Advertisement
০৪ মে ২০২৪

নেতারহাটে সড়ক-যন্ত্রণা পর্যটকদের

ভয়ঙ্কর সুন্দর। সড়কপথে ‘ছোটনাগপুরের রানি’ হিসেবে পরিচিত নেতারহাটে যাওয়ার অভিজ্ঞতা অনেকটা এমনই।

উধাও পিচ, জীর্ণ গার্ডওয়াল। নেতারহাটে।—নিজস্ব চিত্র।

উধাও পিচ, জীর্ণ গার্ডওয়াল। নেতারহাটে।—নিজস্ব চিত্র।

আর্যভট্ট খান
রাঁচী শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:০৮
Share: Save:

ভয়ঙ্কর সুন্দর।

সড়কপথে ‘ছোটনাগপুরের রানি’ হিসেবে পরিচিত নেতারহাটে যাওয়ার অভিজ্ঞতা অনেকটা এমনই।

পর্যটকদের বেশিরভাগের বক্তব্য, বড় বড় গর্তে ভরে থাকা ওই রাস্তা দিয়ে কার্যত প্রাণ হাতে করে পৌঁছতে হয় নেতারহাটের পাহাড়, অরণ্যে।

নভেম্বর পড়তেই ভ্রমণপিপাসুদের ভিড় জমে নেতারহাটে। অনেকে যান ‘সানসেট’ ও ‘সানরাইজ পয়েন্টে’। ঝাড়খণ্ডে রঘুবর দাস সরকার পর্যটন শিল্প গুরুত্ব দিচ্ছে। পর্যটনকেন্দ্রগুলিতে নতুন পরিষেবা দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হচ্ছে। পর্যটকদের একাংশের
প্রশ্ন, নেতারহাটে পৌঁছনোর আগে প্রায় ২৪ কিলোমিটার বেহাল সড়কের দিকে তা হলে কেন নজর পড়ছে না রাজ্য সরকারের?

রাঁচী থেকে লোহারদাগা ছুঁয়ে নেতারহাটের রাস্তা ভাল। সমস্যা শুরু হয় গুমলার বিষুণপুরের পর থেকে। বানারি থেকে ওঠে পাহাড়ি ঘাঁটি। সেই রাস্তা পৌঁছেছে নেতারহাটে। কলকাতার একদল পর্যটক রাঁচী থেকে ভাড়াগাড়িতে যাচ্ছিলেন নেতারহাট। ওই দলের সদস্য শান্তনু দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘নেতারহাটে যাওয়ার রাস্তার দু’দিকে প্রকৃতির সৌন্দর্য চোখ জুড়িয়ে দেয়। কিন্তু রাস্তাটা এতটাই খারাপ এবং অপ্রশস্ত, যে আতঙ্কের জেরে তা উপভোগ করার উপায় থাকে না। উল্টোদিক থেকে মাঝেমধ্যেই বড় বড় ট্রাক নেমে আসে। কার্যত প্রাণ হাতে নিয়ে ওই পথ পেরোতে হয়েছে।’’

নেতারহাটের কাছেই বক্সাইটের খনি। সারাদিন সেখানে ট্রাক, লরি যাতায়াত করে। আসানসোলের পর্যটক অসীম মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পাহাড়ি রাস্তায় গর্তে ফেঁসে আমাদের গাড়ি খারাপ হয়ে গিয়েছিল। চারপাশ জনশূন্য। ভয় লাগছিল। কোনও পুলিশও দেখতে পাইনি তখন।’’

বেহাল ওই রাস্তা দিয়েই প্রচুর পর্যটক নেতারহাটে আসছেন বলে জানান পর্যটন দফতরের অতিথি নিবাস ‘প্রভাত বিহার’-এর ম্যানেজার সিদ্ধিনাথ কুমার। তিনি বলেন, ‘‘অনেকেই পাহাড়ি রাস্তা নিয়ে অভিযোগ করেন। কিন্তু আমাদের তো কিছুই করার নেই!’’

পর্যটকই শুধু নন, সমস্যায় নেতারহাট আবাসিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী, অভিভাবকরাও। ঝাড়খণ্ডের পাশাপাশি অন্য রাজ্য থেকেও ওই স্কুলে অনেকে পড়তে আসে। প্রধান শিক্ষক বিন্দ্রাচল পাণ্ডে বলেন, ‘‘অভিভাবকরা খারাপ রাস্তা নিয়ে প্রায়ই অভিযোগ করেন। অনেকে জানান, প্রাণ হাতে করে ছেলেমেয়েদের স্কুলে নিয়ে আসতে হয়। বারবার প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট দফতরে চিঠি পাঠানো হয়েছে।’’ স্কুল পরিচালন কমিটির চেয়ারম্যান নরেন্দ্র ভগত বলেন, ‘‘১৫ নভেম্বর স্কুলের প্রতিষ্ঠা দিবস। সে দিন পড়ুয়াদের অভিভাবকরা আসবেন। ওই রাস্তা দিয়ে কী ভাবে তাঁরা পৌঁছবেন তা নিয়ে চিন্তা রয়েছে।’’

নেতারহাটে পৌঁছনোর ওই রাস্তা মেরামত করার দায়িত্ব রাজ্যের গ্রামীণ পরিকাঠামো উন্নয়ন বিভাগের। দফতরের মন্ত্রী নীলকণ্ঠ সিংহ মুণ্ডা বলেন, ‘‘এ বার বর্ষার আগে ঘাটির রাস্তা ভালই ছিল। প্রচণ্ড বৃষ্টিতে পিচ নষ্ট হয়ে গর্ত তৈরি হয়েছে। পূর্ত দফতরের সঙ্গে হাত মিলিয়ে দ্রুত মেরামতির কাজ শুরু হবে।’’ রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী অমর বাউরি বলেন, ‘‘নেতারহাটে ঘাটির পথ এতটা খারাপ জানতাম না। সংশ্লিষ্ট দফতরকে ওই রাস্তা দ্রুত ঠিক করার কথা বলব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

netarhat poor roads
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE