Advertisement
E-Paper

তেজপুরের রয়্যাল বেঙ্গল ফিরল জঙ্গলে

অবশেষে কাজিরাঙা থেকে জনবসতিতে ঢোকা বাঘ ফিরল জঙ্গলে। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন তেজপুরবাসী। কিন্তু পরিবেশপ্রেমী ও বনকর্মীদের মতে, এই স্বস্তি নেহাতই সাময়িক। কারণ, কলিয়াভোমরা সেতুর কাছে দ্বিতীয় সেতু তৈরির জন্য যে কাজ চলছে, পরিভ্রমণের মরসুমে সেই নির্মাণের ধাক্কাতেই বাঘ, হাতি, গন্ডাররা বদল করছে রাস্তা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৬ ০২:৪৩

অবশেষে কাজিরাঙা থেকে জনবসতিতে ঢোকা বাঘ ফিরল জঙ্গলে। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন তেজপুরবাসী। কিন্তু পরিবেশপ্রেমী ও বনকর্মীদের মতে, এই স্বস্তি নেহাতই সাময়িক। কারণ, কলিয়াভোমরা সেতুর কাছে দ্বিতীয় সেতু তৈরির জন্য যে কাজ চলছে, পরিভ্রমণের মরসুমে সেই নির্মাণের ধাক্কাতেই বাঘ, হাতি, গন্ডাররা বদল করছে রাস্তা।

চার দিন ধরে, কাজিারাঙা জাতীয় উদ্যান থেকে বেরিয়ে পথহারানো রয়্যাল বেঙ্গল তেজপুরের দোলাবাড়ি এলাকা দাপিয়ে বেড়াচ্ছিল। তার আক্রমণে এক মহিলা মারা যান। জখম হন দুই বনকর্মী-সহ চার জন। তিন দিন ধরে বাঘটিকে খাঁচাবন্দি করার চেষ্টা চালানো হয়। বন দফতরের কর্মী, পশুপ্রেমী চিকিৎসক, পশুপ্রেমী সংগঠনের সদস্য-সহ শতাধিক মানুষ বাঘ খেদানোর চেষ্টা চালাচ্ছিলেন। কয়েক দিন আগেই বন থেকে বেরিয়ে যোরহাটের কারেং চাপড়িতে আসা বাঘিনীকে হত্যা করেছেন গ্রামবাসীরা। তাই, তেজপুরের বাঘের প্রাণ বাঁচাতে সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। মোতায়েন করা হয় বিরাট পুলিশ বাহিনী। ডিএফও রোহিনী শইকিয়া, ডিএফও পি শিবকুমার, পশু চিকিৎসক সামসুল আলি, কৌশিক বরুয়া ও বন্যপ্রাণ অপরাধ দমন ব্যুরোর তরফে স্মরজিৎ ওঝার নেতৃত্বে চলে বাঘবন্দি অভিযান।

স্মরজিৎবাবু জানান, গত রাতে হাতির পিঠে বন্দুকধারী রক্ষী-সহ বনকর্তারা ছিলেন। ঘুমপাড়ানি বন্দুক নিয়ে ছিলেন পশু চিকিৎসকেরা। বাঘের মুখোমুখি পড়ে স্মরজিতদের পিঠে নেওয়া হাতি রাজুমালা। আতঙ্কিত হাতিকে নিয়ন্ত্রণ করে পিছোতে থাকেন মাহুত। কৌশিক বরুয়া হাতির পিঠ থেকে বাঘ লক্ষ্য করে ঘুমপাড়ানি গুলি ছুঁড়লেও তা ছিটকে যায়। ক্রুদ্ধ বাঘ ধানজমি থেকে সোজা রাজুমালার দিকে ঝাঁপ দেয়। প্রাণভয়ে দোনলা বন্দুক থেকে গুলি চালিয়ে দেন হাতিতে থাকা বনরক্ষী বিষ্ণু। স্মরজিৎবাবু বলেন, ‘‘এত বড় পূর্ণবয়স্ক বাঘ ১০ ফুট উঁচুতে লাফ দিল। বনরক্ষী গুলি চালানোয় সে দিক বদল করে বাঁশবনের দিকে লাফিয়ে নামে! তার পর ডিএফও শিবকুমাররের গাড়ির সামনের কাচ থাবার আঘাতে ভেঙে গা ঢাকা দিল সে। গোটা ঘটনাটি না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না।’’

ডিএফও রোহিনী শইকিয়া জানান, রাতেই বনরক্ষীদের খেদানিতে বাঘটিকে বুড়াচাপোড়ি অভয়ারণ্যের দিকে পাঠানো গিয়েছে। বুড়াচাপোড়িতে বসানো ক্যামেরায় দেখা গিয়েছে, জঙ্গলে ঢুকে গিয়েছে সে। আজ সকালে তার টাটকা পায়ের ছাপ মিলেছে সেখানে। বুড়াচাপোড়িতে ইতিমধ্যে একটি বাঘিনী, শাবক, প্রায় প্রাপ্তবয়স্ক বাঘ রয়েছে। গত কালের ওই বাঘ নিয়ে বুড়াচাপোড়িতে চারটি বাঘ হল। বনকর্তাদের আশঙ্কা, দু’টি বাঘের মধ্যে এ বার এলাকা দখলের লড়াই হতে পারে।

কাজিরাঙার বাঘ বুড়াচাপোড়ির জঙ্গলে ঢুকে পড়ায় আপাতত শান্তি ফিরেছে দোলাবাড়িতে। কিন্তু পরিবেশপ্রেমীদের মতে, কয়েক দিন ধরে যে ভাবে হাতি, গন্ডার ও বাঘ কাজিরাঙা থেকে বেরিয়ে তেজপুরের দিকে যাচ্ছে, তাতে ফের এমন ঘটনা ঘটতেই পারে।

কিন্তু কেন বদলাচ্ছে পশুদের চেনা রাস্তা?

স্মরজিৎবাবু জানান, এর প্রধান কারণ তেজপুর ও নগাঁও সংযোগকারী কলিয়াভোমরা সেতুর দক্ষিণ দিকে আরও একটি সেতুর নির্মাণ। শীত পড়ার সময় থেকে মার্চ পর্যন্ত পশুদের ‘মাইগ্রেশন’ বা পরিভ্রমণের সময়। সেই সময় এক জঙ্গল থেকে বেরিয়ে চেনা পথে অন্য জঙ্গলে যায় তারা। সাধারণত ব্রহ্মপুত্রের তীর বরাবর রাস্তা ধরে তারা। কিন্তু সেতুর কাজের জন্য চারটি স্তম্ভ বসেছে ব্রহ্মপুত্রের বুকে। জঙ্গলের ধারে তৈরি হয়েছে শ্রমিকদের শিবির। রাতেও চলছে নির্মাণ। তার আলো, শব্দই বিপথগামী করছে পশুদের।

তাই বন দফতর ও পশুপ্রেমীরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন— রাজ্য সরকার, বনমন্ত্রী ও নির্মাণসংস্থার কাছে চিঠি পাঠিয়ে অন্তত ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ পর্যন্ত রাতে নির্মাণকাজ বন্ধ রাখতে আবেদন জানানো হবে। রাতে শব্দ বন্ধ হলে কাজিরাঙা থেকে বেরিয়ে আসা প্রাণীরা উত্তর দিকে না গিয়ে চেনা পথে চলবে। অন্য দিকে, এ দিন মানস জাতীয় উদ্যানের বাইরের অংশ জবরদখল করে থাকা ৭২ জনকে গ্রেফতার করে বনদফতর ও পুলিশ। উচ্ছেদ করা হয় অনেক বেআইনি ঝুপড়ি।

Royal Bengal Tiger
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy