Advertisement
০৩ মে ২০২৪

সারা রাত ধরে তাণ্ডব চালাল একটা দানব

বুধবার সারাদিন ধরে বৃষ্টি। সমুদ্র ছিল উত্তাল। তিতলি তখনও আমাদের গোপালপুর ছোঁয়নি।

তপন সাহু (গোপালপুরের এক হোটেলের ম্যানেজার)
শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০১৮ ০৩:৪৫
Share: Save:

বুধবার সারাদিন ধরে বৃষ্টি। সমুদ্র ছিল উত্তাল। তিতলি তখনও আমাদের গোপালপুর ছোঁয়নি। সন্ধ্যাবেলা পুলিশের এক পদস্থ কর্তা হোটেলে এসে জানিয়ে গেলেন, তিতলি গোপালপুরের সমুদ্রকে স্পর্শ করবে বুধবার মাঝরাত থেকে বৃহস্পতিবার ভোর রাতের মধ্যে। পর্যটক ও স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য গোপালপুর বাজারের কাছে ‘সাইক্লোন সেন্টার’ তৈরি করেছে প্রশাসন। তবে আমাদের হোটেলের পর্যটকরা জানালেন, তাঁরা যাবেন না ওই সাইক্লোন সেন্টারে। হোটেলেই সারা রাত জেগে তাঁরা তিতলির তাণ্ডবের ‘লাইভ’ দেখবেন।

বুধবার রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ চলে গেল হোটেলের বিদ্যুৎ। বেড়ে গেছে হাওয়ার গতি। বৃষ্টি নামল আরও জোরে। হোটেলের কর্মীদের সমস্ত জানলা-দরজা ‘লক’ করে দিতে বললাম। পর্যটকদের জানানো হল, কেউ যেন হোটেলের বাইরে না বেরোন। হোটেলের দোতলার একটি হলঘরে বড় কাচের জানলা দিয়ে সমুদ্রের অনেকটা দেখতে পাওয়া যায়। সকলে সেখানেই ছিলাম। ছিলেন একজন পুলিশ অফিসারও।

রাত বাড়ছে আর সমুদ্র ফুঁসছে। ঘড়ির কাঁটায় তখন রাত সাড়ে ১২টা। মোবাইলের ওয়েদার অ্যাপে দেখলাম হাওয়ার গতি ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার ছাড়িয়েছে। যে সব পর্যটকেরা ‘তিতলি লাইভ’ দেখবেন বলে উৎসাহে ফুটছিলেন, তাঁদের মুখচোখ তখন ফ্যাকাসে। আমারও বেশ ভয় করছিল। মনে পড়ে যাচ্ছিল, ১৯৯৯ সালের সুপার সাইক্লোনের কথা। তখন ছোট ছিলাম। কিন্তু তার তাণ্ডবলীলার ছবি স্পষ্ট মনে আছে।

রাত আড়াইটে। ঝড়ের গতি আরও বাড়ল। বালির ঝড় বইছে বলে বাইরে কিছু দেখতে পাচ্ছিলাম না। সমুদ্রের গর্জন ও হাওয়ার শব্দে মনে হচ্ছিল, বাইরে কোনও দানব তাণ্ডব চালাচ্ছে। গিলে ফেলতে চাইছে আমাদের হোটেলটা। মোবাইল অ্যাপে দেখলাম, হাওয়ার গতি ১৪০ থেকে ১৫০ কিলোমিটার।

বৃহস্পতিবার ভোর ৫টা ২০ মিনিট। আবহাওয়া দফতর জানাল, তিতলি ঢুকে পড়েছে গোপালপুরে। হোটেলের কয়েকটা জানলার কাচ পরপর ভেঙে পড়ল। সমুদ্রের গা ঘেঁষা গাছগুলো নুয়ে যাচ্ছে মাটিতে। সমুদ্রের ফুঁসতে থাকা জল ছুঁয়ে যাচ্ছে আমাদের হোটেলের দেওয়াল। হোটেলের বাইরে একটা গাড়ি ছিল। খেলনা-গাড়ির মতো উল্টে গেল সেটা। তিতলির ঘণ্টায় ১৭০ কিলোমিটার গতিবেগের সামনে আমরা তখন অসহায়।

তাণ্ডব চলল আধঘণ্টা। সকাল ৬টা নাগাদ হাওয়ার গতি কিছুটা কমল। মনে হল, ফাঁড়া কাটল। কিন্তু সাড়ে ৬টা থেকে ফের হাওয়ার গতি বাড়ল। বাড়ল বৃষ্টি।

এবার কি তবে দ্বিতীয় স্পেল? নাহ্! বেঁচে গেলাম। মিনিট পনেরো পরেই শান্ত হল তিতলি!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Devastation Cyclone Titli
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE