Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

রাষ্ট্রপুঞ্জে ধাক্কা, তবুও অভিযোগে অনড় পাকিস্তান

রাষ্ট্রপুঞ্জে ধাক্কা খেল ইসলামাবাদ। চলতি সীমান্ত সংঘর্ষের মধ্যেই কাশ্মীর নিয়ে সমঝোতার জন্য হস্তক্ষেপ চেয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব বান কি মুনকে চিঠি দিয়েছিল নওয়াজ শরিফ সরকার। সেই অনুরোধ কার্যত প্রত্যাখ্যান করে রাষ্ট্রপুঞ্জের তরফ থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, এই সমস্যার দীর্ঘমেয়াদি, শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য কোনও তৃতীয় পক্ষ নয়, ভারত এবং পাকিস্তানকেই আলোচনায় উদ্যোগী হতে হবে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:০৬
Share: Save:

রাষ্ট্রপুঞ্জে ধাক্কা খেল ইসলামাবাদ। চলতি সীমান্ত সংঘর্ষের মধ্যেই কাশ্মীর নিয়ে সমঝোতার জন্য হস্তক্ষেপ চেয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব বান কি মুনকে চিঠি দিয়েছিল নওয়াজ শরিফ সরকার। সেই অনুরোধ কার্যত প্রত্যাখ্যান করে রাষ্ট্রপুঞ্জের তরফ থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, এই সমস্যার দীর্ঘমেয়াদি, শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য কোনও তৃতীয় পক্ষ নয়, ভারত এবং পাকিস্তানকেই আলোচনায় উদ্যোগী হতে হবে।

আন্তর্জাতিক মঞ্চে ধাক্কা খেয়ে কূটনৈতিক কারণেই আজ আর ভারতের বিরুদ্ধে সুর চড়ায়নি নওয়াজ শরিফের সরকার। তবু নাছোড় পাকিস্তান এ দিন ইসলামাবাদে হাজির সব বিদেশি কূটনীতিকের কাছে সীমান্তে ও নিয়ন্ত্রণরেখায় সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ জানিয়েছে ভারতের বিরুদ্ধে।

রাষ্ট্রপুঞ্জের সিদ্ধান্তকে ভারত কূটনৈতিক জয় হিসেবেই দেখছে। বিদেশ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে কাশ্মীর প্রসঙ্গকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে টেনে নিয়ে যাওয়ার এই পাক প্রয়াসের আজ কড়া নিন্দা করা হয়েছে। মন্ত্রকের মুখপাত্র সৈয়দ আকবরুদ্দিনের বক্তব্য, “এই ধরনের চেষ্টা আগেও করেছে পাকিস্তান। কোনও লাভ হয়নি, এ বারও লাভ হবে না।”

এ দিনই পাক ডিরেক্টর জেনারেল (মিলিটারি অপারেশনস) ভারতের বিএসএফ-এর ডিজি-র সঙ্গে কথা বলেছেন সীমান্তে উত্তেজনা কমানো নিয়ে। এ দিন কিছুটা সময় ঠান্ডা ছিল সীমান্তের সংঘর্ষ। তবে অশান্তি যে কমে গিয়েছে এমন নয়। কিছু ক্ষণ শান্ত থাকার পর আবার শুরু হয়েছে গোলাগুলি। পুঞ্চ এলাকায় নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর ১০টি ভারতীয় পোস্ট নিশানা করে দু’দফায় মর্টার বর্ষণ করেছে পাক সেনা। এক জন মহিলা তাতে আহত হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।

পাক সন্ত্রাসের জবাবে যে ভারত হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না, তা লাগাতার বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে বিদেশ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে। আকবরুদ্দিন এ দিন বলেন, “ভারতের অবস্থান খুবই স্পষ্ট। তা হল, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বকেয়া সমস্ত বিষয়ের শান্তিপূর্ণ সমাধান করতে হবে পূর্ব-নির্ধারিত দু’টি কাঠামোর মধ্যে। এক, সিমলা চুক্তি এবং দুই, লাহৌর ঘোষণাপত্র। আমরা একাধিক বার জানিয়েছি, ভারত যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে আলোচনায় রাজি। সেখানে সমস্ত বকেয়া বিষয় নিয়েই আলোচনা হতে পারে। কিন্তু পাকিস্তান যা করছে তাতে মনে হচ্ছে, তারা এই নীতিতে বিশ্বাসী নয়।”

প্রায় দু’সপ্তাহ ধরে সংঘর্ষ এবং মর্টার বর্ষণ চলছে সীমান্তে। তার উপরে আবার গোটা ঘটনার দায় ভারতের কাঁধে চাপিয়েছে পাকিস্তান। দু’দিন আগে পাক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সরতাজ আজিজ রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিবকে একটি চিঠি দিয়ে সরাসরি ভারতের বিরুদ্ধে নালিশ করেছেন। এটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে, পাকিস্তান এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি করতে চাইছে যাতে তৃতীয় পক্ষকে দিয়ে ভারত-পাক সমঝোতা করানো সম্ভব হয় এবং ভারতকে কাশ্মীর প্রশ্নে কোণঠাসা করা যায়। আকবরুদ্দিনের কথায়, “আলোচনার রাস্তা ইসলামাবাদ থেকে লাহৌর হয়ে নয়াদিল্লিতে আসার কথা। পাকিস্তান যদি সেই পথ ঘুরিয়ে দিতে চায় তা হলে কাজের কাজ কিছুই হবে না। তৃতীয় পক্ষের জায়গাই নেই ভারত-পাক সম্পর্কে।”

গত কালই সেনা গোয়েন্দারা রিপোর্ট দিয়েছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী অরুণ জেটলিকে। সেখানে বলা হয়েছে পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের পূর্ণ সমর্থন নিয়েই সীমান্তে পাক হামলা চলছে। আজ শরিফের উদ্দেশ্যে পাল্টা বার্তা দিয়ে বলা হয়েছে, ইসলামাবাদ যত দিন এই হিংসা চালিয়ে যাবে, ভারত প্রত্যাঘাত করবে। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্রের কথায়, “আন্তর্জাতিক সীমান্ত এবং নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য অবিলম্বে পদক্ষেপ করুক পাকিস্তান। নয়তো আমাদের সেনা তার যোগ্য জবাব দেবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE