ভাগ্যিস, শিলচর সফরে এসে জঞ্জালের স্তূপ দেখে ফেলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী! আর তার জেরেই শিলচর পুর এলাকার জঞ্জাল সাফাইয়ের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হল বেসরকারি তিন সংস্থার হাতে। শহরের ২৭টি ওয়ার্ডের প্রতিটি বাড়ি, দোকান থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করবে ওই তিন সংস্থার কর্মীরা। তিন সংস্থার কর্মকর্তার সঙ্গে আজ এই মর্মে চুক্তি স্বাক্ষর করলেন জেলাশাসক এস বিশ্বনাথন ও পুরসভার চেয়ারম্যান নীহারেন্দ্র নারায়ণ ঠাকুর। তবে একই সঙ্গে জঞ্জাল সাফাইয়ের জন্য পুর নাগরিকদের উপর ‘কর’-এর বোঝা চাপিয়েছেন পুর ও জেলা প্রশাসন। প্রতি মাসে নির্দিষ্ট টাকা সাফাইকারীদের দিতে হবে বলেও ঘোষণা করা হয়েছে।
জঞ্জাল সাফাই নিয়ে পুরসভার বিরুদ্ধে অনেকদিন ধরেই মানুষের অভিযোগ জমা হচ্ছিল। তবে তা মানতে চাননি শিলচরের পুরপ্রধান। সেপ্টেম্বরে মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল নিজের চোখে শপিং মলের সামনে জঞ্জাল পড়ে থাকতে দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন। আর তারপরেই টনক নড়ে নীহারবাবুর। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে শিলচরের বিধায়ক তথা বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার দিলীপকুমার পাল এবং জেলাশাসক বিশ্বনাথনও যুক্ত হলেন জঞ্জাল সাফাইয়ের নতুন ভাবনায়। আজকের চুক্তি তারই ফসল।
১, ২, ৩, ৪, ৬, ৭, ৮, ১১, ১৯, ২১, ২২, ২৩, ২৫ ও ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের বর্জ্য সংগ্রহ করবে কলেজ রোডের নিউ জেনেসিস সংস্থা। ৯, ১০, ১২, ১৩, ১৪, ১৫, ১৬, ১৭, ১৮ ও ২০ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্বে সূর্যোদয় নামে একটি সংস্থা। তারাপুরের শেফালি এন্টারপ্রাইজের দায়িত্বে রয়েছে ২৪, ২৭ ও ২৮ নম্বর ওয়ার্ড। শুধুমাত্র ৫ নং ওয়ার্ডের ব্যাপারে এখনও চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। পুরপ্রধান নীহারবাবু জানিয়েছেন, সেখানকার জঞ্জাল সাফাইয়ের জন্য আদর্শ এনজিও আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। কথাবার্তা পাকা হওয়ার পর তারা দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করে। শীঘ্রই ওই ওয়ার্ডেও একই পদ্ধতিতে কাজ শুরু করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। মোট ন’টি জোনে ভাগ করা হয়েছে শিলচর পুরএলাকাকে। একজন করে ইঞ্জিনিয়ার এক একটি জোনের জঞ্জাল সাফাইয়ের তদারকির দায়িত্বে থাকবেন। ভোর ৫টা থেকে সকাল ৮টার মধ্যে বাড়ির বর্জ্য সংগ্রহ করা হবে। দোকান থেকে রাত ৭টা থেকে ৯টার মধ্যে এই কাজ সারা হবে। তিনটি সংস্থার পক্ষে পৃথক পৃথক চুক্তিতে সই করেন নিউ জেনেসিসের রাজীব গুপ্ত, সূর্যোদয়ের ধ্রুবজ্যোতি কলিতা ও শেফালি এন্টারপ্রাইজের অভিজিৎ ভট্টাচার্য।
জেলাশাসক বিশ্বনাথন জানান, মালিক কিংবা ভাড়াটিয়া—প্রতিটি পরিবার বর্জ্য সাফাইয়ের জন্য মাসে ৫০ টাকা করে দেবেন। ছোট দোকান দেবে ১০০ টাকা, বড় দোকান ২৫০ টাকা। এটি বাধ্যতামূলক এবং কেউ না দিলে বা বকেয়া পড়লে জরিমানার কথাও তাঁরা ভাবছেন বলে জেলাশাসক ও পুরপ্রধান জানান। এজেন্সিগুলিই বাড়ি ও দোকান থেকে ওই ফি সংগ্রহ করবে। অর্থ প্রদানে বাধ্য করার সঙ্গে সঙ্গে জঞ্জাল নিয়ে নাগরিকদের অভিযোগ জানানোর প্রক্রিয়াও আধুনিকতর করে তোলা হয়েছে। অতিরিক্ত জেলাশাসক রাজীব রায় জানান, হোয়াটসঅ্যাপের সাহায্যে বিনা শুল্কে যে কেউ অভিযোগ জানাতে পারেন। হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর শীঘ্রই নাগরিকদের জানানো হবে।
বাড়ি-দোকান থেকে প্রতিদিন ৯০ টন বর্জ্য সংগ্রহের পাশাপাশি সেগুলি কী ভাবে অন্য কাজে লাগানো যায়, সে কথাও ভাবছেন তাঁরা। আগামী দু’মাসের মধ্যে একটি প্রকল্প তৈরি হবে বলে জেলাশাসক জানিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy