This Man Bought the first Super Computer In India, what happened then dgtl
URL Copied
দেশ
Asian Paints: ৫২ বছর আগে দেশের প্রথম সুপার কম্পিউটার কিনেছিলেন ইনি, তার পর...
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা ২১ জানুয়ারি ২০২২ ০৭:০১
Advertisement
১ / ১৯
বিশ্বের একমাত্র সংস্থা যার ব্যবসা প্রতি তিন বছর অন্তর দ্বিগুণ বেড়ে যায়। গত ছ’দশক ধরে প্রতি বছর আয়ও বেড়েছে ২০ শতাংশ করে। পৃথিবীতে আর কোনও সংস্থার এমন সাফল্য নেই। আর এই সংস্থার মালিক একজন ভারতীয়। শুধু তা-ই নয় তিনিই প্রথম ভারতীয় যিনি সুপার কম্পিউটার কিনেছিলেন।
২ / ১৯
নাম চম্পকলাল চোক্সি। বাড়ির রঙের ব্যবসায়ী চম্পকের বাড়ি পঞ্জাবে। ১৯৭০ সালে তিনি আট কোটি টাকা খরচ করেছিলেন সুপার কম্পিউটার কেনার জন্য। শখে নয়, ব্যবসার কাজে লাগাবেন বলে।
Advertisement
Advertisement
৩ / ১৯
তারপর থেকে ওই আট কোটিই হাজার হাজার কোটি হয়ে ফিরে এসেছে চম্পকের কাছে। কী ভাবে সেই গল্পই বলব।
৪ / ১৯
দেশে তখনও সাধারণ কম্পিউটারের ব্যবহারই সে ভাবে শুরু হয়নি। যে ইসরো আজ চাঁদে চন্দ্র যান, মঙ্গলে মঙ্গল যান পাঠাচ্ছে তারাও ভাবেনি সুপার কম্পিউটার কেনার কথা। ১৯৮০ সালে সুপার কম্পিউটার কেনে ইসরো। কিন্তু চম্পক তার দশ বছর আগেই ভেবেছিলেন সাফল্যের তুঙ্গে পৌঁছতে হলে তাঁর একটি সুপার কম্পিউটার দরকার।
Advertisement
৫ / ১৯
রঙের ব্যবসায়ী চম্পক তখন বেশ সফল। তাঁর ১৮ বছরের পুরনো রঙের কোম্পানি ‘এশিয়ান পেইন্টস’ বছরে ২৩ কোটি টাকার আয় দেয়। প্রাইভেট থেকে পাবলিক লিমিটেডেও উত্তরণ হয়েছে সংস্থার। কিন্তু চম্পক সেখানে থেমে থাকতে চাননি। তিনি চাইছিলেন ব্যবসা আরও ফুলে ফেঁপে উঠুক। কিন্তু তা কী ভাবে সম্ভব? এই প্রশ্নেরই জবাব ছিল— সুপার কম্পিউটার।
৬ / ১৯
আসলে একটি গুরুত্বপূর্ণ সত্য কথা অনেকের আগে বুঝতে পেরেছিলেন চম্পক। সেটা এই যে, সাফল্যের চাবি লুকিয়ে আছে জ্ঞানে। আর জ্ঞান আসে তথ্য থেকে। গ্রাহক কী চাইছেন, কখন চাইছেন, আর কোনটা চাইছেন না, তা বুঝতে পারলেই অর্ধেক কেল্লা ফতে। বাকি কাজ করবে ওই সুপার কম্পিউটার।
৭ / ১৯
চম্পকের এ ব্যাপারে স্বচ্ছ ধারণা ছিল। তিনি ঠিক করেন গ্রাহকের থেকে পাওয়া যাবতীয় তথ্য ভরে দেওয়া হবে কম্পিউটারে। তারপর অঙ্ক কষে সুপার কম্পিউটারই বলে দেবে কোন এলাকার গ্রাহক কোন সময়ে কী রঙ কিনতে আসবেন। এই তথ্য জানা থাকলে সময় মতো গ্রাহকের মুখের কাছে তার চাহিদার জিনিস পৌঁছে দিতে পারলেই সাফল্য পদানত।
৮ / ১৯
একঝলকে এই অঙ্ক জটিল মনে হতে পারে। কিন্তু আসলে জলবৎ তরলং। অতিরিক্ত এবং অপ্রয়োজনীয় খরচ কমানোর সোজা সাপ্টা হিসেব। সাধারণ সংসারে মা-কাকিমারা যা আকছার করে থাকেন। প্রয়োজনীয় জিনিসে খরচ বাড়িয়ে অদরকারি খরচ বাদ দেওয়া। চম্পকও তা-ই করেছিলেন। যার ফল তাঁর মৃত্যুর ২২ বছর পরেও প্রতি মুহূর্তে হাতে পাচ্ছে ‘এশিয়ান পেন্টস’।
৯ / ১৯
গত ছ’ দশক ধরে প্রতি বছর ২০ শতাংশ করে উপার্জন বেড়েছে এশিয়ান পেন্টসের। এই মুহূর্তের সবচেয়ে বড় এবং লাভজনক সংস্থা অ্যামাজনেরও এমন রেকর্ড নেই।
১০ / ১৯
এখানেই শেষ নয়,এতদিন প্রতি তিন বছরে এশিয়ান পেন্টসের ব্যবসা দ্বিগুণ করে বাড়ছিল। গত দেড় বছরে সেই রেকর্ডও ফিকে হয়েছে। তিন বছরের বদলে স্রেফ দেড় বছরেই ব্যবসা দ্বিগুণ বাড়িয়ে নিয়েছে চম্পকের সংস্থা।
১১ / ১৯
কিন্তু কী করে হল এই লক্ষ্যপূরণ। এর পিছনেও সুপার কম্পিউটার। চম্পক তাঁর বিশ্বস্ত সুপার কম্পিউটারের ভরসাতেই সত্তরের দশকের মাঝামাঝি একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেন। তিনি ঠিক করেন গ্রাহকদের কাছে তাঁর সংস্থার তৈরি রঙ পৌঁছে দেওয়ার জন্য তিনি আর ডিস্ট্রিবিউটর এবং হোলসেলারদের উপর ভরসা করবেন না।
১২ / ১৯
সাধারণত সংস্থার উৎপাদনজাত পণ্য ডিস্ট্রিবিউটর এবং হোলসেলারদের কাছে মজুত করা থাকে। গ্রাহক কী ধরনের জিনিস চান তা ডিলার জানালে, প্রয়োজনীয় পণ্য পৌঁছে যায় ডিলারের হাতে। চম্পক দেখেন, এই প্রক্রিয়ায় রঙের দামের ২০ শতাংশ দিতে হয় ডিস্ট্রিবিউটারদের। হোল সেলারদের কাছে যায় আরও ১০ শতাংশ। এরপর ডিলারদের ভাগ দিয়ে সংস্থার হাতে আসে রঙের দামের ৬০ শতাংশ। ফলে কম লাভ। চম্পক গোটা প্রক্রিয়াটাই বদলে দেন।
১৩ / ১৯
তিনি ঠিক করেন ডিস্ট্রিবিউটর এবং হোলসেলারদের তিনি মাঝে রাখবেন না। তাঁর সংস্থা সরাসরি যোগাযোগ রাখবে ডিলারদের সঙ্গে। ডিলারদের রঙ মজুত রাখার জায়গা বা ক্ষমতা নেই। চম্পক জানিয়ে দেন মজুত করার দরকারও নেই। যে সময়ে যে ডিলারের কাছে যে রঙ পৌঁছনো দরকার তা সময়মতো পৌঁছে দেবে তার সংস্থাই। এমনকি রং বিক্রি না হলে তা ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থাও করবে। চম্পক জানান, প্রতি তিনঘণ্টা অন্তর দিনে চার বার সংস্থার গাড়ি যাবে ডিলারের কাছে। তারাই এই কাজ করবে।
১৪ / ১৯
তথ্য বলছে, চম্পক যখন এই সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন তখন এশিয়ান পেন্টসের ৪০ হাজার ডিলার। তাঁদের কাছে দিনে চার বার পৌঁছনো মানে দিনে ১ লক্ষ ৬০ হাজার বার গাড়ি পৌঁছবে ডিলারের কাছে। চম্পক এই হিসেব করেননি তা নয়, তবে পিছিয়ে আসেননি। কারণ তিনি জানতেন বিষয়টি অসম্ভব নয়। কেন না তাঁর কাছে তথ্য আছে। আর আছে সুপার কম্পিউটার।
১৫ / ১৯
এশিয়ান পেন্টসের ডিলাররা বলছেন, তাঁদের দোকানে এশিয়ান পেন্টসের রং মজুত রাখতে হয় না। এশিয়ান পেন্টসের কোন রং কতটা পরিমাণে বিক্রি হচ্ছে তার হিসেবও রাখতে হয় না। তিন ঘণ্টা অন্তর সংস্থার গাড়ি এসে যে রং এবং যে পরিমাণ রং দিয়ে যায়, তা তিনঘণ্টার মধ্যে বিক্রিও হয়ে যায়।
১৬ / ১৯
সংস্থার আঞ্চলিক সেলস ম্যানেজারদের কাছেও, কী রঙ বিক্রি হয় তার তথ্য নেই। তাঁরা জানাচ্ছেন, প্রতিদিন সকালে তাঁদের কাছে একটি যান্ত্রিক স্বয়ংপ্রেরিত ইমেল পৌঁছয়। তাতেই লেখা থাকে দিনের কোন সময়ে কোথায় কী রং নিয়ে গাড়ি যাবে। তাঁদের কাজ শুধু তত্ত্বাবধান করা।
১৭ / ১৯
যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতের কোন প্রান্তের কোনও ডিলারের কাছে দিনের কোন সময়ে কী রং কতটা পরিমাণে বিক্রি হবে তা মুহূর্তে বলে দিতে পারবেন এশিয়ান পেন্টসের যে কোনও দায়িত্বপ্রাপ্ত। আর জবাব হবে ৯৭ শতাংশ ঠিক। কারণ—সুপার কম্পিউটার।
১৮ / ১৯
৫০ বছর ধরে গ্রাহকদের পছন্দ অপছন্দের হিসেব গুলে খেয়েছে সুপার কম্পিউটার। কোন রঙের বিক্রি সর্বাধিক, কোন রং কত পরিমাণে বিক্রি হয়, কোন রঙের কোন আকারের টিনের সবচেয়ে বেশি চাহিদা এই সব তথ্য রয়েছে চম্পকের সুপার কম্পিউটারের কাছে। ফলে ভুলের কোনও জায়গা নেই। জায়গা নেই অনিশ্চয়তার। এমনকি অকারণ রং মজুত করারও। ডিস্ট্রিবিউটার এবং হোল সেলারদের তাই অনায়াসেই পাশ কাটাতে পেরেছে এশিয়ান পেন্টস। রঙের দামের ৩ শতাংশ ডিলারদের দিয়ে বাকি ৯৭ শতাংশই ঘরে তোলে এই সংস্থা। সৌজন্যে সুপার কম্পিউটার।
১৯ / ১৯
এশিয়ান পেন্টসই ভারতে এক মাত্র সংস্থা যারা উৎপাদিত পণ্যের ৯৭ শতাংশ মূল্যই নিজেরা পায়। বাকি সমস্ত সংস্থা যাদের মজুতকরণের উপর নির্ভর করতে হয়, তাদের হাতে আসে মোট পণ্য মূল্যের ৬০ শতাংশ। এমনকি ভারতে রঙ প্রস্তুতকারী প্রথমসারির বাকি দুই সংস্থাও এ ব্যাপারে এশিয়ান পেন্টসের ধারে কাছে নেই। আর তার একমাত্র চম্পকের ভাবনা এবং তাঁর সুপার কম্পিউটার।