ফাইল চিত্র।
ফাঁসির সাজার আইনি বৈধতায় ফের স্বীকৃতি দিল সুপ্রিম কোর্ট। তবে তিন বিচারপতির বেঞ্চে বিচারপতিদের মধ্যে ঐকমত্য হয়নি। বিচারপতি কুরিয়ান জোসেফ, বিচারপতি দীপক গুপ্ত এবং বিচারপতি হেমন্ত গুপ্তকে নিয়ে গঠিত বেঞ্চে প্রবীণতম বিচারপতি জোসেফই ফাঁসির সাজা বহাল রাখার বিপক্ষে মত দিয়েছেন। কিন্তু অন্য দুই বিচারপতি আইন অনুযায়ী ফাঁসি বহাল রাখার পক্ষেই মত দেওয়ায়, সংখ্যাগরিষ্ঠের হিসেবে সেটাই আদালতের রায় হয়ে দাঁড়াল।
এ দেশের শীর্ষ আদালতে এর আগেও প্রশ্ন উঠেছে, এখনও ফাঁসির সাজা বহাল রাখা উচিত কি না! কারণ ব্রিটেন বা লাতিন আমেরিকার অনেক দেশে মৃত্যুদণ্ড তুলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট বরাবরই রায় দিয়েছে, অন্য দেশে ফাঁসি বা মৃত্যুদণ্ড তুলে দেওয়া হয়েছে বলেই এ দেশের ভারতীয় দণ্ডবিধি থেকে ফাঁসির শাস্তি মুছে দেওয়া যায় না।
কাল অবসর নিচ্ছেন বিচারপতি কুরিয়ান জোসেফ। তিনি বরাবরই মৃত্যুদণ্ডের বিপক্ষে। এর আগে বহু বেঞ্চেই তিনি ফাঁসির সাজার বিরুদ্ধে মত দিয়েছেন। আজকের রায়েও তিনি সেই মনোভাব স্পষ্ট করে দেন। আইন কমিশনের রিপোর্টকে হাতিয়ার করে বিচারপতি যুক্তি দেন, ২৬২-তম আইন কমিশনের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ফাঁসির সাজা অপরাধ রুখতে ব্যর্থ। যুক্তি দেন, এ দেশে জনমত মামলার গতিপ্রকৃতির উপরে প্রভাব ফেলে। কোন মামলায় কী রায় হওয়া উচিত, কার ফাঁসি হওয়া উচিত, তা নিয়ে সমাজে দাবি উঠে। তার ফলে তদন্তকারী সংস্থাগুলিও আদালতের উপরে চরম সাজা দেওয়ার চাপ তৈরি করে। আমজনতার ইচ্ছা-অনিচ্ছা, আবেগকে তারা হাতিয়ার করে।
আরও পড়ুন: ‘মমতা চলবে, তবে কংগ্রেস নয়’
কিন্তু বেঞ্চের প্রবীণতম বিচারপতির সঙ্গে অন্য দুই বিচারপতি একমত হননি। অন্য দুই বিচারপতির হয়ে বিচারপতি দীপক গুপ্ত রায় দেন, ফাঁসির সাজা আইনত বৈধ শাস্তি। সুপ্রিম কোর্ট ১৯৮০-র বচন সিংহ ও ১৯৮৩-র মচ্ছি সিংহ মামলায় মৃত্যুদণ্ডের যথার্থতা নিয়ে স্পষ্ট রায় দিয়ে রেখেছে। ওই দুই রায়েই বলা হয়েছে, মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি সংবিধানের ১৪, ১৯ ও ২১-তম অনুচ্ছেদের বিরোধী নয়। দ্বিতীয় মামলায় রায়ে সুপ্রিম কোর্ট কী ধরনের বিরলতম অপরাধে ফাঁসির সাজা দেওয়া যেতে পারে, তা-ও নির্দিষ্ট করে দিয়েছিল।
আরও পড়ুন: কাশ্মীর টানলেন ইমরান, কথায় রাজি নয় ভারত
যে মামলা নিয়ে এত চুলচেরা বিচার, সেই ছন্নুলাল বর্মার ফাঁসির মামলার পর্যালোচনায় অবশ্য তিন বিচারপতিই একমত হয়ে তার ফাঁসির সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড করে দিয়েছেন। সাত বছর আগে ছত্তীসগঢ়ের ছন্নুলাল তিন জনকে খুন করে। মৃতরা হলেন রত্না সাহু, তাঁর শ্বশুর আনন্দরাম এবং শাশুড়ি ফিরন্তিন বাই। রত্নাকে ধর্ষণ করে খুন করেছিল ছন্নুলাল। রাজ্য সরকারের কৌঁসুলি দাবি করেন, ছন্নুলাল যে শোধরাবে, এমন কোনও প্রমাণ নেই। বিচারপতিরা তা মেনে নেননি। তাঁরা ছন্নুলালের ফাঁসির সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy