অপেক্ষা। কুশিয়ারার তীরে পুলিশের বাসে বাংলাদেশিরা। সোমবার। শীর্ষেন্দু সী-র তোলা ছবি।
তীরে পৌঁছেও কুশিয়ারা পেরনো হল না ১৭ বাংলাদেশির। এ পারে দাঁড়িয়ে ছিলেন তাঁরা। ও পারে অপেক্ষায় তাঁদের আত্মীয়স্বজন। বিএসএফ-এর মোটরবোট চাপলে কতক্ষণই বা লাগত দেশের মাটিতে পৌঁছতে! তবু তর সইছিল না আব্দুল করিম, রফিকউদ্দিনদের।
কিন্তু শেষ মুহূর্তে অনুমোদন না পাওয়ায় তাঁদের ফেরানো হল শিলচর জেলেই। অবৈধ ভাবে সীমান্ত পেরনোর অপরাধে সেখানেই বন্দি ছিলেন সকলে।
ভোরে হাসিমুখে যে চার দেওয়াল ছেড়ে বেরিয়েছিলেন, বিকেলে চোখের জল মুছতে মুছতে সেখানেই ঢুকলেন সবাই। কবে যে সেই ‘অনুমোদন’ মেলে, তারই প্রতীক্ষায় থাকলেন তাঁরা। করিমগঞ্জের পুলিশ সুপার প্রদীপরঞ্জন করের আশা, দু-তিন দিনের মধ্যে তাঁদের নিজের দেশে পাঠানো সম্ভব হবে।
ওই বাংলাদেশিদের দেশে পাঠাতে ফাইল চালাচালি শুরু হয় গত বছর। দু’দেশের জেলাশাসক ও পুলিশ সুপার পর্যায়ের বৈঠকে ৭৩ জনের তালিকা তুলে দেওয়া হয়েছিল বাংলাদেশের হাতে। গত ১৩ অক্টোবর প্রথম দফায় ১০ জনকে ফিরিয়ে নেয় বাংলাদেশ। দ্বিতীয় দফায় ১৭ জনের নাম-ঠিকানার যথার্থতার কথা ভারত সরকারকে জানিয়ে দেওয়া হয়। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন দুই মহিলাও। সুনামগঞ্জের মৌ দাস ও মাধবপুরের ভগবতী গোয়ালা।
৩১ ডিসেম্বর ঠিক হয়, ৯ জানুয়ারি তাঁদের প্রত্যপর্ণ করা হবে। শিলচর সেন্ট্রাল জেল কর্তৃপক্ষ-সহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে তা জানিয়ে দেওয়া হয়। আজ সকালে শিলচরে করিমগঞ্জ পুলিশের গাড়িতে তাঁদের তুলে দেওয়া হয়। সে সময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রমনদীপ কাউর ও জেল সুপার হরেন কলিতা। সকলের খুশিতে তাঁরাও সন্তোষ ব্যক্ত করেছিলেন।
করিমগঞ্জের কালীবাড়িঘাট সীমান্তে আধঘণ্টা থাকার পর তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয় অসম পুলিশের সীমান্ত শাখার কার্যালয়ে। সব কাগজপত্র পরীক্ষার সঙ্গে বাংলাদেশের হাতে হস্তান্তরের প্রয়োজনীয় নথিও চূড়ান্ত করা হয়। তখন গুয়াহাটি থেকে ফোন আসে, তাঁদের হস্তান্তর করা যাবে না। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের শেষ মুহূর্তের ছাড়পত্র মেলেনি।
প্রদীপবাবু বলেন, সব প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করার পর রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতর কেন্দ্রের কাছে শেষ মুহূর্তের অনুমোদন চায়। কেন্দ্র থেকে রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতর হয়ে সেই অনুমোদন পুলিশ সুপারের কাছে পৌঁছনোর কথা। কিন্তু আজ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক রাজ্যকে শেষ মুহূর্তের অনুমোদন না দেওয়ায় করিমগঞ্জ পুলিশ সমস্যায় পড়ে।
এ দিন যাঁদের বাংলাদেশে হস্তান্তর করার কথা ছিল সেই ১৭ জনই বিভিন্ন সময় করিমগঞ্জে ধরা পড়েছিল। তারা হলেন— আব্দুল করিম (বাড়ি বাংলাদেশের মৌলভিবাজার), রফিক উদ্দিন (মৌলভিবাজার), কবি উসমান (নোয়াখালি), রিয়াজ উদ্দিন (মৌলভিবাজার), আব্দুল রহিম (মৌলভিবাজার), আনিসুর রহমান (কুমিল্লা), সামস উদ্দিন (জকিগঞ্জ), ইসাক উদ্দিন (ব্রাহ্মণবাড়িয়া), বাবুল মুল্লা (চান্দপুর), লালচান্দ মিয়া (চান্দপুর), ভগবতী গোয়ালা (মাধবপুর), মৌ দাস (সুনামগঞ্জ), রাহুল দাস (হবিগঞ্জ), তাফুর মিয়া (হবিগঞ্জ), সাজাহান আলি (ময়মনসিংহ), পঙ্ক্ষী মিয়া (বুবারথল), সুহাগ হুসেন (গোপালগঞ্জ)। করিমগঞ্জের আদালত ২-৩ মাস কারাবাসের নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু দু’দেশের মধ্যে বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি না থাকায় ৩-৪ বছর কাটানোর পরও বাড়ি ফিরতে পারেননি তাঁরা। ছিলেন ডিটেনশন ক্যাম্প নামে চিহ্নিত শিলচর সেন্ট্রাল জেলে।
মৌলভিবাজারের রিয়াজ উদ্দিন জানান, তাঁর পরিবারের লোক ও পারে অধীর আগ্রহে দাঁড়িয়ে ছিলেন। কিন্তু বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেলেন না। তাঁদের জন্য আক্ষেপ করে জেল সুপার হরেন কলিতাও বলেন, ‘‘শাস্তির মেয়াদ কাটিয়ে কেউ বাড়ি ফিরলে ভালই লাগে আমাদের। তার উপর ওঁরা অনেক দিন ধরে আটক ছিলেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy