সেবা: রাঁচীর রিমস চত্বরে সেই অ্যাম্বুল্যান্স। নিজস্ব চিত্র
রাঁচীর রাজেন্দ্র ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্স (রিমস) হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে এসে শেষ কড়িটুকুও নিঃশেষ হয়ে গিয়েছিল গুমলার হতদরিদ্র পরিবারটির। তা-ও বাঁচাতে পারেননি প্রিয়জনকে। দেহ গ্রামে নিয়ে যাওয়ার খরচ জোগাড় করতে নাজেহাল অবস্থা তখন। ঠিক সেই সময়েই এগিয়ে এলেন কয়েক জন যুবক। তাঁরা জানালেন, হাসপাতাল থেকে দেহ বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব তাঁরা নিচ্ছেন। এর জন্য কোনও টাকা লাগবে না। প্রিয়জন হারানোর দুঃখের মধ্যেও অথৈ জলে পড়া পরিবারের সদস্যদের মুখে ফুটল অসীম কৃতজ্ঞতার হাসি।
এ ভাবেই রিমসে বহু গরিব পরিবারের মুখে হাসি ফোটাচ্ছেন ওই যুবকেরা। ঝাড়খণ্ডের সব থেকে বড় সরকারি হাসপাতাল, রিমসে রোজই উপচে পড়ে ভিড়। সারা রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে এখানে চিকিৎসা করতে আসেন মানুষ। রোগীদের মধ্যে অনেকেই অত্যন্ত দরিদ্র। এই অসহায় মানুষদের পাশেই দাঁড়িয়েছেন রাঁচীর কয়েকজন তরুণ ব্যবসায়ী। রিমসের সামনে একটা চেয়ার টেবিল নিয়ে বসে থাকেন তাঁরা বা তাঁদের প্রতিনিধিরা। কাছেই পার্ক করা থাকে একটি অ্যাম্বুল্যান্স ও একটি শববাহী গাড়ি। বিনামূল্যে মৃতদেহ গ্রাম পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়াই হোক অথবা মুমূর্ষু রোগীকে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া, কিংবা সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কাজটি ওঁরা করে যাচ্ছেন সাত মাস ধরে।
ওঁরা এই উদ্যোগের নাম দিয়েছেন ‘জ়িন্দেগি মিলেগি দোবারা’। সংগঠনের অন্যতম সদস্য অশ্বিনী রাজঘরিয়ার কথায়, ‘‘ওড়িশার দানা মাঝির ঘটনাটি আমাদের নাড়িয়ে দিয়েছিল। এক জন মানুষের কাছে পয়সা না থাকায় তাঁর স্ত্রীর মৃতদেহ কাঁধে করে নিয়ে যাচ্ছেন স্বামী! এই তখনই আমরা কয়েক জন মিলে রিমসে শুরু করি এই পরিষেবা।’’ সংগঠনের সকল সদস্যই নিজের নিজের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠিত। অপর এক সদস্য রাহুল কুমার বলেন, ‘‘ব্যবসার কাজে আমরা ব্যস্ত থাকায় হয়তো সব সময় রিমসে থাকতে পারি না। কিন্তু আমাদের প্রতিনিধিরা সব সময়েই রিমসের সামনে থাকেন।’’ প্রথম পর্বে রাঁচী থেকে একশো কিলোমিটারের মধ্যে এই পরিষেবা চালু হলেও এখন পুরো ঝাড়খণ্ডেই এই নিঃশুল্ক পরিষেবা চলছে। রাচীর জেলাশাসক রাই মহিমাপৎ রাই এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, এই সামাজিক পরিষেবার জন্য জেলা প্রশাসনও ওই সংগঠনকে প্রয়োজনীয় সাহায্য করবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy