উত্তরপ্রদেশের রাজনীতিতে নেতা-মাফিয়া যোগাযোগের ইতিহাস নতুন নয়। বিকাশ দুবেও তার ব্যতিক্রম নয়। ১৯৯০-এর মাঝামাঝি রাজনীতিতে পা দেয় মধ্য কুড়ির বিকাশ। সুযোগ বুঝে কখনও জনতা দল, কখনও বিজেপি, কখনও বিএসপি-তে যাওয়া চৌবেপুরের বিধায়ক হরিকিষেণ শ্রীবাস্তব ছিল তার রাজনীতির ‘গুরু’। সেই সূত্রেই নিজের গ্রাম বিকরু এবং লাগোয়া বেশ কিছু এলাকায় অখণ্ড দাপট ছিল তার। সেটাকে কাজে লাগিয়েছে রাজ্যে ক্ষমতাসীন দলগুলি। যে কারণে থানায় ঢুকে বিজেপির মন্ত্রীকে খুন করার পরেও তার বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষী দেয়নি! নিজে এক সময় বিকরু লাগোয়া ঘিমাউ থেকে জেলা পঞ্চায়েত ভোটে জিতেছিল বন্দুকের জোরে। সেই জোর কাজে লাগিয়েই বিকরু এবং লাগোয়া একাধিক পঞ্চায়েতে কে জিতবে, তা ঠিক করত বিকাশ। নিজের স্ত্রী রিচা দুবেকেও ওই বন্দুকের জোরেই জিতিয়েছিল জেলা পঞ্চায়েত আসনে।
বিতর্কিত এনকাউন্টার
জুন, ২০০৪
ইশরাত জহান এনকাউন্টার
• ইশরাত-সহ চার জনকে মারে গুজরাত পুলিশ
• অভিযোগ: তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে হত্যার ষড়যন্ত্র
নভেম্বর, ২০০৫
গুজরাত পুলিশের সোহরাবুদ্দিন শেখ এনকাউন্টার
• অভিযোগ: জঙ্গি ও আইএসআইয়ের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে সাম্প্রদায়িক হিংসা ছড়ানো, এক নেতাকে হত্যার ছক
ডিসেম্বর, ২০০৬
তুলসীরাম প্রজাপতি এনকাউন্টার
• অভিযোগ: গুজরাত পুলিশের হেফাজত থেকে পালানোর চেষ্টা
নভেম্বর, ২০০৬
• মুম্বইয়ে হত গ্যাংস্টার ছোটা রাজনের ছায়াসঙ্গী রামনারায়ণ গুপ্ত
সেপ্টেম্বর, ২০০৮
বাটলা হাউস এনকাউন্টার
• অভিযোগ: ২০০৮ দিল্লি বিস্ফোরণে যুক্ত জঙ্গিরা ওই বাড়িতে লুকিয়ে ছিল
ডিসেম্বর, ২০০৮
ওয়ারাঙ্গল এনকাউন্টার
• অ্যাসিড হামলায় তিন অভিযুক্তকে হত্যা।
• অভিযোগ: কলেজ ছাত্রী এবং পুলিশের উপর হামলা
জুলাই, ২০১০
• মহারাষ্ট্রের জোগাপুল জঙ্গলে তল্লাশির সময়ে এনকাউন্টারে হত মাওবাদী নেতা চেরাকুরি রাজকুমার।
এপ্রিল, ২০১৫
হত ৫ সিমি সদস্য
• পাঁচ জনকে কোর্টে নিয়ে যাচ্ছিল তেলঙ্গানা পুলিশ। তখনই পালানোর উদ্দেশে পুলিশের উপরই হামলা করে তারা
সেপ্টেম্বর, ২০১৮
নিহত অ্যাপল সংস্থার কর্মী বিবেক তিওয়ারি
• অভিযোগ: পুলিশ গাড়ি দাঁড় করাতে বললেও তিনি তা করেননি
ডিসেম্বর, ২০১৯
তেলঙ্গানা এনকাউন্টার
• চিকিৎসককে গণধর্ষণে অভিযুক্ত চার জনকে হত্যা
• অভিযোগ: তদন্তের জন্য ঘটনাস্থলে নিয়ে গেলে তারা পালানোর চেষ্টা করেছিল
কানপুরের ত্রাস হয়ে ওঠা বিকাশের দাপটের কথা জানত সব দলই। রাজ্যে ক্ষমতাসীন দলের হাত বহু বছর ধরে মাথার উপর থাকায় কখনও, কোনও মামলায় জামিন পেতে অসুবিধা হয়নি বিকাশের। সেই জোরেই ২০১৮ সালে, যোগী জমানায় শেষ বার জামিন পেয়েছিল বিকাশ। গত কয়েক বছর ধরে বিজেপিতে নাম লেখানোর চেষ্টা করছিল।
আরও পড়ুন: ‘সংঘর্ষে’ নিহত উত্তরপ্রদেশের বাহুবলী বিকাশ, হুবহু মিলে গেল ‘ভবিষ্যদ্বাণী’
আরও পড়ুন: হাসছেন সাইবারাবাদের ‘এনকাউন্টার স্পেশালিস্ট’
চৌবেপুর আসনটি লুপ্ত হয়ে যাওয়ায় রানিয়া বিধানসভা কেন্দ্রে দাঁড়ানোর অঙ্কও কষছিল বিকাশ। একাধিক সূত্রে বলা হচ্ছে, ২০২২ সালে রানিয়া কেন্দ্রে দাঁড়ানো এক রকম নিশ্চিত ছিল বিকাশের। বিজেপির টিকিট না পেলে বিএসপি-র হয়ে। যে কারণে এ দিন বিকাশের মৃত্যুর খবরে অনেকেই কটাক্ষ করে বলেছেন, ‘উত্তরপ্রদেশের পরবর্তী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আর হওয়া হল না বিকাশ দুবের!’
আরও একটি প্রশ্ন। প্রতিবার উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন দলের নিবার্চনী প্রতিশ্রুতির অন্যতম থাকে ‘জঙ্গলরাজ খতমে’র প্রতিশ্রুতি। সেই জঙ্গলরাজ খতম কবে হবে? নাকি জন্ম নেবে আরও অনেক বিকাশ? ঠিক এই আশঙ্কাই করেছেন বিকাশের হাতে নিহত এক পুলিশকর্মীর বাবা। এ দিন তিনি বলেছেন, ‘‘এক বিকাশ মারা গিয়েছে, ওর জায়গায় দশ বিকাশ উঠে আসবে!’’