রমাণে নতুন নথি জমা দিতে পারবেন। এতে নতুন বংশবৃক্ষ তৈরি হবে। সব নতুন করে খতিয়ে দেখতে হবে। কেন?’’ বিচারপতি গগৈ আরও প্রশ্ন তোলেন, সরকারই আগে বলেছিল, বংশ পরম্পরা প্রমাণে এক বারই নথি জমা করা যাবে। এখন অতিরিক্ত নথির কথা বলছেন। কেন পরস্পর-বিরোধী কথা বলা হচ্ছে?
বেণুগোপাল যুক্তি দেন, যিনি নিজের সব অধিকার খোয়ানোর মতো বিপদের মুখে রয়েছে, তাঁকে দ্বিতীয় সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। বিচারপতি নরিম্যান তা শুনে স্বীকার করেন, এখানে বিপুল মানুষের সমস্যা নিয়ে কোর্ট বিচার করছে। এর ফল এতটাই মারাত্মক যে দ্বিতীয় বার সুযোগ দেওয়াই উচিত। প্রথম বার হয়তো কেউ ভুল করেছেন। পরের বার তিনি তা শুধরে নিজের দাবি প্রতিষ্ঠা করতেই পারেন। কিন্তু দ্বিতীয় সুযোগ দেওয়ার ফলে যে বংশ পরম্পরার নথি নিয়ে দুর্নীতি হতে পারে, তা স্বীকার করে নেন প্রতীক হাজেলা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy