কালো টাকা সাদা করার খুড়োর কল যে মোদী সরকার গোপনে সাজিয়ে রেখেছে, আজ নরেন্দ্র মোদী-অরুণ জেটলির সামনে সে ব্যাপারেই সরকারকে চেপে ধরল তৃণমূল।
সংসদের অধিবেশন শুরু হওয়ার একদিন আগে নোট বাতিল নিয়ে সরব হতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লিতে চলে এসেছেন। ঠিক সেই সময়ই প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সর্বদল বৈঠকে দলের নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এমন একটি মোক্ষম বিষয়ে সরকারকে চেপে ধরলেন, যা নিয়ে খোদ মোদী-জেটলিকেও থতমত খেতে হল। মুখ চাওয়া-চাওয়ি করলেন একে অপরের। তা সত্ত্বেও কোনও যুৎসই উত্তর দিতে পারল না সরকার। একঘর রাজনৈতিক দলের নেতাদের সামনে।
ঘটনাটি কী?
সদ্য একমাস আগে ৩০ সেপ্টেম্বর মেয়াদ শেষ হয়েছে মোদী সরকারের ‘আয়কর ঘোষণা প্রকল্প’। যাঁরা লুকিয়ে-চুরিয়ে কালো টাকা রেখেছিলেন, সেটি ঘোষণা করে সুদ-সেস-জরিমানার পাওনা-গণ্ডা মিটিয়ে নিশ্চিন্তে থাকার সুযোগ দিয়েছিল মোদী সরকার। মেয়াদ শেষে সরকার ঘোষণা করে, প্রায় ৬৫ হাজার কোটি টাকা এই প্রকল্পের আওতায় ঘোষণা হয়েছে। কিন্তু পাওনা-গণ্ডা সেই ব্যক্তিদের দিতে হবে ধাপে ধাপে। প্রথম কিস্তির ২৫ শতাংশ এ বছরের নভেম্বরে। বাকি ২৫ শতাংশ সামনের বছর ৩১ মার্চের মধ্যে। আর বাকি ৫০ শতাংশ সামনের বছর সেপ্টেম্বরের মধ্যে। কিন্তু সেই টাকা সরকারের ঘরে আসার আগেই মোদী এখন নোট বাতিলের ঘোষণা করে দিল।
আর এখানেই সরকারের টুঁটি চেপে ধরলেন তৃণমূলের সুদীপ। প্রধানমন্ত্রীর সামনেই সুদীপ অর্থমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন, ‘‘এই বিপুল অঙ্কের টাকা যে ৫০০ বা হাজারের নোটে পড়বে না, তার কী নিশ্চয়তা আছে? এ ব্যাপারে সরকার কী সতর্কতা অবলম্বন করছে? সময় তো পার হয়ে গিয়েছে, সরকার নীরব কেন?’’ এই প্রশ্ন শুনেই জেটলির দিকে মুখ চাওয়া-চাওয়ি করেন প্রধানমন্ত্রী। জেটলি পরে বলেন, এখনও সেই টাকা সরকারের ঘরে আসেনি। ৩০ নভেম্বর থেকে আসা শুরু করবে।
অথচ, ‘আয়কর ঘোষণা প্রকল্পে’ ঘোষণার বাইরেও যদি কারও কালো টাকা থাকে, তাহলে তো সেই ব্যক্তি এই কালো টাকা দিয়েই সরকারের পাওনা মিটিয়ে দিতে পারেন। অনায়াসে বলতে পারেন, এটাই তাঁর সাদা টাকা। এমনকী শুধুমাত্র প্রথম কিস্তির ২৫ শতাংশ নয়, কেউ যদি মনে করেন কালো টাকা দিয়েই পুরোটা মিটিয়ে দেবেন, তাহলে নোট বাতিলের আড়ালে কালো টাকাকে সাদা করে ফেলতে পারবেন তিনি। অর্থমন্ত্রক অবশ্য বলছেন, বিষয়টি অত সহজ নয়। কারণ, সরকারের ঘরে টাকাটা এলেই তাঁর উৎস ভবিষ্যতে খোঁজ নেওয়া হবে। কালো টাকা ঘোষণার পরেও যদি আরও বাড়তি টাকার হদিস পাওয়া যা, তাহলে তার তদন্ত হবে। প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যেই বলে দিয়েছেন, কেউ বেশি ইমানদার সেজে কালো টাকা ব্যাঙ্কে জমা দিয়ে সাদা করতে গেলেও তাঁকে রেয়াত করা হবে না।
(শেষ)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy