Advertisement
E-Paper

ত্রিপুরায় তৃণমূলই এখন প্রধান বিরোধী

তৃণমূলের এ যেন দু’হাতেই লাড্ডু! বাংলায় জোটকে দশ গোল দেওয়া, আবার সেই জোটের সৌজন্যে উপরি প্রাপ্তি ত্রিপুরা বিধানসভায় বিরোধী দলের মর্যাদা।

প্রভাত ঘোষ ও বাপি রায়চৌধুরী

শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০১৬ ০৩:২৭

তৃণমূলের এ যেন দু’হাতেই লাড্ডু! বাংলায় জোটকে দশ গোল দেওয়া, আবার সেই জোটের সৌজন্যে উপরি প্রাপ্তি ত্রিপুরা বিধানসভায় বিরোধী দলের মর্যাদা।

মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিক ভাবে দল ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন ত্রিপুরার ছয় কংগ্রেস বিধায়ক। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি ও ত্রিপুরার পর্যবেক্ষক মুকুল রায়ের উপস্থিতিতে কংগ্রেসের চার বিধায়ক এ দিন বিধানসভার স্পিকার রমেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথের সঙ্গে দেখা করে তাঁকে চিঠি দিয়ে কংগ্রেস ছাড়ার
কথা জানান। কংগ্রেস আরও দুই বিধায়ক সশরীর উপস্থিত থাকতে না পারলেও তাঁদের চিঠি স্পিকারের হাতে তুলে দেন মুকুল রায়রা। পরে স্পিকার ওই দুই বিধায়কের সঙ্গে ফোনে কথা বলে নেন।

ত্রিপুরা বিধানসভায় মোট আসন সংখ্যা ৬০। প্রধান বিরোধী দলের মর্যাদা পেতে কোনও রাজনৈতিক দলের ন্যূনতম ৬ বিধায়ক থাকা বাঞ্ছনীয়। দশ জন বিধায়ক নিয়ে দু’দিন আগে পর্যন্ত সেই মর্যাদা ছিল কংগ্রেসের। এ বার সেটা ছিনিয়ে
নিল তৃণমূল।

পর্যবেক্ষকদের মতে, এমনটা ভবিতব্যই ছিল। পশ্চিমবঙ্গে ভোটে বাম-কংগ্রেস জোটের কারণে কেরলে দু’দলের নেতাদের মধ্যে যেমন অস্বস্তি ছিল, তেমন ছিল ত্রিপুরাতেও। বাংলায় জোটের সিদ্ধান্তে কংগ্রেস হাইকম্যান্ড সবুজ সংকেত দেওয়ার পর থেকেই খোলাখুলি বিরোধিতা শুরু করেছিলেন সুদীপ রায়বর্মনের মতো নেতারা। এমনিতেই ত্রিপুরায় কংগ্রেস দুর্বল। তার ওপর জোটের সিদ্ধান্তের কারণে রাজ্য রাজনীতিতে তাঁদের বাম বিরোধিতা আরও ভোঁতা হয়ে গেল বলে ক্ষুব্ধ ছিলেন রাজ্য নেতারা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে পরামর্শ করে এই মোক্ষম মুহূর্তেই সুদীপদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ান মুকুল। বাংলায় ভোটের প্রচারের জন্য সে সময় ত্রিপুরায় যেতে না পারলেও ফোনে যোগাযোগ রাখছিলেন তিনি। ভোট মিটতেই আগরতলায় গিয়ে দ্রুত ঘর গুছিয়ে ফেলেন মুকুল। এ দিন যা হয়েছে, তা সাংবিধানিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা মাত্র।

তবে শেষ মুহূর্তেও টানটান নাটক ছিল। দলত্যাগ বিরোধী আইন অনুযায়ী দুই-তৃতীয়াংশ বিধায়কের সমর্থন ছাড়া দল ভাঙা যায় না। মুকুলবাবু তাই কমবেশি সব কংগ্রেস বিধায়কের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছিলেন। ৬ জন বিধায়কের সঙ্গে কথা প্রায় পাকা করেও ফেলেছিলেন। এরই মধ্যে সোমবার বিক্ষুব্ধ কংগ্রেস বিধায়ক জিতেন সরকার বিধানসভা থেকে ইস্তফা দিয়ে তাঁর পুরনো দল সিপিএমে ফিরে যান। তৃণমূলের দল ভাঙানোর কৌশল ভেস্তে দিতে সেটা ছিল সিপিএমের চাল। কিন্তু ততক্ষণে কংগ্রেসের আর এক বিধায়ক দিলীপ সরকার তৃণমূলে যোগ দিতে রাজি হয়ে যান। তাই স্বস্তিতে ছিলেন মুকুল। খনার বচন মেনে তৃণমূল নেতৃত্ব স্থির করেন, মঙ্গলে প্রস্তুতি শেষ করে বুধে পা দেবেন। কিন্তু সোমবার বেশ রাতে মুকুলবাবুর কাছে খবর আসে, দলীয় বিধায়কদের বোঝাতে কংগ্রেস হাইকম্যান্ড ভূপেন বরাকে আগরতলায় পাঠাচ্ছে। তাই চকিতে ‘প্ল্যান’ পাল্টে মঙ্গলবার আগরতলায় পৌঁছন মুকুল। ভূপেন যখন পৌঁছন, ততক্ষণে সব সারা। দলের অবশিষ্ট তিন বিধায়ককে ভূপেন আশ্বস্ত করেন, ত্রিপুরায় বামেদের সঙ্গে জোটের কোনও প্রশ্ন নেই।

কংগ্রেসের যে ছয় বিধায়ক এ দিন দলবদল করেন তাঁরা হলেন, সুদীপ রায়বর্মণ, আশিস সাহা, দিলীপ সরকার, প্রাণজিৎ সিংহ রায়, দিবাচন্দ্র রাঙ্খল এবং বিশ্ববন্ধু সেন। এ দিন স্পিকারকে চিঠি দিয়ে রাজ্য তৃণমূল সভাপতি রতন চক্রবর্তী জানান, ওই ছয় বিধায়ককে আনুষ্ঠানিক ভাবে দলে গ্রহণ করেছে তৃণমূল।

তবে প্রশ্ন হল, এই রাজনৈতিক রোমাঞ্চের রেশ ক’দিন থাকবে। এমন অভিজ্ঞতা তৃণমূলের আগেও হয়েছে। ২০০৯ সালে অরুণাচল প্রদেশে এ ভাবেই অন্য দল থেকে পাঁচ বিধায়ক তৃণমূলে যোগ দেন। ২০১১ সালে অসম ও উত্তরপ্রদেশে এক জন করে বিধায়ক অন্য দল থেকে এসে তৃণমূলে যোগ দেন। ২০১২ সালে মণিপুরে তৃণমূলে যোগ দেন স্থানীয় আঞ্চলিক দলের ৭ বিধায়ক। কিন্তু শেষমেশ কেউই থাকেননি।

মুকুলবাবুর অবশ্য বক্তব্য, ত্রিপুরার সঙ্গে অন্যগুলোর মিল খুঁজতে গেলে ভুল হবে। ভাল হোক মন্দ হোক ত্রিপুরার রাজনীতি স্থিতিশীল। বড় কথা হল, পশ্চিমবঙ্গের পরেই দেশের সবচেয়ে বেশি বাঙালি থাকেন এখানে। বাংলার সঙ্গে এ রাজ্যের আবেগের যোগ রয়েছে। তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বাভাবিক আবেদন রয়েছে এখানে। আগরতলায় মুকুল বলেন, ‘‘ত্রিপুরার মানুষ দেখেছেন, সিপিএমকে হারাতে একমাত্র তৃণমূলই পারে। উন্নয়ন করে মানুষের আস্থাও যে তৃণমূল ধরে রাখতে পারে, তাও সবে সবে দেখলেন তাঁরা। ত্রিপুরাতেও তৃণমূল তা করে দেখাবে।’’

তৃণমূলের এই অকাল পৌষ মাসে সঙ্কটে ত্রিপুরা কংগ্রেস। সোমবার গভীর রাতে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি বীরজিৎ সিংহ শেষ চেষ্টা হিসেবে স্পিকারকে চিঠি দিয়ে বিক্ষুব্ধ ছয় বিধায়ককে দলবিরোধী কাজের অভিযোগে ছ’বছরের জন্য বহিষ্কার করার আবেদন জানান। কিন্তু স্পিকার তা গ্রাহ্য করেননি। কারণ তাঁর মতে, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী অভিযুক্তদের আগাম নোটিস দিয়ে জবাব দেওয়ার জন্য উপযুক্ত সময় দেওয়া উচিত ছিল। তা ওনারা করেননি। আমাকেও আগে থেকে জানাননি। তাই এই চিঠির এর কোনও মূল্য নেই।’’ স্বাভাবিক ভাবেই স্পিকারের সিদ্ধান্তে আপত্তি করে সর্বোচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার কথা বলেছেন বীরজিৎ। আবার রাজ্য সিপিএমের মুখপাত্র গৌতম দাশ বলেন, ‘‘এই দলবদল ‘অনৈতিক’। কংগ্রেস ছেড়ে যারা তৃণমূলে গেলেন, তাঁদের উচিত ছিল বিধায়কপদে ইস্তফা দিয়ে মানুষের সমর্থন নিয়ে আসা। যেমন করেছেন জিতেন্দ্র সরকার।’’

কিন্তু সর্বভারতীয় রাজনীতি জানে, এই আফশোস-অসন্তোষের কোনও মূল্য নেই। রাজনীতি সম্ভাবনার খেলা। আর সেই খেলায় বাংলার পর এ বার ত্রিপুরাতেও সোনা ফলাল তৃণমূল।

TMC Tripura
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy