Advertisement
১৭ মে ২০২৪
নাম জড়াল ছত্তীসগঢ়ের খুনে

মাওবাদী যোগে অভিযুক্ত দুই অধ্যাপক

মাওবাদী-বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ছত্তীসগঢ়ের এক গ্রামবাসীর খুনের ঘটনায় নাম জড়িয়ে গেল দিল্লি ও জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই মহিলা অধ্যাপক-সহ দশ জনের।

দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নন্দিনী সুন্দর। ছবি: সংগৃবীত।

দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নন্দিনী সুন্দর। ছবি: সংগৃবীত।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৬ ০৪:১২
Share: Save:

মাওবাদী-বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ছত্তীসগঢ়ের এক গ্রামবাসীর খুনের ঘটনায় নাম জড়িয়ে গেল দিল্লি ও জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই মহিলা অধ্যাপক-সহ দশ জনের।

গত শুক্রবার বস্তারের কাছে নামা গ্রামে খুন হন শ্যামনাথ বাঘেল নামে এক ব্যক্তি। পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, শ্যামনাথ ওই এলাকার যুবকদের নিয়ে ‘টাঙ্গি বাহিনী’ তৈরি করে মাওবাদী-বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। পরিবারের অভিযোগ, সেই কারণেই তাঁকে হত্যা করেছে মাওবাদীরা। ইতিমধ্যে নিহতের স্ত্রী পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছেন যে, তাঁর স্বামীর হত্যাকাণ্ডে হাত রয়েছে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক নন্দিনী সুন্দর, জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় (জেএনইউ)-এর অধ্যাপক অর্চনা প্রসাদ, দিল্লি জোশী অধিকার সংস্থান-এর বিনীত তিওয়ারি-সহ সাত জন সদস্য এবং সিপিএমের ছত্তীসগঢ় রাজ্য সম্পাদক সঞ্জয় পরাটের।

এই মর্মে অভিযোগ যে জমা পড়েছে, তা স্বীকার করেছেন বস্তারের আইজি শিবরাম কাল্লুরি। তাঁর কথায়, ‘‘প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, দিল্লির ওই অধ্যাপকেরা মাওবাদীদের আমন্ত্রণে বস্তারে এসেছিলেন। সেখানে ভুয়ো পরিচয়ে থেকে মাওবাদীদের সমর্থনে প্রচার করেছিলেন তাঁরা। সে সময়ে শ্যামনাথ এঁদের বিরুদ্ধে সরব হলে তাঁকে পাল্টা হুমকিও দেওয়া হয় বলে অভিযোগ মিলেছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে খুন, অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, সংঘর্ষ লাগানোর মতো অভিযোগ আনা হয়েছে।’’ ২০১১ সালে এই নন্দিনী সুন্দরের আবেদনের ভিত্তিতেই সালওয়া জুডুম অভিযান বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। আজ তাঁদের বিরুদ্ধে আনা সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন নন্দিনী। তাঁর কথায়, ‘‘গত কয়েক মাস আমি বস্তারে যাইনি। অভিযোগ ভিত্তিহীন। আসলে ছত্তীসগঢ়ে সরকারের দমন নীতির বিরুদ্ধে গবেষক, সাংবাদিক, আইনজীবী বা বুদ্ধিজীবীরা সরব থাকায় পরিকল্পিত ভাবে এই ধরনের অভিযোগ আনা হচ্ছে।’’ নন্দিনীর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সমালোচনা করেছেন ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহ। তিনি টুইটারে লিখেছেন, ‘‘অধ্যাপক নন্দিনী আমার দেখা অন্যতম সাহসী ও ভদ্র একজন ভারতীয়। এই ঘটনা ছত্তীসগঢ় সরকারের দুর্নীতিকেই স্পষ্ট করছে।’’ দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অর্চনা বলেন, ‘‘ব্যাপারটা মিথ্যে। কিন্তু (রাজ্য) সরকার যে ভাবে প্রতিবাদীদের পিছনে লাগে, তাতে অবাক হইনি।’’

ছত্তীসগঢ়ে দলের রাজ্য সম্পাদক সঞ্জয়-সহ বাকিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অবিলম্বে প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়েছে সিপিএম পলিটব্যুরো। দলীয় বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘বস্তারের আদিবাসী সমাজের উপর পুলিশের দমন-পীড়নের যে লাগাতার অভিযোগ আসছিল, তা খতিয়ে দেখতেই ওই দলটি গিয়েছিল। দলটি সফর করেছিল ছ’মাস আগে। আর গত শুক্রবার ওই দলের সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়ে। এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে, বিষয়টি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’’ সিপিআই (এমএল) গোটা ঘটনার জন্য আই জি কাল্লুরিকেই দায়ী করেছে। দলের পক্ষ থেকে প্রভাত কুমারের অভিযোগ, ‘‘সিবিআই জানিয়েছে, ২০১১ সালে দন্তেওয়াড়ায় ১৬০ জন আদিবাসীর ঘর পুড়িয়ে দেওয়ার পিছনে হাত ছিল কাল্লুরির। এখন বস্তারে ফের অত্যাচারের একাধিক অভিযোগ উঠেছে, যা নিয়ে সরব ছিল বুদ্ধিজীবীদের ওই দলটি। তাই জাল অভিযোগ এনে মূল ঘটনা চাপা দিতে চাইছেন ওই পুলিশকর্তা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

maoist Murder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE