Advertisement
০৫ মে ২০২৪

দুঃস্থ ছাত্রের পাশেই শিক্ষক

সম্রাট কলেজে ভর্তি হতে পারেননি জেনে বুদ্ধবাবু তাঁকে ডেকে পাঠান বাড়িতে। মার্কশিট দেখে তাঁর স্ত্রী মধুমল্লিকাদেবী হতবাক। ইংরাজিতে ৯৪, বাংলায় ৯১, রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ৮৪, অর্থবিদ্যায় ৮৯, ইতিহাসে ৯৬।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

উত্তম সাহা
শিলচর শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০১৭ ০৩:০৩
Share: Save:

উচ্চ মাধ্যমিকে ১৪ নম্বরের জন্য মেধা তালিকায় জায়গা পাননি সম্রাটকুমার নাথ। ৫০০-য় পেয়েছিলেন ৪৫৪। শিলচরের সিরাজুল আলি উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এটাই সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ফলাফল।

কিন্তু টাকার অভাবে কলেজে ভর্তি হতে পারছিলেন না সেই ছাত্রই!

পড়াশোনা ছেড়েই দেবেন বলে ঠিক করেছিলেন সম্রাট। বাবা দিনমজুর। দা-কামলা। বয়স সত্তরের কোঠায়। প্রতি দিন কাজ মেলে না। দু’বেলা দু-মুঠো খাবার জোটানোই কষ্ট। কী ভাবে মিলবে কলেজে ভর্তির ফি! কে দেবে নিয়মিত আসা-যাওয়ার খরচ, বইপত্র, ইউনিফর্ম। এমন পরিস্থিতিতে সম্রাটের পাশে দাঁড়ালেন তাঁরই স্কুলের শিক্ষক বুদ্ধদেব চৌধুরী।

সম্রাট কলেজে ভর্তি হতে পারেননি জেনে বুদ্ধবাবু তাঁকে ডেকে পাঠান বাড়িতে। মার্কশিট দেখে তাঁর স্ত্রী মধুমল্লিকাদেবী হতবাক। ইংরাজিতে ৯৪, বাংলায় ৯১, রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ৮৪, অর্থবিদ্যায় ৮৯, ইতিহাসে ৯৬।

মধুমল্লিকাদেবীও শিক্ষকতা করেন। মনে পড়ে তাঁর অকাল-প্রয়াত ছেলের কথা। ২০০৯ সালে ৫ বছর বয়সে মারা গিয়েছিল চৌধুরী দম্পতির ছেলে। পরে যমজ সন্তান হলেও মধুমল্লিকাদেবী তার মুখ ভুলতে পারেননি। বুদ্ধবাবুকে তিনি বলেন, ‘‘বেঁচে থাকলে আমাদের কত টাকা ওর পড়াশোনায় খরচ হতো। তার কিছুটা সম্রাটের জন্যই খরচ হোক।’’

এ বছর অসম সরকার দুঃস্থ ছাত্রছাত্রীদের ভর্তির ফি মকুব করেছে। শর্ত একটাই, পরিবারের উপার্জন ১ লক্ষ টাকার কম হতে হবে। রোজগার সংক্রান্ত সব কাগজ নিয়ে গুরুচরণ কলেজে গিয়েছিলেন সম্রাট। জানতে পারেন, ভর্তির ফি মকুব হলেও লাইব্রেরি, গেম ফি দিতে হবে। তা-ও হাজারখানেক টাকা। উচ্চ মাধ্যমিকে পরীক্ষার ফি ছিল ৬৫০ টাকা। তা জোগাড় হচ্ছিল না। তখনও এগিয়ে এসেছিলেন বুদ্ধদেববাবু। মাধ্যমিক পরীক্ষার ফি দিয়েছিলেন স্কুলের শিক্ষকরা। সম্রাটের বক্তব্য, পরীক্ষার ফি নিয়ে চিন্তা না থাকলে মেধা তালিকায় নাম থাকত তাঁরও।

সপ্তাহখানেক আগে কলেজে ভর্তি হন সম্রাট। এখন বার বার তিনি বলছেন, ‘‘ওঁরা আমার দ্বিতীয় মা-বাবা।’’ ছেলের কথায় সায় দেন সন্তোষকুমার নাথ, স্ত্রী অনিতারানিও। দুঃস্থ ওই দম্পতি নিশ্চিত, বুদ্ধদেববাবু-মধুমল্লিকাদেবী পাশে থাকলে ছেলে স্বপ্নপূরণ করতে পারবে। সম্রাটও এগোতে চান আরও অনেক দূর। মানুষের দুঃখ-কষ্ট দূর করতে আইএএস হওয়ার স্বপ্ন দেখেন তিনি। বুদ্ধবাবু বলেন, ‘‘চিন্তা নেই, আমরা পাশেই আছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE