সংসদের ভিতরে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির সঙ্গে বাগ্যুদ্ধে জড়িয়ে মোদী সরকারকে নোট-বাতিলের প্রশ্নে আজ আক্রমণ করলেন তৃণমূল নেতা সৌগত রায়। আর বাইরে, ‘রাজনৈতিক বদলা’ স্লোগান দিয়ে সংসদ প্রদক্ষিণ করলেন তৃণমূল সাংসদেরা। সব মিলিয়ে, জেটলির বাজেট বক্তৃতাকালীন সাময়িক যুদ্ধবিরতির পর আবার সংসদে সরকারের সঙ্গে সংঘাতের পথে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল।
তৃণমূল নেত্রীর নির্দেশ, সংসদ অচল না-করে রাষ্ট্রপতির বক্তৃতা এবং বাজেট নিয়ে আলোচনাকে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগিয়ে মোদী সরকারকে কোণঠাসা করতে হবে। গত কাল রাষ্ট্রপতির বক্তৃতা নিয়ে রাজ্যসভার আলোচনায় মোদীর নাম করেই আক্রমণ শানিয়েছিলেন ডেরেক ও’ব্রায়েন। আজ অবশ্য কিছুটা আচমকাই লোকসভায় জেটলির সঙ্গে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন সৌগতবাবু। পরে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাপস পালের গ্রেফতারি নিয়ে সৌগত বলতে ওঠায়, হাঙ্গামা শুরু করে বিজেপি। ফলে সোমবার পর্যন্ত মুলতুবি হয়ে যায় অধিবেশন।
নতুন বিলটির বক্তব্য, বাতিল হওয়া ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট একসঙ্গে ১০টির বেশি থাকলে ন্যূনতম জরিমানা হবে দশ হাজার টাকা। বাতিল নোট কাউকে দেওয়া বা নেওয়াও শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে বিবেচিত হবে। দুপুর বারোটায় জেটলি সেই বিল পেশ করার আগে বিষয়টি নিয়ে বলতে উঠলে সৌগত আপত্তি জানান। জেটলি বলেন, ‘‘আমি আগেই নোটিস দিয়েছি। ফলে আমার এখন বলার অধিকার রয়েছে। কিন্তু একটি বিল পেশের সময় উনি কেন প্রশ্ন তুলছেন, আমি পাল্টা প্রশ্ন করতে চাই।’’ সৌগত বলেন, ‘‘আপনাকে কথা বলতে না-দেওয়াটাও আমার অধিকারের মধ্যে পড়ে। মন্ত্রী এখন বিলটি নিয়ে কিছু বলতে পারেন না, শুধু পেশ করতে পারেন। বলতে গেলে উনি রাজ্যসভায় গিয়ে বলুন।’’ দমে না-গিয়ে জেটলি লোকসভার আইন দেখিয়ে স্পিকারকে বোঝাতে চেষ্টা করেন যে, তিনি তাঁর অধিকারের মধ্যেই রয়েছেন। তুমুল চিৎকারের মধ্যে তখন সৌগতবাবু সেই সংসদীয় আইনের বিশদ ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘‘জেটলি খুব চালাক আইনজীবী। তাঁর ভাল করে সংসদীয় আইন পড়ে দেখা উচিত।’’ সৌগতর যুক্তি, নোট বাতিলের ঘোষণা করার কথা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নরের। প্রধানমন্ত্রীর এই বিষয়ে ঘোষণা করাটাই বেআইনি। ফলে এই সংক্রান্ত বিল আনারই বিরোধিতা করা হচ্ছে।
এরই মধ্যে সৌগত তাঁর আনা মুলতুবি প্রস্তাবের কথা তুললে, স্পিকার তা নাকচ করে দেন। বিজেপি এবং তৃণমূল বেঞ্চের তুমুল হল্লার মধ্যে এক ঘণ্টার জন্য সংসদ মুলতুবি করে দেন স্পিকার। এর পর ফের অধিবেশন শুরু হলে সৌগত গ্রেফতার হওয়া তৃণমূল নেতাদের প্রসঙ্গ তুলে রাজনৈতিক বদলার কথা বলেন। বিজেপি হইচই শুরু করে। দিনের মত বন্ধ হয়ে যায় লোকসভা। রাজ্যসভাতেও ডেরেক, সুখেন্দুশেখর রায়েরা দাবি তোলেন নোট বাতিলের জন্য মৃত ব্যক্তিদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে হবে। তাঁদের আবেদন খারিজ হওয়ায় কক্ষত্যাগ করে তৃণমূল।
উত্তরপ্রদেশে নির্বাচন চলার কারণে সংসদে সপা এবং বসপা সাংসদদের দেখা নেই। উপস্থিতির হার কম কংগ্রেস নেতাদেরও। তাই বিরোধী ঐক্য তৈরি হতে পারছে না বলে ঘরোয়া ভাবে স্বীকার করছেন তৃণমূল নেতারা। তবে অধিবেশনের বাকি ক’দিন আলোচনার সুযোগ নিয়ে মোদী সরকারকে কোণঠাসা করার ব্যাপারে আজ কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদের সঙ্গে প্রাথমিক ভাবে কথা হয়েছে ডেরেকের। আগামী সোমবার সংসদ শুরু হওয়ার আগে, কংগ্রেস এবং তৃণমূল এ ব্যাপারে ফের আলোচনায় বসবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy