শিলচর পুরসভার নম্বরহীন গাড়ি। ছবি: স্বপন রায়।
জঞ্জাল সাফাইয়ের জন্য দফায় দফায় গাড়ি কেনা হয়েছিল শিলচর পুরসভায়, কিন্তু সেগুলির রেজিস্ট্রেশন নম্বরই নেই! নেই কোনও কাগজও। এমনকী রেজিস্ট্রেশন নম্বর ছিল না পুরপ্রধানের জন্য বরাদ্দ গাড়িরও!
পুরসভা সূত্রে খবর, পুরপ্রধানের গাড়িটি কেনা হয়েছিল ২০১২ সালে। সব কথা জেনে নতুন পুরপ্রধান নীহারেন্দ্র নারায়ণ ঠাকুর নথিবিহীন গাড়িগুলির ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। তিনি নির্দেশ দিয়েছেন, রেজিস্ট্রেশন নম্বর ছাড়া পুরসভার কোনও গাড়ি রাস্তায় নামবে না। নিজেও নম্বরবিহীন গাড়িতে উঠবেন না। এর পরই দৌড়ঝাঁপ করে পুরকর্তারা তাঁর গাড়ির রেজিস্ট্রেশন করান। সঙ্গে তিনটি জঞ্জাল নিষ্কাশন গাড়ির নম্বর মেলে। অন্য গাড়িগুলি কবে রাস্তায় নামতে পারবে, তা নিয়ে খোদ নীহারবাবুই সংশয়ে রয়েছেন।
পুরপ্রধান জানান, নম্বরবিহীন মোট ১৩টি গাড়ি রয়েছে শিলচর পুরসভায়। তার মধ্যে একমাত্র পুরপ্রধানের জন্য বরাদ্দ গাড়ির ইঞ্জিন নম্বর, চেসিস নম্বর লেখা কাগজ মিলেছিল। সে জন্য রেজিস্ট্রেশন নম্বর পেতে সমস্যা হয়নি। নীহারবাবুর বক্তব্য, কয়েক বছর আগে ওই গাড়িটি কেনা হলেও রেজিস্ট্রেশন নম্বরের জন্য আবেদন করেননি কেউ। একই ভাবে কাগজপত্র সংগ্রহ করে আরও তিনটি গাড়ির নম্বর নিয়েছেন তাঁরা। বাকি ন’টি গাড়ির কোনও কাগজপত্র পুরসভায় নেই। গাড়ি কেনার উল্লেখ রয়েছে, বিল মেটানোর হিসেব আছে, কিন্তু গাড়ির কাগজ নেই। নীহারবাবু জানান, তিনি এখন বিল মেটানোর কাগজপত্র দেখে গাড়ি বিক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।
এ সবের জন্য তাঁর পূর্বসূরি বর্তমান সাংসদ সুস্মিতা দেবের দিকেই আঙুল তুলছেন নীহারবাবু। তিনি বলেন, ‘‘অধিকাংশ গাড়িই সুস্মিতা দেবের আমলে কেনা। কয়েকটি কেনা হয়েছিল বীথিকা দেব পুরপ্রধান থাকার সময়।’’
নম্বরবিহীন গাড়িগুলি বসিয়ে রাখায় শহরে জঞ্জাল নিষ্কাশনে সমস্যা হচ্ছে বলে জানিয়ে প্রবীণ আইনজীবী নীহারবাবু বলেন, ‘‘তাই বলে পুরসভাকে তো দিনের পর দিন আইন ভাঙতে দেওয়া যায় না!’’ তাঁর অভিযোগ, গাড়ির মতোই ঝামেলা রয়েছে জঞ্জাল ফেলার জায়গা নিয়েও। সরকার পুরসভাকে মেহেরপুরে ৪৬ বিঘা জমি দিয়েছিল জঞ্জাল ফেলার জন্য। পরে সেখানকার ১২ বিঘা জমি অন্য সংস্থাকে দিয়ে দেয়। ওই ১২ বিঘার সীমানা এখনও নির্ধারিত না হওয়ায় মাঝেমধ্যেই জঞ্জাল ফেলার কাজে পুরসভাকে বাধা দেওয়া হয়। গাড়ি ঢুকতে দেওয়া হয় না। তাই জেলাশাসকের কাছে পুরসভার জন্য নির্ধারিত ৩৪ বিঘা জমির সীমানা নির্ধারণের আর্জি জানিয়েছেন নীহারবাবু। গত সপ্তাহে সাংসদ সুস্মিতা দেব পুরসভাপতি হিসেবে নীহারবাবু ব্যর্থ বলে অভিযোগ তুলেছিলেন। এ দিন তারই পাল্টা জবাব দিলেন নীহারবাবু। বীথিকাদেবী ও সুস্মিতাদেবীর আমলে পুরসভার গাড়ি কেনার কথা তুলে তিনি জানান, এ ছাড়াও সুস্মিতাদেবী ২২ কোটি ৩৭ লক্ষ ৯০ হাজার ৯৬ টাকা ঋণ রেখে গিয়েছেন। তার মধ্যে ৪৭ লক্ষ টাকা ঠিকাদারদের বকেয়া। বিদ্যুৎ বিভাগ পাবে ২৭ লক্ষ ৯৪ হাজার টাকা। গাড়ির পেট্রোল-ডিজেলের বিল বাকি ২০ লক্ষ ৮৭ হাজার টাকা।
এ নিয়ে শিলচরের বিধায়ক দিলীপকুমার পাল অভিযোগ করেন, পুরসভার ক্ষমতা কংগ্রেসের হাতে থাকাকালীন ১৫ লক্ষ ৯২ হাজার টাকা ফেরত চলে গিয়েছে। টাউন হলের উন্নয়নের প্রকল্প তৎকালীন পুরকর্তারা দাখিল করতে পারেনি। তার জেরে ৯ কোটি টাকার প্রকল্পটিই হাতছাড়া হয়ে যায়। একই বক্তব্য প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কবীন্দ্র পুরকায়স্থেরও।
কংগ্রেস পুর-পরিষদীয় দলের সভাপতি তথা প্রাক্তন পুরপ্রধান তমালকান্তি বণিক বলেন, ‘‘১৩-১৪টি গাড়ির কাগজ না থাকার কথা নয়। সুস্মিতা দেব বা তাঁর আমলে চারটি গাড়ি বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া গিয়েছে। সেগুলির কাগজপত্র নেই এবং মিলবেও না। একটি গাড়ি মুখ্যমন্ত্রী পাঠিয়েছিলেন। কাগজপত্র মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয়ে খোঁজ করেও মেলেনি। আরও তিনটি গাড়ি দিয়েছে পুলিশ ও আবগারি দফতর। সেগুলি বিভিন্ন সময়ে বাজেয়াপ্ত করা।’’ তিনি আরও জানান, রেজিস্ট্রেশন-বিহীন আরও ৬টি গাড়ি রয়েছে পুরসভায়। সেগুলি অনেক বছর আগে কেনা। লোকসভা নির্বাচনের সময় সুস্মিতাদেবী পুরপ্রধান পদে ইস্তফা দিলে তমালবাবু কয়েক মাস সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। সে সময় তিনি রেজিস্ট্রেশন-বিহীন গাড়িতেই যাতায়াত করেছেন। তাঁর যুক্তি, ‘‘তখন রেজিস্ট্রেশনের জন্য আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু নম্বর আসতে আসতে আমার কার্যকালের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy