সবে এক দিন আগে এনডিএ-র আসন ভাগাভাগি চূড়ান্ত হয়েছে। তাই নিয়ে জোটের মধ্যে ক্ষোভ এখনও পুরোপুরি মেটেনি। এর মধ্যে এ দিন প্রাক্-নির্বাচনী জনমত সমীক্ষা জানাল, নীতীশ কুমারদের জমি দখল করে দ্রুত এগোচ্ছে নরেন্দ্র মোদীর জোট। নীতীশ এখনও এগিয়ে। কিন্তু সমীক্ষার ইঙ্গিত, সেই ব্যবধান ক্রমেই কমছে। যদিও বিহারের বেশির ভাগ মানুষ ব্যক্তিগত ভাবে নরেন্দ্র মোদীর থেকে এখনও সামনে রাখছেন নীতীশ কুমারকেই।
বিহার বিধানসভার এ বারের ভোট সব দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ। এনডিএ যদি হারে, তবে দলের মধ্যে মোদী-অমিত শাহের নেতৃত্ব প্রশ্নের মুখে পড়ে যেতে পারে। অন্য দিকে, হারলে নীতীশ-লালুর হাতে দলের সাইনবোর্ড ছাড়া আর কিছু থাকবে না। জেডিইউ ও আরজেডি, দু’দলের মধ্যেই চোরাগোপ্তা অসন্তোষ আছে, যা মাঝে মাঝে বেরিয়েও আসছে। দল হারলে তা বড় বিদ্রোহের আকার নিতে পারে।
সে সব কথা মাথায় রেখেই এ বার প্রথম থেকে ঘুঁটি সাজাচ্ছেন মোদী-নীতীশ। লড়াইটা এখন এসে দাঁড়িয়েছে এই দু’জনের মধ্যে। সেখানে কোন শিবির কতটা এগলো বা পিছলো, সেটা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, সমীক্ষার সেই ফল মাথায় রেখেই পরবর্তী কৌশল ঠিক করেন দু’পক্ষের নেতৃত্বরা।
মঙ্গলবার এবিপি নিউজ-এসি নিয়েলসেন যে সমীক্ষা প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, এখনও এগিয়ে নীতীশ ও তাঁর মহাজোট। তবে গত জুলাইয়ে প্রথম সমীক্ষার তুলনায় তাঁদের আসন কমার ইঙ্গিত রয়েছে এই সমীক্ষায়। জুলাই মাসের শেষে প্রথম দফার সমীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছিল। সেই সমীক্ষা অনুযায়ী, নীতীশরা ১২৯টি আসন পেতে পারেন বলে জানানো হয়েছিল । সেই সংখ্যা এ বারে সাতটি কমে দাঁড়িয়েছে ১২২-এ। উল্টো দিকে, বিজেপি জোটের ১১২টি আসন পাওয়ার সম্ভাবনা দেখানো হয়েছিল প্রথম সমীক্ষায়। দ্বিতীয় দফায় তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১৮-য়। অর্থাৎ, ৬টি আসনে জেতার সম্ভাবনা বেড়েছে। প্রথম বারের তুলনায় এনডিএ-র ভোট ৭ শতাংশ বৃদ্ধিরও ইঙ্গিত দিয়েছে এ বারের সমীক্ষা। তবে নীতীশের জন্য স্বস্তি একটাই— মুখ্যমন্ত্রী পদে এখনও বিহারের বেশির ভাগ মানুষ তাঁকেই দেখতে চান। মোদীর থেকেও জনপ্রিয়তার নিরিখে এগিয়ে নীতীশ।
এই দুই সমীক্ষার মধ্যে অবশ্য গঙ্গা দিয়ে বেশ খানিকটা জল গড়িয়েছে। টক্কর শুরু হয়ে গিয়েছে মোদী ও নীতীশের মধ্যে। বিহারের জন্য ১ লক্ষ ২৫ হাজার কোটি টাকার বিশেষ প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলেন মোদী। তার জবাবে দ্রুত ২ লক্ষ ৩৪ হাজার কোটি টাকার পাল্টা প্যাকেজের কথা জানিয়ে দেন নীতীশ। একই ভাবে সরকারি কর্মীদের জন্য ডিএ ঘোষণার ক্ষেত্রেও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সমানে সমানে পা ফেলেছেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী। দিল্লি থেকে মহার্ঘভাতা বৃদ্ধির ঘোষণার কিছুক্ষণের মধ্যে পটনায় সাংবাদিক বৈঠক করা হয় ডিএ বাড়ানো নিয়ে।
অতীত অভিজ্ঞতা বলছে, জনমত সমীক্ষার ফল সব সময় মেলে না। তা ছাড়া এখনও প্রথম দফার ভোটের মাসখানেক বাকি। তত দিনে তুঙ্গে উঠবে প্রচার। আরও বদলাবে ছবি। তবু ভোটদাতাদের মানসিকতার আঁচ পেতে এই ধরনের সমীক্ষার সব সময়ই গুরুত্ব রয়েছে। বিশেষ করে দুই জোটের প্রাথমিক প্রচার শুরুর পর যে ছবি বদলাতে শুরু করেছে, তার ইঙ্গিত মিলেছে এ বারের সমীক্ষায়।
বিহারের পাঁচ পর্বের ভোট শুরু হতে এখনও প্রায় এক মাস বাকি। তবে আজকের পরিস্থিতি বিচার করতেই ৩৭টি বিধানসভা কেন্দ্রকে বেছে নিয়ে ৩ থেকে ৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সমীক্ষা চালানো হয়েছিল।
২৪৩ আসনের বিহার বিধানসভার ভোটে পূর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে ১২২টি আসন দরকার। ভোটে শেষ পর্যন্ত কী হবে, তা সময়ই বলবে, কিন্তু সমীক্ষায় দু’পক্ষই হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের ইঙ্গিত দিচ্ছে। যে ভাবে জমি ছিনিয়ে নিচ্ছে এনডিএ জোট, তা লালু-নীতীশদের চিন্তার কারণ হতে পারে। ২০১০ সালের বিধানসভা ভোটে নীতীশ কুমারের সংযুক্ত জনতা দলের সঙ্গে বিজেপির জোট ২০৬টি আসন পেয়েছিল।
সে বার লালুপ্রসাদ- রামবিলাস পাসোয়ানের জোট পায় ২৫টি আসন। তবে লোকসভা ভোটে সব পক্ষের জোটের সমীকরণ বদলে যাওয়ার পরে পাসোয়ান-বিজেপির জোট ১৭৪টি বিধানসভায় এগিয়ে ছিল। লালু-নীতীশরা ছিল ৫১টি আসনে এগিয়ে।
সমীক্ষার ফল প্রকাশের পরে নীতীশ শিবিরের দাবি, উন্নয়নের নামেই এ বার ভোট হচ্ছে বিহারে। আর এ ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের কাজের ফল দেখা যাচ্ছে। আর বিজেপির আশা, দু মাস আগের সমীক্ষার তুলনায় এখন যে ভাবে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে তারা, তাতে ভোটের পরে শেষ হাসি হাসবে এনডিএ-ই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy